অভিযান শুরু হয়েছে :দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ০১:২৩

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেত্রী শেখ হাসিনা শনিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট আলোচনায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন -ফোকাস বাংলা

সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। শনিবার বিকালে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা এ কথা বলেন। এ সময় অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। টানা চারবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি, সে যেই হোক; দুর্নীতি করলে কারও রক্ষা নেই। যারাই দুর্নীতি করবে ধরব।' কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, কালো টাকা সাদাটা, কালো টাকা সাদা না। এখন সব দেশে দাম বেড়ে গেছে। এখন এক কাঠা জমি যার আছে, সেই কয়েক কোটি টাকার মালিক, ঢাকা শহরে এক কাঠা জমি থাকলে কয়েক কোটি টাকার মালিক। এভাবে অনেক সময় কিছু করতে গেলে অতিরিক্ত অর্থ চলে আসে। সেটা তারা বাজেটে দেখাতে পারেন না। সেটা তারা আয়কর দিতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আয়কর দিয়ে যাতে তারা মূল ইসে ফিরে আসে, মানে আয়কর দিয়ে মূল জনগোষ্ঠীতে ফিরে আসে, আর এ ধরনের কর্মকান্ড যাতে না করে, সেই জন্যই মাঝে মাঝে এ ধরনের সুযোগ দেওয়া হয়। অতীতে খালেদা জিয়াও এই সুযোগ নিয়েছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'এ ধরনের সুযোগ খালেদা জিয়া নিয়েছিলেন, ড. কামাল হোসেন নিয়েছিলেন এবং আরও অনেকে নিয়েছিলেন। তারাও কিন্তু এরকমভাবে সেই ২০০৭-২০০৮ বা এর পরে এভাবে কিন্তু তারা বৈধ করে নিয়েছিলেন। এমনকি বিএনপির সাইফুর রহমানও করেছেন। এরশাদ সাহেবও বোধ হয় করেছিলেন। মনে হয়, একটু খোঁজ নিতে হবে। আমি জানি না, আমাদের বিরোধী দলের নেতাও করেছিলেন কিনা।' বাংলাদেশের জনগণের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের জনগণ অত্যন্ত কর্মঠ, অত্যন্ত সৃজনশীল, কিছু কিছু মাঝখানে দুষ্টু প্রকৃতির থাকে ওগুলো আমরা ধর্তব্যে নেই না।' ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে মোটেই উচ্চাভিলাষী মনে করেন না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি মোটেই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী মনে করি না। একটা লক্ষ্য আমরা স্থির করি। শতভাগ কখনো পূরণ হয় না। এরপরও আমাদের সুনির্দিষ্ট একটা লক্ষ্য থাকে, এখানে আমরা যাব। সেটা আমরা যেতে পেরেছি। কোথায় ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট, আর কোথায় সাত লাখ কোটি টাকার বাজেট। আমরা তো এই জায়গায় আসতে পেরেছি। প্রথানমন্ত্রী বলেন, 'চ্যালেঞ্জ নিয়েছি বলেই (বড় বাজেট বাস্তবায়ন) সম্ভব হয়েছে। আমাদের ইচ্ছাটা কী? দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। সে জন্যই তো উন্নয়নটা হয়। আমাদের উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে, সে লক্ষ্যেই আমরা এই বাজেট প্রণয়ন করেছি এবং উন্নয়ন বাজেট দিয়েছি। এখানে কমানোর কিছু নেই।' তিনি বলেন, 'এই বাজেটের মধ্যে আগামী দিনে আমরা যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি ২০২১-২০৪১ সাল, সেটি বাস্তবায়নে সক্ষম হব। সেই ধারাবাহিকতা আমাদের আছে। আমরা একটা রাজনৈতিক দল করি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমাদের কিন্তু নিজেদের ঘোষণাপত্র আছে, আমরা কিন্তু নির্বাচনের আগে ইশতেহার ঘোষণা করি। এই ইশতেহার আমরা কখনো ভুলে যাই না। জাতির কাছে যে ওয়াদা দিয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমরা ক্ষমতায় এসেছি, তা পালন করি। এই বাজেট প্রণয়নকালীন আমাদের যে নির্বাচনী ইশতেহার, সেটির অগ্রাধিকার এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের যে দিকনির্দেশনা- সেটাও বাজেটে উঠে এসেছে।' শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশের ইতিহাস সর্ববৃহৎ বাজেট আমরা দিয়েছি। বাজেটের আকার সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছয় দশমিক ৭৫ শতাংশ। বাজেটের ওপর এ পর্যন্ত বিরোধীদলীয় নেতাসহ ২৩৪ জন সংসদ সদস্য বক্তব্য রেখেছেন। তারা বাজেটের ওপর আলোকপাত করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন। এর বাইরে অনেকেই বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছেন।' বাজেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যে যাই করুন, তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কেউ কেউ বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলেছেন, কেউ বলেছেন ঘাটতি বাজেট। কিছুক্ষণ আগে বিরোধীদলীয় নেতা বললেন, এই বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, আমাদের প্রবৃদ্ধির হার কমাতে হবে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কমাতে হবে... ইত্যাদি। এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো সক্ষমতা আছে কিনা। চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই তো আমাদের কাজ। চ্যালেঞ্জ নিয়েই তো আমরা চলতে চাই, চ্যালেঞ্জ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।' তিনি আরও বলেন, 'আজ বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মর্যাদার আসনে আসতে পেরেছে। আজকের বাংলাদেশ হাত পেতে ভিক্ষা চাওয়ার বাংলাদেশ নয়। আমরা উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করি এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করি। যারা পরিবর্তনগুলো দেখেন না, তাদের বলবো, গ্রামে যান। গ্রামের মানুষের যে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে, এরশাদের উত্তরবঙ্গে যে মঙ্গা নেই, সেটাও দেখবেন। কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন এলকায় দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকতো। সেখানে ছুটে গেছি, মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। গ্রামের পর গ্রামে গিয়েছি, মানুষের শরীরে মাংস ছিল না, চামড়া আর হাড় ছাড়া। এখন মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পেরেছি।'