ডিবির সংবাদ সম্মেলন
আনার হত্যার 'মোটিভ' নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা
প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যায় অংশ নেওয়া ৭ জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে এখনো এই হত্যাকান্ডের মোটিভ নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি তারা। তবে ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক দুই কারণ আমলে নিয়েই তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ডিবি।
বৃহস্পতিবার সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ জানান, এমপি আনার হত্যার কিলিং মিশনে সাতজন দায়িত্ব পালন করেছে। এই সাতজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার গ্রেপ্তার করা হয় ফয়সাল ও মোস্তাফিজকে। ফয়সালই এমপি আনারকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অজ্ঞান করেন বলে জানান হারুন অর রশীদ।
তিনি আরও জানান, এ দুজন সংসদ সদস্য আনার খুনে সরাসরি অংশ নেন। খুনের ১১ দিন আগে তারা বাংলাদেশ থেকে ভারতের কলকাতায় গিয়ে সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায় একটি হোটেলে ওঠেন। খুনের ছয় দিন পর তারা ঢাকায় ফিরে আত্মগোপনে চলে যান।
আনার হত্যাকান্ডে জড়িত হিসেবে এখন পর্যন্ত যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম মোস্তাফিজুর রহমান ও ফয়সাল আলী। বুধবার বিকালে খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের কয়েকটি দুর্গম পাহাড়ে হেলিকপ্টার দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তারের দাবি করা হয়।
হত্যাকান্ডের পর থেকেই ছদ্মবেশে সেখানে অবস্থান করছিল আসামিরা। গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুজনই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলে দাবি ডিবির। গ্রেপ্তার দুজন নিজেদের পলাশ রায় ও শিমুল রায় পরিচয় দিয়ে একটি কালী মন্দিরে অবস্থান করছিল বলে পুলিশের ভাষ্য।
হারুন অর রশীদ বলেন, কলকাতার সঞ্জীভা গার্ডেনসের ফ্ল্যাটে আনার হত্যার শিমুল ভূঁইয়ার নেতৃত্বে সাতজন অংশ নেন। সবশেষ এই দুইজনসহ পাঁচজন বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হলেন। তারা হলেন শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া ও সেলেস্টি রহমান এবং সর্বশেষ বুধবার গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সাল ও মোস্তাফিজুর।
এর বাইরে ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন কসাই জিহাদ হাওলাদার এবং নেপালে ধরা পড়েন সিয়াম। সিয়ামকে পরে ভারতের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আনার হত্যার হোতা আখতারুজ্জামান শাহীন ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান জানিয়ে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, 'তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি কালকাতা পুলিশ গুরুত্ব সহকারে দেখছে।'
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। পরে তার খোঁজ পাওয়া না গেলে গত ১৮ মে ভারতে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন এমপি আনারের পরিচিত ও ভারতের বরানগরের বাসিন্দা গোপাল বিশ্বাস। এরপর এমপি আনারের খোঁজে তলস্নাশি শুরু করে কলকাতা পুলিশ। কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়েছে বলে গত ২২ মে জানায় ভারতীয় পুলিশ। পরে ওইদিন রাতেই ঢাকার শেরেবাংলানগর থানায় মামলা করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। এরপর থেকে বেরিয়ে আসছে নানা তথ্য।
গত ২৮ মে কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীভা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংক থেকে কিছু মাংস উদ্ধার করে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। ধারণা করা হচ্ছে, তা এমপি আনারের মরদেহের খন্ডিত দেহাংশ। পরে গত ৯ জুন সকালে কলকাতার বাগজোলা খাল থেকে উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি হাড়।
গ্রেপ্তার দুই আসামি ৬ দিনের রিমান্ডে
এদিকে, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশে অপহরণের মামলায় চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার দুই আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউলস্নাহ রিমান্ডের এ আদেশ দেন। রিমান্ডে যাওয়া দুই আসামি হলেন ফয়সাল আলী সাহাজী ওরফে সাজী ও মোস্তাফিজুর রহমান ফকির।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান।
রিমান্ড আবেদনের পক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল শুনানি করেন। তবে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে বিচারক তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।