শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

কর বৃদ্ধি আইন পাসের জের কেনিয়ার পার্লামেন্টে বিক্ষুব্ধদের আগুন, ১০ জন নিহত

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
কেনিয়ায় কর বৃদ্ধি আইন পাসের পরই বিক্ষুব্ধ জনতা পার্লামেন্ট ভবনে ভাঙচুর শুরু করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় -ওয়েবসাইট

নতুন কর বৃদ্ধি আইন পাস করায় কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এই বিক্ষোভ ছড়িয়েছে দেশটির পার্লামেন্টেও। শত শত বিক্ষোভকারী পার্লামেন্টের ভেতর ঢুকে সেখানেও তান্ডব চালায়। তাদের আটকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরাসরি ছোড়া গুলিতে এ রিপোর্ট (রাত ৯টা) পর্যন্ত অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরও কয়েক ডজন মানুষ। পার্লামেন্ট ভবনের একাংশে আগুন ধরে যেতে দেখা গেছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সূত্র: রয়টার্স ও বিবিসি।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, মঙ্গলবার শত শত বিক্ষোভকারী পার্লামেন্টের ভেতর প্রবেশ করেন। ওই সময় তাদের আটকাতে সরাসরি গুলি ছোড়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টের ভেতর তান্ডব চালাচ্ছেন। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

জানা যায়, কর বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে হতো কয়েক সপ্তাহ থেকেই দেশটির সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছেন। মঙ্গলবার যখন এটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় তখন বিক্ষোভকারীরাও চূড়ান্ত অবস্থানে চলে যান। তারা আক্রমণাত্মক ও

মারমুখী হয়ে ওঠেন।

গত সপ্তাহে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ-সমাবেশ দেশটির সরকারকে বেকায়দায় ফেলেছে। কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো গত সপ্তাহের শেষদিকে বলেছিলেন, তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে প্রস্তুত। কিন্তু মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকালের দিকে নাইরোবিতে উত্তেজনা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়।

বিবিসি জানায়, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হাজার হাজার মানুষ পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপের পাশাপাশি ব্যারিকেড ভেঙে সংসদ ভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। সেসময় এমপিরা কর বৃদ্ধির প্রস্তাবের একটি বিতর্ক করছিলেন। সংসদ অধিবেশন চলাকালে বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনে হামলার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশ সংসদ ভবনের বাইরে জনতার ওপর গুলি চালায়।

গুলি চালানো সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা ভেতরে ঢুকে পড়ায় এমপিরা পার্লামেন্টের বেজমেন্টে গিয়ে আশ্রয় নেন। বিক্ষোভকারীদের কারণে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা সেখানে আটকে ছিলেন।

এদিকে রয়টার্স জানায়, মঙ্গলবার আইনপ্রণেতারা পার্লামেন্টে কর বৃদ্ধির একটি নতুন আইন পাসের পরই ভবনপ্রাঙ্গণে চড়াও হয় বিক্ষোভকারীরা। তারা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে পার্লামেন্ট ভবনে ভাঙচুর শুরু করেন। এরপরই পার্লামেন্টের ভেতর থেকে দেখা যায় আগুনের শিখা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক চিকিৎসাকর্মী বলছেন, পুলিশের গুলিতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে। আরেক চিকিৎসাকর্মী জানান, আহত হয়েছে ৫০ জনের বেশি মানুষ।

পার্লামেন্ট মঙ্গলবার আর্থিক বিল অনুমোদন করেছে। এখন সেটি প্রেসিডেন্টের কাছে সই করার জন্য পাঠানো হবে। এ বিলে প্রেসিডেন্টের কোনো আপত্তি থাকলে তিনি তা পার্লামেন্টে ফেরত পাঠাতে পারেন।

এরই মধ্যে জীবনযাত্রা ব্যয় সংকটে থাকা কেনীয়রা দেশে কর বাড়ানোর বিরোধিতা করছে। বিক্ষোভকারীঢদের অনেকেই প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুতোর পদত্যাগও দাবি করছে।

করোনাভাইরাস মহামারি, ইউক্রেইন যুদ্ধ, টানা দুই বছরের খরা এবং মুদ্রার অবমূল্যায়নসহ বেশ কয়েকটি ধাক্কায় সৃষ্ট অর্থনৈতিক দুরবস্থা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কেনীয়রা। এই পরিস্থিতির মধ্যে সরকার ঋণের বোঝা কমাতে কর অতিরিক্ত ২৭০ কোটি ডলারের বেশি বাড়ানোর বিল অনুমোদন করেছে। রুটি, রান্নার তেল, গাড়ি এবং আর্থিক লেনদেনের মতো কিছু ক্ষেত্রে সরকার নতুন কর আইনে কিছু ছাড় দিয়েছে। কিন্তু তা বিক্ষোভকারীদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি।

মঙ্গলবারের বিক্ষোভে এক বিক্ষোভকারী বলেন, 'আমরা চাই পার্লামেন্ট বন্ধ করে দিতে। আর সব এমপিরও পদত্যাগ করে সরে যাওয়া উচিত। আমরা নতুন সরকার পেতে চাই।'

রয়টার্স জানায়, এদিন কেবল পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণেই নয় দেশজুড়ে অন্য শহর এবং নগরেও বিক্ষোভ-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে