কাল বিএনপির ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি
প্রকাশ | ২৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বড় শোডাউন করে ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি জানান দিতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে আগামীকাল শনিবারের কর্মসূচি সফলে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এই সমাবেশে নেতাদের কর্মক্ষমতা পর্যালোচনা করে ঢাকা মহানগরসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কমিটিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের হতে পারে- এমন আলোচনায় দলটিতে এক ধরনের প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে।
সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তিন দিনের সমাবেশ কর্মসূচি সফল করতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে দলের শীর্ষ নেতারা। এরই অংশ হিসেবে শনিবার ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের মাধ্যমে বড় শোডাউন করার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। যৌথসভা, কর্মিসভার পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও
নেতাকর্মী আর সমর্থকদের কাছে বার্তা দেওয়া হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র একাধিক নেতার সঙ্গ কথা বলে জানা যায়, সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগমের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তিতে সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করতে চায় তারা। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও কেন্দ্রীয় যুবদলের নতুন কমিটি গঠনকে সামনে রেখে সমাবেশকে নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্র হিসেবেও বিবেচনা করছে দলটির হাইকমান্ড। এর মধ্য দিয়ে পদপ্রত্যাশী নেতাদের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করা হবে। সব মিলিয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হওয়ার প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, এই ইসু্যতে একদিকে জনসম্পৃক্ততা যেমন বাড়াতে চাইছেন তেমনি দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয়, হতাশ নেতাকর্মীদের রাজপথে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন তারা। এ কর্মসূচির বাইরে অন্যান্য ইসু্যভিত্তিক কর্মসূচির মাধ্যমেও দলকে চাঙা করার কৌশল রয়েছে দলটির। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচির পর সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ, সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ এবং ছাগলকান্ডে আলোচিত রাজস্ব বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানসহ সরকার ও ক্ষমতা ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতি ও লুটপাট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ আরও বেশ কিছু ইসু্যতেও কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করছে বিএনপি। এ ছাড়া সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত 'চুক্তি-সমঝোতাগুলো'কে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী অভিহিত করে এর বিরুদ্ধেও আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে দলটি। এর মধ্য দিয়ে রাজপথের ধারাবাহিক কর্মসূচিতে নামতে যাচ্ছে বিএনপি। একইসঙ্গে সমমনা অন্যান্য দল ও জোটকেও সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, আগামীকালের ঢাকার সমাবেশ সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে প্রধান সমন্বয়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সহায়তা করার জন্য দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আব্দুস সালাম আজাদ ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ জ্যেষ্ঠ নেতারাও সমাবেশ সফলে কাজ করছেন। সমাবেশে বড় ধরনের শোডাউন ঘটাতে ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট নেতারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির সমাবেশের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সদ্য বিলুপ্ত দলের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, নতুন কমিটি সামনে রেখে এই সমাবেশ দিয়ে দলের পক্ষ থেকে পদপ্রত্যাশী নেতাদের পারফরম্যান্স যাচাই করা হবে।
জানা গেছে, নতুন কমিটিকেন্দ্রিক আবহ থাকায় বিষয়টি মাথায় রেখে নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সমাবেশে আলাদাভাবে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। এছাড়া কর্মসূচিতে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা ও মহানগরগুলো থেকেও বিএনপির নেতাকর্মীরা আসবেন। অংশ নেবেন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। ছাত্রদলের সদ্যঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিকেও সমাবেশে সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সমাবেশ সফলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতোমধ্যে যৌথসভা করেছেন। প্রস্তুতি সভা করেছে ছাত্রদল, বিলুপ্তকৃত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদল। সমাবেশে সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ নিশ্চিতে প্রস্তুতি সভা করেছে বিএনপিপন্থি পেশাজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)।
প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ঢাকায় বড় ধরনের জমায়েতের প্রস্তুতি রয়েছে বিএনপির। এছাড়া গণতন্ত্রের নেত্রীর মুক্তি দাবিতে এই আয়োজনে সাধারণ মানুষের ঢল ঠেকানো যাবে না।
ঢাকার দু'টি কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় আয়োজনে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পরবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর কোনো সম্ভাবনা নেই। কমিটি বিলুপ্ত হতে পারে। নেতারা তো সবাই আছেন। সবাই আরও উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করছেন।