বাংলাদেশ একদিন চাঁদে যাবে- এমন প্রত্যাশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রজন্মকে সেভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানে দক্ষ করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, 'একসময় আমাদের চাঁদেও যেতে হবে, চাঁদও জয় করতে হবে। সেই বিজ্ঞানসম্পন্ন জ্ঞান... সেই জ্ঞানটা যেন আমাদের শিশুরা এখন থেকে পায়, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।'
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে 'প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩' এবং 'জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪' উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মহাকাশ গবেষণা এবং এ বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি, অ্যারোস্পেস এবং অ্যাভিয়েশন ইউনিভার্সিটিও করেছি। অ্যারোনটিক্যাল সেন্টারও করে দিয়েছি। গবেষণা এবং সেই সঙ্গে আমাদের শিশুদের এখন থেকে সেভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।'
শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারের আন্তরিকতা ও উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সব সময় আমরা একটা সুষম, জনকল্যাণমুখী, সর্বজনীন, মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা করতে চাই। আর শুধু ওই কেতাবই পড়ে না, ছোট ছোট শিশুদের ভেতরে যে মেধা-মনন সেগুলোও তো আমাদের বের করে আনতে হবে। তাদের সুযোগ দিতে হবে।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'তাদের ভেতরে যে একটা কিছু করার ক্ষমতা আছে, সেটা যাতে বিকশিত হয় সেই সুযোগটা সৃষ্টি করা দরকার। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কিন্তু আমরা শিক্ষা কারিকুলাম-আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানের মধ্যে নিয়ে এসে স্কুলে কম্পিউটার শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য- প্রতিটি স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব করা। প্রথমে এটা মাধ্যমিক থেকে শুরু করেছিলাম, এখন আমাদের লক্ষ্য প্রাইমারি থেকেই শুরু করে দেব।'
দুই বছরের জন্য প্রি-প্রাইমারি
\হচালুর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'প্রি-প্রাইমারি আমরা চালু করেছি। প্রি-প্রাইমারি এক বছরের জন্য, এখন আমরা সেটা দুই বছরের জন্য করতে চাচ্ছি। শুধু পড়াশোনা না, আসবে-যাবে, একসঙ্গে বসবে, বন্ধুদের নিয়ে খেলাধুলা করবে, ওই খেলাধুলার মধ্য থেকেই তাদের ভেতরে যে সুপ্ত মেধাটা আছে. সেই মেধাটা কীভাবে বিকশিত করা যায়। সেই ধরনের ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। তাহলেই কিন্তু, এই ছেলে-মেয়ে, এরাই তো ভবিষ্যৎ আমাদের। সেভাবে আমরা তাদেরকে তৈরি করে দেব।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'আজকের যুগ হচ্ছে প্রযুক্তির যুগ, কাজেই কম্পিউটার শেখা আমরা যেমন ল্যাব করে দিচ্ছি, ইনকিউবেশন সেন্টারও করে দিচ্ছি। সেভাবে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান জনগোষ্ঠী আমরা গড়ে তুলতে চাই। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি।'
তিনি বলেন, 'আমাদের বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। তাহলে আমাদের স্মার্ট সিটিজেন হবে। স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ। অর্থাৎ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি। ছোট বেলা থেকে, শিশুকাল থেকে ধীরে ধীরে তারা গড়ে উঠবে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। দেশের উন্নয়নে তাদের চিন্তা-ভাবনা, তারা আরও নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি দিয়েই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেটাই আমি চাই।'
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তবে তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার কর্মসূত্রে জার্মানিতে ছিলেন শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা গিয়েছিলেন বোনের কাছে বেড়াতে।
দেশে স্বজনদের হারিয়ে এরপর নির্বাসিত জীবন শুরু হয় শেখ হাসিনার, আশ্রয় পান ভারতে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেন তিনি। শুরু হয় রাজপথে তার সংগ্রামী জীবনের পথ চলা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, "৮১ সালে বাংলাদেশের যে অবস্থা দেখেছিলাম, সেখান থেকে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এজন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। তারা আমাদের ভোট দিয়ে বারবার নির্বাচিত করে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে।"
এ বছর ১৮ ক্যাটাগরিতে মোট ১২৬ শিক্ষার্থী, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান 'প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৩' প্রদান করা হয়। যার মধ্যে ৫৪ শিক্ষার্থী, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী। সঞ্চালনা করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহমেদ।