সেমিফাইনালে আজ ভারতের কঠিন প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড
প্রকাশ | ২৭ জুন ২০২৪, ০০:০০
ক্রীড়া ডেস্ক
চলতি টি২০ বিশ্বকাপে অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটে চলেছে রোহিত শর্মার দল ভারত। তবে সেই পথচলা সেমিফাইনালে থমকে যাবে বলে মনে করেন মাইক আথারটন ও নাসের হুসেইন। ইংল্যান্ডের সাবেক এই দুই অধিনায়কের ধারণা, বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচের ছয়টিতে জিতে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে ভারত। চতুর্থবারের মতো টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড।
দশ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার সুবর্ণ সুযোগ ভারতের সামনে। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ২০১৪ সালের পর আবারও ফাইনাল খেলতে মরিয়া টিম ইন্ডিয়া। ক্যারিবীয় দ্বিপপুঞ্জের গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হবে নবম আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালের ম্যাচটি। ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচটি সরাসরি দেখা যাবে টি স্পোর্টস ও নাগরিক টিভিতে।
এবারের আসরে সাত ম্যাচের ছয়টিতে জিতে
নবম টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে ভারত। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি ছাড়া জয়ের জন্য সেভাবে তাদের বেগ পেতে হয়নি কোনো ম্যাচে। ইংল্যান্ডের অবস্থা ছিল উল্টো। একটা পর্যায়ে ছিটকে পড়ার অবস্থায় ছিল তারা। ভাগ্য অনেকটা ঝুলছিল সুতোয়। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে তারা সবার আগে। এমনিতে সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে সাধারণত কোনো এক দলকে ফেভারিট বলা কঠিন। ভারত-ইংল্যান্ডের মতো দুই দলের লড়াইয়ে কাউকে এগিয়ে রাখাও যায় না হয়তো। তবে ভারত যেভাবে ছুটে চলেছে, তাদেরকে থামানোটা যে কোনো দলের জন্যই হবে বড় চ্যালেঞ্জ।
নাসের হুসেইন এখানে ফিরে তাকাচ্ছেন সবশেষ টি২০ বিশ্বকাপে। সেবারও দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। অ্যাডিলেইডে সেবার ভারতকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। ১৬৯ রান তাড়ায় কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৬ ওভারেই ম্যাচ শেষ করে দেন দুই ওপেনার জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেলস। ৪৯ বলে ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক বাটলার, ৪৭ বলে ৮৬ রানে অপরাজিত হেলস।
তাইতো এবারের ম্যাচের আগে হুসেইনের মনে পড়ছে সেই ম্যাচের কথা। তিনি বলেন, 'আমার বাজি দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের পক্ষে। অ্যাডিলেইডের সেই সেমিফাইনালের স্মৃতিকে সঙ্গী করেই নামবে ইংল্যান্ড। আমার মনে হয় না, এই ইংল্যান্ড দল ভারতকে ভয় পায়।'
ইংল্যান্ডকে নিয়ে একটি শঙ্কা অবশ্য হুসেইনের আছে। উইকেট যদি মন্থর ও স্পিন সহায়ক হয়, তাহলে বিপদে পড়তে পারে বাটলারের দল, 'যদি খুব শুষ্ক ও ধীরগতির পিচ হয়, তাহলে অবশ্য একটু ভিন্ন। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন-আপ নিয়ে একটি ব্যাপারই বলার আছে, বাটলার ও সল্ট যদিও যুক্তরাষ্ট্রকে উড়িয়ে দিয়েছে, তবে পিচে বল যদি একটু থমকে আসে এবং মন্থর হয়, তাহলে তাদের ব্যাটিং কিছুটা নড়বড়ে হবে এবং সেক্ষেত্রে তা প্রবলভাবে ভারতের পক্ষে থাকবে। এই ধরনের উইকেটে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং নড়বড়ে।'
সম্ভাব্য দুই ফাইনালিস্টের ক্ষেত্রে হুসেইনের সঙ্গে একমত আথারটন, 'আমার মনে হয়, ভারতকে হারাতে চলেছে ইংল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা একটু বেশিই ভালো হয়ে উঠবে। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ইংল্যান্ড ফাইনাল হবে।'
ভারতের বিপক্ষে গত সেমিফাইনালের একাদশে থাকা ৮ জন এবারও আছেন দলে। তাদেরই একজন, অলরাউন্ডার মইন আলির কণ্ঠেও ফুটে উঠল, 'নিখুঁত এক ম্যাচ ছিল সেটি। যেভাবে আমরা তাদের ওপর দাপট দেখিয়েছি ব্যাটিংয়ে আমরা ছিলাম অবিশ্বাস্য। দারুণ ব্যাটিং উইকেটে বল হাতেই জয়ের ভিত গড়া হয়েছিল আমাদের। শেষ দিকে যদিও কিছু রান ওরা করেছিল, তবে ততক্ষণে ওদের জন্য দেরিই হয়ে যায়, আমরা তা সহজে পেরিয়ে গেছি। দারুণ একটি দিন ছিল সেটি, অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল।'
২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়ে শিরোপা ঘরে তুলে ইংল্যান্ড। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিল ইংলিশরা।
এরপর ২০১৬ সালের আসরে ফাইনালে উঠলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৪ উইকেটে হেরে যায় ইংল্যান্ড। মূলত ম্যাচের শেষ ওভারে ক্রেইগ ব্র্যাথয়েটের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ের সামনে হার মানে ইংলিশরা। শেষ ওভারে ১৯ রানের প্রয়োজনে ইংল্যান্ডের পেসার বেন স্টোকসের প্রথম চার বলে চার ছক্কায় ২৪ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে শিরোপা এনে দেন ব্র্যাথওয়েট। ২০২২ সালে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে ইংল্যান্ড। নিজেদের তৃতীয় ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারায় ইংলিশরা।
তাই ২০১০, ২০১৬ ও ২০২২ সালের পর চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার সুযোগ ইংল্যান্ডের সামনে। ফাইনালে খেলার লক্ষ্য সেমিফাইনালে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না ইংলিশরা। দলের অধিনায়ক জশ বাটলার বলেন, 'আমাদের সামনে চতুর্থ ফাইনাল খেলার সুযোগ। ফাইনালে খেলার সুযোগ যে কেউ লুফে নেবে। আমরাও এর ব্যতিক্রম না। ফাইনালে খেলতে দলের সবাই মুখিয়ে আছে। আমাদের লক্ষ্য ফাইনাল খেলা।'
এবারের বিশ্বকাপের শুরুটা ভালো হয়নি ইংল্যান্ডের। গ্রম্নপ পর্ব থেকেই ছিটকে যাবার শঙ্কায় ছিল তারা। কিন্তু ভাগ্যের জোরে গ্রম্নপ পর্বের বাধা টপকিয়েছে ইংলিশরা। গ্রম্নপ পর্বে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে বৃষ্টির কারণে পয়েন্ট ভাগাভাগি এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে মহাবিপদে পড়ে তারা। পরের দুই ম্যাচ জিতে সুপার এইটে খেলার লড়াইয়ে ফিরে ইংল্যান্ড। ৪ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট ছিল তাদের। একই অবস্থা ছিল স্কটল্যান্ডেরও। কিন্তু রান রেটে এগিয়ে থাকার সুবাদে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় ইংলিশরা।
সুপার এইটেও চাপে পড়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হেরে যাওয়ায় সেমির টিকিট পায় তারা। তবে গ্রম্নপ পর্ব বা সুপার এইটের ম্যাচগুলো নিয়ে ভাবতে চান না ইংল্যান্ডের অধিনায়ক বাটলার। সেমিফাইনালে ভারতকে আটকাতে বদ্ধপরিকর তারা। বাটলার বলেন, 'গ্রম্নপ পর্ব ও সুপার এইটের ম্যাচ এখন অতীত। আমরা সামনের ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। সেমিফাইনালে বাধা টপকাতে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে চাই আমরা। কাজটি কঠিন হলেও সেরা ক্রিকেট খেলার সামর্থ্য ও যোগ্যতা আমাদের দলের আছে।'
২০০৭ সালে শুরু হওয়া টি২০ বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ রানে হারিয়েছিল তারা। এরপর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নেয় ভারত। কিন্তু শ্রীলংকার কাছে ৬ উইকেটে হেরে যায় টিম ইন্ডিয়া। ২০১৪ সালের পর আর কখনো টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে পারেনি ভারত। দু'বার সেমিফাইনালে খেললেও ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা।
দশ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার সুযোগ ভারতের সামনে। এই সুযোগকে হাতছাড়া করতে চায় না ভারত। দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, 'দীর্ঘ দিন পর ফাইনালে খেলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে আমাদের সামনে। এই সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নই আমরা। ফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে সেমির লড়াইয়ে নামবে দল।'
২০২২ সালে বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে ফাইনাল খেলার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল ভারতের। ইংলিশদের কাছে ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছিল তারা। প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১৬৮ রান করে ভারত। জবাবে ৪ ওভার বাকি রেখে বিনা উইকেটে টার্গেট স্পর্শ করে ভারতকে হারের লজ্জায় ডুবায় ইংল্যান্ড।
টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে ইংল্যান্ডকে পেয়েছে ভারত। আগের আসরে ইংল্যান্ডের কাছে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার দারুণ সুযোগ এখন ভারতের সামনে। কিন্তু প্রতিশোধ নিয়ে ভাবতে রাজি নন রোহিত। প্রতিপক্ষ কে, সেটিও ভাবতে চান না তিনি, ''আমরা আলাদা কিছু করতে চাই না। যে ক্রিকেট খেলছি সেটাই খেলতে চাই। কে প্রতিপক্ষ সেটি দেখার দরকার নেই। ছেলেদের বলেছি, চাপ না নিয়ে নিজেদের মতো খেলতে। এই রকম ক্রিকেট খেললেই আমরা সফল হব।'
বিশ্বকাপের গ্রম্নপ ও সুপার এইট পর্বে দারুণ দাপট দেখিয়েছে ভারত। গ্রম্নপ পর্বে ৩ ম্যাচ ও সুপার এইট পর্বে ৩ ম্যাচ জিতেছে তারা। গ্রম্নপ পর্বে ভারতের একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। আগের ম্যাচগুলোর মতো পারফরম্যান্স করতে পারলে, ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে হারানোর ব্যাপারে আশাবাদী রোহিত, 'এখন পর্যন্ত পুরো টুর্নামেন্টেই আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। ছেলেরা কোনোরকম চাপ নেয়নি। মাঠে নিজেদের সেরাটা দিতে মরিয়া ছিল তারা এবং ঠিকঠাক সেগুলোর বাস্তবায়নও করেছে। আশা করি, আরও একটি পরীক্ষায় সেরা পারফরম্যান্সই দেখাবে দল।'
তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে গায়ানায় ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচে ৮৮ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কোনো রিজার্ভ ডে রাখেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। তবে ঐ ম্যাচের জন্য অতিরিক্ত ৪ ঘণ্টা ১০ মিনিট রেখেছে আইসিসি। কিন্তু কোনোভাবেই পরের দিন ম্যাচ আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই।
তবে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা-আফগানিস্তান ম্যাচে রিজার্ভ ডে রাখা হয়েছে। ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে গেলে সুবিধা পাবে টিম ইন্ডিয়া। কারণ সুপার এইটে গ্রম্নপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে ভারত। সুপার এইটে গ্রম্নপ রানার্সআপ হয়েছে ইংল্যান্ড। এজন্য খেলা পরিত্যক্ত হলে ফাইনালে খেলবে রোহিত-কোহলিরা।
এখন পর্যন্ত টি২০তে ২৩ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত-ইংল্যান্ড। এরমধ্যে ভারতের জয় ১২ ম্যাচে। ইংল্যান্ড জিতেছে ১১ ম্যাচে। বিশ্বকাপের মঞ্চে জয় ও হারের দিক দিয়ে মুখোমুখি দেখায় দু'দলই সমান-সমান। ৪ বারের দেখায় ২টি করে জয় পেয়েছে ভারত ও ইংল্যান্ড।