চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে। এবার দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি/আলিম/এইচএসসি (বিএম/বিএমটি) ও এইচএসসি (ভোকেশনাল)/ডিপেস্নামা ইন কমার্স পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছেলে শিক্ষার্থী ৭ লাখ ৫০ হাজার ২৮১ জন ও মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ লাখ ৫০৯ জন। সারাদেশে ২ হাজার ৭২৫টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৪৬৩টি।
এ বছর বন্যাপরিস্থিতির কারণে শুধু সিলেট বিভাগের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। তবে ৯ জুলাই থেকে যে পরীক্ষাগুলো হওয়ার কথা ছিল সেগুলো যথারীতি হবে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, পরীক্ষা নেওয়ার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১১ লাখ ২৮ হাজার ২৮১ জন। এর মধ্যে ছেলে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৬৮০ এবং মেয়ে শিক্ষার্থী ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৬০১ জন। মোট কেন্দ্র ১ হাজার ৫৬৬টি এবং মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৪ হাজার ৮৭০টি।
মাদ্রাসা বোর্ডের তথ্য মতে, এ বছর আলিম পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৮ হাজার ৭৬ জন। এর মধ্যে ছেলে ৪৭ হাজার ৫৯২ এবং মেয়ে শিক্ষার্থী ৪০ হাজার ৪৮৪ জন। মোট কেন্দ্র ৪৫২টি এবং মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২ হাজার ৬৮৫টি।
এছাড়া এইচএসসি (বিএম/বিএমটি) এইচএসসি (ভোকেশনাল)/ডিপেস্নামা ইন কমার্স পরীক্ষা (কারিগরি) বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৪
হাজার ৪৩৩ জন। এর মধ্যে ছেলে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৯ জন এবং মেয়ে শিক্ষার্থী ৬৫ হাজার ৪২৪ জন। মোট কেন্দ্র ৭০৭টি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৯০৮টি।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৯১ হাজার ৪৪৮ জন। এছাড়া প্রতিষ্ঠান ২৯৪টি ও কেন্দ্র বেড়েছে ৬৭টি।
পরীক্ষার সূচি অনুযায়ী, সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের তত্ত্বীয় পরীক্ষা আগামী ১১ আগস্ট শেষ হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা ১২ আগস্ট থেকে ২১ আগস্টের মধ্যে শেষ করতে হবে। কারিগরি বোর্ডের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হবে ১৮ জুলাই। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৯ জুলাই শুরু হয়ে ৪ আগস্টের মধ্যে শেষ হবে।
এ বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বিদেশের ২৮১টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। এসব কেন্দ্রের মধ্যে জেদ্দায় ৪৭টি, রিয়াদে ৪৩টি, ত্রিপোলীতে ২টি, দোহায় ৬৩টি, আবুধাবিতে ৪৪টি, দুবাইয়ে ২২টি, বাহরাইনে ৩৪টি, সাহাম ওমানে ২৬টি কেন্দ্র রয়েছে।
এবার এইচএসসি পরীক্ষায় (নিয়মিত, অনিয়মিত, মানোন্নয়ন) ২০২৪ সালের পুনর্বিন্যাস করা পাঠ্যসূচি অনুযায়ী সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণসময়ে পরীক্ষার্থীরা অংশ নেবে। পরীক্ষা শেষে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ফল প্রকাশিত হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবারের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ও নকল মুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে গতকাল শনিবার থেকে আগামী ১১ আগস্ট পরীক্ষা চলাকালীন সময় পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
এছাড়া পরীক্ষা সূচারুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে রয়েছে- পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থীকে এরপর প্রবেশ করতে দিলে তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্ব হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্টারে লিখে ওইদিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্ন পত্রের সেট কোড জানিয়ে দেওয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন/ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না; শুধু ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন (তবে ছবি তোলা যায় না এমন মোবাইল ফোন)। পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি (যেমন-পরীক্ষার্থী, কক্ষ প্রত্যবেক্ষক (ইনভিজিলেটর), মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্র পরিদর্শন টিম, বোর্ডের কেন্দ্র পরিদর্শন টিম, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পরিদর্শন টিম, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য) ছাড়া অন্য কেউই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না।
এ ছাড়া বিশেষ সক্ষম (ডিফারেন্টলি অ্যাবল) পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে- দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, সেরিব্রালপালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রম্নতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থী এবং শ্রবণ পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় বাড়ানো হয়েছে।
প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউনসিন্ড্রম, সেরিব্রালপালসি) পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় বাড়ানোসহ শিক্ষক, অভিভাবক বা সাহায্যকারীর বিশেষ সহযোগিতায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আগামী বছর এপ্রিলে নেওয়ার পরিকল্পনা
এদিকে, আগামী বছর থেকে এপ্রিল মাসে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের পর থেকেই শিক্ষাপঞ্জি এলোমেলোভাবে চলছে। এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষা নভেম্বরেও শুরু করতে হয়েছে। পরীক্ষা হয়েছে কাটছাঁট করা পাঠ্যসূচিতে। এখন তা ধীরে ধীরে এগিয়ে আনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পরীক্ষা শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সমন্বয় কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, 'আগে এইচএসসি পরীক্ষা এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে শুরু করা হলেও করোনার কারণে ঠিকসময়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। এবার কিছুটা এগিয়ে আনা হয়েছে। আগামী বছর থেকে এপ্রিলেই এই পরীক্ষা শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।'
শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারাও মনে করেন জুন-জুলাই মাস বর্ষা থাকে। এই সময়ে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ার জন্য খুব উপযুক্ত সময় নয়। কিন্তু করোনার কারণে পিছিয়ে থাকায় কিছু করারও ছিল না। তবে তারা আশাবাদী, আগামী বছর থেকে আবারও প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মতো পরীক্ষা নেওয়া যাবে।
২শ' গজের মধ্যে প্রবেশ নিষেধ
অন্যদিকে, শনিবার ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে চলতি বছরের এইচএসসি, এইচএসসি (বিএম/বিএমটি), এইচএসসি (ভোকেশনাল), ডিপেস্নামা ইন কমার্স ও আলিম পরীক্ষা চলাকালে ঢাকা মহানগরীর পরীক্ষার কেন্দ্রগুলোর ২শ' গজের মধ্যে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়া নিশ্চিত করার প্রয়োজনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-ওওও/১৯৭৬) এর ২৮ ও ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে পরীক্ষা কেন্দ্রের ২শ' গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ব্যতীত জনসাধারণের অনধিকার প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এই আদেশ আজ থেকে পরীক্ষা চলাকালীন সময় পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।