টানা বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বুধবার সকালের বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। ছবিটি মতিঝিল আরামবাগ এলাকা থেকে তোলা -নাজমুল ইসলাম
সকাল থেকেই কালো মেঘে ঢেকে ছিল ঢাকার আকাশ। সাড়ে ৯টা নাগাদ শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি, যা চলে প্রায় বেলা ১২টা পর্যন্ত। বুধবার আড়াই ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে নগরজীবনে স্বস্তি এলেও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পড়তে হয় সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে। আষাঢ়ের বৃষ্টিতে জলজট সৃষ্টি হওয়ায় ব্যাহত হয় যান চলাচল। ইঞ্জিনে পানি ঢোকে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন বিকল হওয়ার ঘটনাও ঘটে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এদিন ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাজধানীতে। মুষলধারার বৃষ্টিতে রাজধানীর মিরপুর, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, ফার্মগেট, হাতিরঝিল, মিরপুর, গুলিস্তান, নিউ মার্কেট, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ মোড়, বেইলি রোড, সিদ্ধেশ্বরী রোড, মেরুল বাড্ডা, বনানী ঘুরে দেখা যায় টানা বৃষ্টিতে এসব এলাকার বিভিন্ন সড়কের পাশাপাশি অলিগলিতে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। রাস্তায় পানি জমে থাকার কারণে পথচারীদের দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি শেষে স্কুল ফেরত শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রিকশাচালক, অফিসগামী যাত্রী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। একদিকে জলাবদ্ধ সড়ক অন্যদিকে গণপরিবহণ, রিকশা ও সিএনজির সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। এ সময় কাউকে ছাতা নিয়ে আবার কাউকে রেইনকোট পরে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। বৃষ্টি শেষে বুধবার দুপুরে শান্তিনগর মোড়ে মায়ের হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছিলেন ভিকারুননিসা স্কুলের শিক্ষার্থী সাইমা সুলতানা। তারা বলেন, এই এলাকায় বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। স্কুলে আসা যাওয়ার কষ্ট হয়। সকালবেলা ভালোভাবে স্কুলে গেলেও লাগাতার বৃষ্টিতে বাসায় পৌঁছাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এখানে কোনো রিকশা পাচ্ছি না। রাস্তায় ময়লা পানির মধ্যে জুতা পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে। মালিবাগ মোড়ে পথচারী আব্দুল মতিন বলেন, 'হাতে জুতা নিয়েও হাঁটতে পারছি না। রাস্তায় হাঁটু সমান পানি। সবসময় এই এলাকায় যাতায়াত করি। এক ঘণ্টার বেশি বৃষ্টি হলেই আমাদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। প্রতি বছর বর্ষা এলেই এই এলাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বাসা মৌচাক হওয়ায় চারপাশে যেদিকে যাই পানি জমে থাকে।' এদিকে মৌচাক মোড়ে দাঁড়িয়ে রাস্তায় যানবাহনের সংকটের কথা জনান আসলাম উদ্দীন। তিনি বলেন, 'পল্টন যাব, বাস আসছে না অনেকক্ষণ ধরে। একটা বাস এলেও ধাক্কাধাক্কি করে উঠতে পারিনি। রিকশা ও সিএনজি ভাড়া বেশি। আবার রাস্তায় পানি জমে থাকার কারণে হেঁটেও যেতে পারছি না।' টানা বৃষ্টিতে মিরপুরের ১৪ নম্বর থেকে ১০ নম্বর যাওয়ার সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনের সড়কের ফুটপাত ডুবে যায় পানিতে। ওই সড়কে যানবাহন চলাচল কমে যায়। অনেক দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ও আশপাশের সড়ক ও ফুটপাতে জমে পানি। কোথাও কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায় ফুটপাতও। সড়কে থাকা নিষ্কাশন নালার মুখ বন্ধ হয়ে অনেক জায়গায় পানি যেতে দেরি হয়। বৃষ্টি শেষে নালা পরিষ্কার করতে দেখা যায় সিটি করপোরেশনের কর্মীদের। মিরপুর ১০ নম্বরে দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য দুপুরে বলেন, 'এখানে পানি আরও বেশি ছিল। এখন কিছুটা কমেছে।' এ এলাকার রোকেয়া সরণির শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া এলাকায়ও সড়কে পানি জমে। অন্যদিকে, বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম ও নৌবাহিনী সদর দপ্তরের সামনের সড়ক এবং ধানমন্ডির সড়কে পানিতে থৈ থৈ অবস্থা দেখা যায়। জলাবদ্ধতার কারণে বুধবার দুপুরে বিমানবন্দর সড়কের কাকলী থেকে বনানী ফ্লাইওভার পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়। ধানমন্ডি থেকে বারিধারায় আসার সময় সড়কের অনেক স্থানে পানি জমে থাকতে দেখেছেন আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, 'বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় একটি দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বৃষ্টি শেষে অফিসে আসার পথে অনেক জায়গায় রাস্তায় পানি জমে থাকতে দেখেছি। বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।'