বিশ্বকাপের ফাইনালে আজ মুখোমুখি ভারত দক্ষিণ আফ্রিকা
প্রকাশ | ২৯ জুন ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া প্রতিবেদক
একে একে সাতবার সাদা বলের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের দুয়ার থেকে ফিরে আসা। দুঃসহ এই স্মৃতিই এতদিন ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গী। যা পেছনে ফেলে অবশেষে আইসিসির মেগা ইভেন্টের ফাইনালের টিকিট পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। চলমান টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৯ উইকেটের জয় পেয়েছে তারা। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ৬৮ রানে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে গেছে ভারত।
দক্ষিণ আফ্রিকা এবারই প্রথমবার ফাইনালে উঠেছে, সেটাও অপরাজিত থেকে। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে তাদের প্রতিপক্ষ হয়েছে ভারত। ফাইনালে শিরোপাযুদ্ধে নামার আগে এক জায়গায় দুই প্রতিপক্ষ মিলে গেল। ভারতও প্রোটিয়াদের মতোই এবারের বিশ্বকাপে অপরাজিত! বিশ্বকাপের ফাইনালে দুই অপরাজিত দলের লড়াই।
টি২০ বিশ্বকাপের গত আসরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ উইকেটে হেরেই সেমিফাইনাল থেকে বিদায় ঘণ্টা বেজেছিল ভারতের। এবার বছর দুয়েক পর চলতি বিশ্বকাপে সেই হারের প্রতিশোধ ভালোভাবেই নিলেন রোহিত-কোহলিরা। ফলে ইংলিশদের বিধ্বস্ত করে ১০ বছর পর ফাইনালের টিকিট কাটল ভারত।
সবশেষ ২০১৪ সালে টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছিল ভারত। সেবার লঙ্কানদের কাছে শিরোপা খুইয়েছিল ধোনির দল। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালেও শিরোপা ঘরের তুলতে পারেনি রোহিত-কোহলিরা। এবার আরও একটি সুযোগ শিরোপা খরা কাটানোর। ফাইনালের তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা।
ফাইনালের আগে প্রস্তুতির জন্য খুব একটা সময় পাচ্ছে না রোহিত-মার্করামরা। একদিন পরই নেমে পড়তে হবে শিরোপার লড়াইয়ে। আজ
শনিবার ব্রিজটাউনে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পরপর দু'টি সেমিফাইনাল হলো একপেশে! বৃহস্পতিবার সকালে ত্রিনিদাদে আফগানিস্তানকে স্রেফ উড়িয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। রাতে ইংল্যান্ড পাত্তাই পায়নি ভারতের বিপক্ষে। ফলে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে এখন কেবল টিকে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত। যারা শনিবার বার্বাডোজে মুখোমুখি হবে নবম টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা নিষ্পত্তির লড়াইয়ে।
ঝাঁজহীন দু'টি সেমিফাইনালের পর ফাইনালে উত্তাপ ছড়াবে কিনা সেটা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়ে গেছে। বার্বাডোজের উইকেট রান প্রসবা নয়। ফলে বোলারদের হাতে ম্যাচের নাটাই থাকতে পারে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
'দক্ষিণ আফ্রিকা আর সেমিফাইনাল' শব্দ দু'টি যেন একে অপরের পরিপূরক। বিশ্বকাপ মানেই সেমিফাইনালে প্রোটিয়ারা। তারপরও হযবরল হারে শেষ চার থেকে বিদায়। এতদিন এই ছিল দলের নিয়তি। ১৯৯২ ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে যার যাত্রা শুরু। সবশেষ ২০২৩ বিশ্বকাপেও এমন ভাগ্যই বরণ করেছিল। ওয়ানডের মতো ২০০৭ এবং ২০১৪ টি২০ বিশ্বকাপেও দলটির শেষ যাত্রা ছিল ওই সেমিফাইনাল। এভাবে বারংবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে নিতে তাদের কপালে জোটে চোকার্স অপবাদ। সেই অপবাদ ঘোচাতে দীর্ঘ ৩২ বছর লাগল তাদের। অবশেষে সেমির মঞ্চ পেরিয়ে ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা।
বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সেমিফাইনালে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের তোপে পড়ে ১১.৫ ওভারে মাত্র ৫৬ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেমিফাইনাল ম্যাচে এর আগে কখনোই কোনো দল এত কম রানে অলআউট হয়নি। ৫৭ রান স্পর্শ করতে ঘাম ঝড়াতে হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ৬৭ বল বাকি রেখে ১ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় প্রোটিয়ারা।
এদিকে গত টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে বিদায় নিয়েছিল ভারত। বছর দুয়েক পর সেই হারের ক্ষতে প্রলেপ দিল রোহিত শর্মার দল। এবার ইংলিশদের বিদায় করে ফাইনালের টিকিট কাটল টিম ইন্ডিয়া।
গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭১ রান তুলেছিল ভারত। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৭ রান করেন রোহিত। জবাবে খেলতে নেমে ১৬ ওভার ৪ বলে ১০৩ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড।
ফাইনাল নিয়ে ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেছেন, 'দল হিসাবে আমাদের খুব শান্ত থাকতে হবে। কারণ, মাথা ঠান্ডা থাকলে তবেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। ফাইনালে জিততে হলে ভালো ক্রিকেট খেলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমরা এবার আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছি। সেটাই ফাইনালে আরও একবার খেলতে চাই।'
এদিকে পুরো আসরজুড়ে রানখরায় ভুগছেন বিরাট কোহলি। তবুও দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন না রোহিত। এ নিয়ে তার মন্তব্য, 'কোহলি কেমন ক্রিকেটার, তা আমরা সবাই জানি। সবার ক্যারিয়ারেই খারাপ সময় আসে। ও জাত ক্রিকেটার। সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। খারাপ সময় কেটে যায়। ওর রান করার কতটা তাগিদ রয়েছে, সেটা দেখা যাচ্ছে। ফাইনালেও সে ওপেন করবে।'
রোহিত যোগ করেন, 'আমরা দল হিসেবে খুব পরিশ্রম করেছি। এই জয়ে সবার অবদান রয়েছে। আমাদের কাছে এটা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সেটা আমরা জিতেছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলেছি আমরা। সেটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।'
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক এইডেন মার্করাম বলেন, 'বিশ্বের যে কোনো দলকে হারিয়ে এখন শিরোপা জিততে পারি আমরা।'
সেমিফাইনালে দুর্দান্ত জয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেই শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার দলপতি মার্করাম। তিনি বলেন, 'অবশ্যই অসাধারণ এক অনুভূতি। সাদা বলের দুই ফরম্যাটে দীর্ঘদিন ধরেই একসঙ্গে খেলছে এই দলটি। ফাইনালে উঠতে পারাটা দারুন। আমাদের বিশ্বাস আমরা বিশ্বের যে কোনো দলের সঙ্গেই লড়াই করতে পারি ও আমরা শিরোপা জিততে পারি। সেই সুযোগ সামনে আসায় ভালো লাগছে।'
শুধু সেমিফাইনালেই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ভালো করেছে বলে মনে করেন মার্করাম। তিনি বলেন, পুরো আসরে অসাধারণ বোলিং করেছে বোলাররা। বেশ কিছু ম্যাচে ব্যাটারদের বাঁচিয়ে দিয়েছে তারা। তবে অবশ্যই কন্ডিশন তাদের পক্ষে ছিল। তারপরও সবকিছু ঠিকমতো করার বিষয় থাকে। প্রতি ম্যাচেই আমাদের জন্য সেটা করছে। এজন্য তাদের প্রশংসা করতেই হবে।'
সেমিফাইনালে টসে হারাটা আশির্বাদ মনে করছেন মার্করাম, 'শিরোপা জয়ের জন্য আরও একটি ধাপ পার হতে পেরে আমরা আনন্দিত।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা আগে কখনো ফাইনাল খেলেনি। কিন্তু আমরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। সত্যিই ভালো ক্রিকেট খেলার জন্য একটি পরিপূর্ণ দল লাগে।'