আফগানদের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা

প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ব্রায়ান লারা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করামকে (২৩*) নিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যান ওপেনার রেজা হেনড্রিক্স (২৯*) -ওয়েবসাইট
দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান এর আগে কখনো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেনি। লক্ষ্য ছিল তাই অভিন্ন। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছড়াবে, ব্যাট-বলের ঝাঁজাল পারফরম্যান্স হবে, কথার লড়াইয়ে মত্ত হবে, আরও কত কিছু! কিন্তু লড়াইটা হলো একপেশে। আফগানিস্তান যে শরীরী ভাষায় অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছিল, সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও একইভাবে সামলে নেবে- এমনটাই বিশ্বাস ছিল। কিন্তু ২২ গজে নিস্তরঙ্গ দিন কাটাল আফগানিস্তান। এমন সময়ে তাদের বাজে দিন গেল, যেদিন ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে নিজেদের নাম তোলার সুযোগ ছিল আফগানিস্তানের। আফগানদের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে অবশেষে ফাইনালের দেখা পেল দক্ষিণ আফ্রিকা। জায়ান্ট কিলার আফগানিস্তানকে ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠেছে তারা। এটি ইতিহাসে প্রথম ঘটাল প্রোটিয়ারা। ব্রায়ান লারা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার অফগানিস্তানের দেওয়া ৫৭ রানের লক্ষ্যে ৯ উইকেট ও ৬৭ বল হাতে রেখেই টপকে যায় এইডেন মার্করাসের দল। বারবার সেমিতে গিয়ে বাদ পড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে 'চোকার্স' নামে ডাকা হতো। অবশেষে সেই 'চোকার্স'রা এবার ফাইনালের টিকিট কাটল। সেমিফাইনালেই সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার হতাশায় পুড়ল আফগানিস্তান, ওয়ানডে ও টি২০ মিলিয়েই প্রথমবার বিশ্বকাপের ফাইনালে পা রাখল দক্ষিণ আফ্রিকা। টি২০-তে বলের হিসাবে এটি তাদের সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০৭ সালে ৫১ বল আগে ম্যাচ জিতেছিল প্রোটিয়ারা। আর উইকেটের হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়। জিম্বাবুয়েকে ২০১২ সালে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল তারা। আফগানদের দেওয়া ৫৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে কোনো সমস্যা হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। শুরুতে অবশ্য ডি কক'কে হারায় তারা। ফারুকীর বলে বোল্ড হয়ে ৫ রানে ফেরেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। এরপর অধিনায়ক মার্করামকে নিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যান ওপেনার রেজা হেনড্রিক্স। মার্করাম ২১ বলে ২৩ এবং হেনড্রিক্স ২৫ বলে ২৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। ১৯৯৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর আর কখনো আইসিসির কোনো ইভেন্টে ফাইনাল খেলতে পারেনি তারা। তবে অবশেষে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়েছে প্রোটিয়ারা। এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান। তবে শুরু থেকেই দাপট দেখাতে থাকে প্রোটিয়া বোলাররা। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলা গুরবাজ ম্যাচের প্রথম ওভারেই জেনসেনের বলে হেন্ডরিক্সকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। তৃতীয় ওভারে সেই জেনসেনের বলেই বোল্ড হন নাইব। রাবাদা-নরকিয়াদের বলও সামলে উঠতে পারেনি জারদান-ওমারজাইরা। এরপর শামসির ঘূর্ণির সামনে তো দাঁড়াতেই পারেনি আফগান ব্যাটাররা। আফগানিস্তানের হয়ে শুধু ওমরজাই (১০) দুই অঙ্কের রান করতে পেরেছেন। আফগানদের তিনজন ব্যাটসম্যান রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়েছেন। ২ রানে আউট হয়েছেন চার ব্যাটসম্যান। মাত্র ১১.৫ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান। টি২০ বিশ্বকাপে প্রথম কোনো দল হিসেবে সেমিফাইনালে একশ' রানের আগে অলআউট হলো। তার পাশাপাশি টি২০ ক্রিকেটেও এটি আফগানিস্তানের সর্বনিম্ন স্কোর। প্রোটিয়াদের বোলাররা দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। ১.৫ ওভারে ৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট পেয়েছেন তাবরাইজ শামসি। ৩ ওভারে ১৬ রান খরচায় ৩ উইকেট পেয়েছেন মার্কো জেনসেন। ম্যাচসেরাও হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই অলরাউন্ডার। দুইটি করে উইকেট পেয়েছেন নরকিয়া ও রাবাদা। সংক্ষিপ্ত স্কোর: আফগানিস্তান: ১১.৫ ওভারে ৫৬ (গুরবাজ ০, জাদরান ২, নাইব ৯, ওমরজাই ১০, নবি ০, খারোটে, জানাত ৮, রশিদ ৮, নুর ০, নাভিন ২, ফারুকি ২*; ইয়ানসেন ৩/১৬, মহারাজ ০/৬, রাবাদা ২/১৪, নরকিয়া ২/৭, শামসি ৩/৬)। দক্ষিণ আফ্রিকা: ৮.৫ ওভারে ৬০/১ (ডি কক ৫, হেনড্রিকস ২৯*, মার্করাম ২৩*; নাভিন ০/১৫, ফারুকি ১/১১, রশিদ ০/৮, ওমরজাই ০/১৮, নাইব ০/৮)। ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা: মার্কো ইয়ানসেন।