শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়াল

যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০০
ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়াল

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃতু্যর পর গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে প্রতিদ্বন্দ্বী চার প্রার্থীর কেউই প্রয়োজনীয় ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। ফলে দেশটির সংবিধান অনুযায়ী দ্বিতীয় দফায় গড়িয়েছে ভোটগ্রহণ। ভোট গণনা শেষে আগামী ৫ জুলাই শুক্রবার রান-অফ ভোট (সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে) অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ভোটের মাধ্যমে ইরানের জনগণ তাদের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। সূত্র:রয়টার্স ও আল জাজিরা

শুক্রবার ইরানের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু নির্বাচনে ভোটারের রেকর্ডসংখ্যক কম উপস্থিতি ছিল। শনিবার দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২ কোটি ৫০ লাখের বেশি ভোট গণনায় দেখা গেছে, সংস্কারপন্থি প্রার্থী আইনপ্রণেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান পেয়েছেন এক কোটির বেশি ভোট। তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা কট্টরপন্থি প্রার্থী সাইদ জালিলি পেয়েছেন ৯৪ লাখের বেশি ভোট।

মোট ভোটের নূ্যনতম ৫০ শতাংশ ভোট কোনো প্রার্থীই না পাওয়ায় নির্বাচন দ্বিতীয় দফায় গড়াল। প্রথম দফার নির্বাচনে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দুই প্রার্থীর মধ্যে এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম দফার ফল ঘোষণার পর প্রথম যে শুক্রবার আসবে সেদিনই দ্বিতীয় দফার ভোট অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ আগামী ৫ জুলাই মাসুদ পেজেশকিয়ান ও সাইদ জালিলির মধ্যে ভোটাভুটি হবে।

ইরানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে আল জাজিরা জানায়, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল রেকর্ডসংখ্যক কম। এই নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৬ কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৪০ শতাংশ। ১৯৭৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর সবচেয়ে কম ভোটার উপস্থিতি ছিল এ নির্বাচনে।

দেশটির নির্বাচন কমিশন জানায়, ২৪.৫ মিলিয়ন ব্যালট গণনায় দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত ভোটে এগিয়ে রয়েছেন মাসুদ পেজেশকিয়ান ও সাইদ জালিলি। সংস্কারপান্থ প্রার্থী মাসুদ পেজেশকিয়ান ১০.৪ মিলিয়নের বেশি ভোট পেয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানের পরমাণু চুক্তির মধ্যস্থতাকারী জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাইদ জালিলি পেয়েছেন ৯.৪ মিলিয়ন ভোট।

পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ পেয়েছেন ৩.৩ মিলিয়ন ভোট। ইসলামিক নেতা মোস্তফা পুরমোহাম্মাদি ২ লাখ ৬ হাজার ৩৯৭ ভোট পেয়েছেন। নির্বাচনে সাইদ জালিলিকে সমর্থন দিচ্ছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ খামেনি।

এ নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্তের কাজটি করেছে গার্ডিয়ান কাউন্সিল। তিন রক্ষণশীল প্রার্থী পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ, জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাইদ জালিলি ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোস্তফা পুরমোহাম্মদির পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান সংস্কারপন্থি আইনপ্রণেতা মাসুদ পেজেশকিয়ান।

এর আগে তেহরানের মেয়র আলিরেজা জাকানি ও রাইসির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমির-হোসেন গাজিজাদেহ হাশেমি তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তিন বছর আগে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনের সব প্রার্থীই ছিলেন রক্ষণশীল।

১৯৯৭ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন মাসুদ পেজেশকিয়ানের। তিনি এর আগে মধ্যপন্থি হাসান রুহানিকেও সমর্থন করেছিলেন, যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতার পর পশ্চিমের সঙ্গে ২০১৫ সালে পারমাণবিক চুক্তি সাক্ষরের উদ্যোগ নেন। তবে তিন বছর পর চুক্তির আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দেয়, যা এখনো চলছে।

পেজেশকিয়ান পারমাণবিক চুক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করে পশ্চিমের কাছ থেকে আসা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কও স্বাভাবিক করতে চান তিনি।

এদিকে, রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের প্রেসিডেন্টের ভূমিকা বড় করে দেখা হলেও দেশের প্রকৃত ক্ষমতা থাকে সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার হাতে। পররাষ্ট্র বা পারমাণবিক নীতি ও সরকারের বিভিন্ন শাখার নিয়ন্ত্রণ, সামরিক, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন আর্থিক সম্পদের বিষয়ে তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন। ধারণা করা হচ্ছে, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুলস্নাহ আলী খামেনির ঘনিষ্ঠ কেউ এই নির্বাচনে জয় পাবেন। অর্থাৎ এ নির্বাচনের ফল খামেনির উত্তরাধিকারকে প্রভাবিত করবে।

খামেনির বর্তমান বয়স ৮৫ বছর। ধারণা করা হচ্ছে, যিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট হবেন, তিনি পরবর্তী সময়ে খামেনির উত্তরসূরি নির্বাচনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকবেন।

আগামী বছরের জুনে ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের চার বছরের মেয়াদ শেষে ভোট অনুষ্ঠিত হতো। ১৯ মে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত হওয়ায় প্রেসিডেন্ট পদটি শূন্য হয়ে পড়ায় আগাম নির্বাচন হয়।

নির্বাচনে ছয়জনকে প্রার্থী হওয়ার অনুমতি দেয় ইরান কর্তৃপক্ষ। পরে দু'জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা হলেন- মোহাম্মদ বাঘের গালিবাফ, মাসুদ পেজেশকিয়ান, সাইদ জালিলি ও মোস্তফা পুরমোহাম্মদি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে