পরীমনিকান্ডে চাকরি হারাচ্ছেন সাবেক এডিসি সাকলায়েন

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
পরীমনির বাসায় দিনের পর দিন রাত্রিযাপন করা ও স্ত্রীর অবর্তমানে রাজারবাগের বাসায় নিয়ে ১৭ ঘণ্টা অবস্থানের প্রমাণ মিলেছে তদন্তে। সেই তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে চাকরি হারাচ্ছেন তৎকালীন ঢাকা মেট্রোপলিটন গুলশান গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি ও বর্তমানে ঝিনাইদহ জেলার ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সাকলায়েন। গত ১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের শৃঙ্খলা-২ শাখার উপ-সচিব পারভীন জুঁই স্বাক্ষরিত স্মারকে বিভাগীয় মামলায় তাকে চাকরি থেকে 'বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান' গুরুদন্ড দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পিএসসিকে দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়েছে, তদন্তে উঠে এসেছে, নায়িকা পরীমনির সঙ্গে সাকলায়েনের বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। সাকলায়েন পরীমনির বাসায় গিয়ে থাকতেন। সাকলায়েনের স্ত্রী তার (সাকলায়েন) সরকারি বাসায় না থাকার সময় পরীমনি গিয়ে রাত্রিযাপন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ১৩ জুন পিএসসিকে চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুযায়ী 'অসদাচরণের' কারণে সাকলায়েনকে 'গুরুদন্ড' হিসেবে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সাকলায়েনের বক্তব্য জানতে তাকে ফোন করা হয়, খুদে বার্তা পাঠানো হয়, কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি। পরীমনি বলেন, 'বিষয়টি ব্যক্তিগত পর্যায়ে এখনো আসে নাই, ব্যক্তিগত পর্যায়ে যদি আসে তখন আমি কথা বলব। এখন মনে হয় না আমার কোনো কথা বলার দরকার আছে।' স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, সাকলায়েন ডিবির গুলশান বিভাগে থাকার সময় নায়িকা পরীমনির সঙ্গে ঘটনাক্রমে তার দেখা হয় এবং যোগাযোগ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি নায়িকা পরীমনির বাসায় নিয়মিত রাত্রিযাপন করতে শুরু করেন। পুলিশ অধিদপ্তরের এলআইসি শাখা (বৈধ আড়িপাতার দায়িত্বে থাকা) থেকে পাওয়া সাকলায়েনের মুঠোফোনের সিডিআর (বিস্তারিত কল রেকর্ড প্রতিবেদন) বিশ্লেষণ করে তদন্তকারীরা দেখেছেন, ২০২১ সালের ৪ জুলাই থেকে পরের এক মাসে সাকলায়েন বিভিন্ন সময়ে (দিনে ও রাতে) নায়িকা পরীমনির বাসায় অবস্থান করেছেন। নায়িকা পরীমনির মুঠোফোনের ফরেনসিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় তদন্তকারীরা দেখেছেন, পরীমনির সঙ্গে সাকলায়েনের কথোপকথন চলত। তা সাধারণ পরিচিতি বা পেশাগত প্রয়োজনে স্থাপিত কোনো সম্পর্কের নয়, বরং অনৈতিক প্রেমের সম্পর্ক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজারবাগ মধুমতি পুলিশ অফিসার্স কোয়ার্টার্সে নায়িকা পরীমনির যাতায়াতের সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) ফুটেজ রয়েছে। এর ফরেনসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে ও সাক্ষীদের জবানবন্দি অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে সাকলায়েনের পূর্বপরিকল্পনা ও সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে তার স্ত্রী না থাকা অবস্থায় নায়িকা পরীমনি তার (সাকলায়েন) রাজারবাগের সরকারি বাসায় যান। সেখানে প্রায় ১৭ ঘণ্টা অবস্থান করে ২ আগস্ট (২০২১) রাত দেড়টায় পরীমনি বাসাটি ত্যাগ করেন। সাকলায়েন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়ে সরকারি দায়িত্বের বাইরে নায়িকা পরীমনির সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন বলে উলেস্নখ করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে। এতে বলা হয়, সাকলায়েন বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক। এরপরও পরীমনির সঙ্গে তার বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, পরীমনির সঙ্গে জন্মদিন উদ্‌?যাপন এবং নিজের সরকারি বাসভবনে নিজ স্ত্রীর অবর্তমানে সময় কাটানোর মতো ঘটনা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এ ঘটনায় সাকলায়েনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তাকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ থেকে অব্যাহতির দাবি করেছিলেন। তবে জবাব সন্তোষজনক হয়নি। নাসিরের মামলায় পরীমনির জামিন এদিকে, মারধর ও হত্যার হুমকির অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের করা মামলায় জামিন পেয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট এম সাইফুল ইসলাম মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে এই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আনোয়ারুল কবির বলেন, এই মামলায় পরীমনি আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন, জামিন চান। শুনানি নিয়ে আদালত তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলায় গত ১৮ এপ্রিল পরীমনি ও তার কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নেন আদালত। একই সঙ্গে পরীমনি ও জুনায়েদকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সেদিন সমন জারি করেছিলেন আদালত। মারধর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ২০২২ সালের ১৮ জুলাই ঢাকার আদালতে নালিশি মামলা করেন ব্যবসায়ী নাসির। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের ৮ জুন পরীমনি ও তার সহযোগীরা সাভারের বোট ক্লাবে ঢুকে ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। পরে ক্লাবের ভেতরে বসে অ্যালকোহল পান করেন। দিবাগত রাত ১টা ১৫ মিনিটের দিকে ক্লাব ত্যাগ করার সময় পরীমনি তাকে (নাসির) ডাক দেন। পরে একটি বস্নু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনা মূল্যে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এতে রাজি না হওয়ায় পরীমনি তাকে গালমন্দ করেন। একপর্যায়ে পরীমনি হত্যাচেষ্টার জন্য একটি গস্নাস ছুড়ে মারেন, যা তার মাথায় ও বুকে লাগে। মামলাটি তদন্ত করে গত এপ্রিলে ঢাকার সিজেএম আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ বু্যরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পুলিশ ও আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জুনায়েদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী নাসিরকে মারধর করার অভিযোগের সত্যতা তদন্তে পেয়েছে পিবিআই। অপর দিকে পরীমনির ছুঁড়া মদের গস্নাসে নাসিরের গায়ে আঘাত লাগার ঘটনার সত্যতাও পেয়েছে পিবিআই। \হবোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে ব্যবসায়ী নাসিরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ জুন সাভার থানায় মামলা করেন পরীমনি। মামলাটি তদন্ত করে ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নাসির, তুহিন সিদ্দিকী ও শাহ শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্র আমলে নেন আদালত। ২০২২ সালের ১৮ মে তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবু্যনাল-৯। পরীমনির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত বলেন, মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। অন্যদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় পরীমনিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিচার চলছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এ। মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।