অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে ডুবল বাংলাদেশ

প্রকাশ | ২৬ জুন ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
উইকেট পাওয়ার পর উচ্ছ্বসিত আফগান বোলার রসিদ খান। বাংলাদেশকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবার সেমিফাইনালে উঠল আফগানিস্তান -ওয়েবসাইট
শুধু একটি ম্যাচ। যার ওপর ঝুলছিল তিন দলের সেমিফাইনাল ভাগ্য। বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের মাঝে শেষ হাসি হেসেছে আফগানরাই। যেখানে বলতে গেলে সবচেয়ে সহজ সুযোগ ছিল টাইগারদের জন্যই। তবে এ যেন হেলায় হারিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তরা। সুপার এইটে টানা দুই ম্যাচে বাজেভাবে হারের পরও সেমিফাইনালের ভালো সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। নানা নাটকীয়তা আর সমীকরণের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ যাত্রা। বাংলাদেশের হারের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়াও এবারের বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। বাংলাদেশ যদি এই ম্যাচটি জয় পেত, তাহলে সেমিতে পা দিত অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবার সেমিফাইনালে উঠল আফগানিস্তান। লাইনআপ অনুযায়ী, প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তান। আজ বুধবার সকালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে এই দুই দল। এরপর দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ড। বৃহস্পতিবার রাতে এই ম্যাচটি হবে গায়ানাতে। সেমিফাইনালে চার দলের মধ্যে ফেভারিট দক্ষিণ আফ্রিকা। সুপার এইটে কোনো ম্যাচ হারেনি তারা। গ্রম্নপ২-এর শীর্ষ থেকে সুপার এইট পর্ব শেষ করা প্রোটিয়ারা ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর ব্রায়ান লারা ক্রিকেট একাডেমিতে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয়ে টুর্নামেন্টে তাদের অপরাজিত যাত্রা বজায় রাখতে চাইবে। এদিকে আসরে দুর্দান্ত গতিতে ছুটছে আরেক ফেভারিট ভারত। গায়ানায় অপরাজেয় রোহিত শর্মাদের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে টি২০ বিশ্বকাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের লড়াই হবে। তাতে কে কাকে হারাবে সেটা বলা মুশকিল। কেননা দুই দলই আছে ফর্মের চূড়ায়। দ্বাদশ ওভারের প্রথম বল। রশিদ খানের গুগলিটা পাঞ্চ করে লং অনে ঠেলে ১ রান নিলেন তানজিম হাসান সাকিব। স্কোর বোর্ডে ১ রান যোগ হলেও বাংলাদেশ ছিটকে গেল চলমান বিশ্বকাপের থেকে। শেষ হয়ে যায় সেমিফাইনালের আশা। সেখান থেকে ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা থাকলেও সেটা হলো না। বৃষ্টি আইনে ৮ রানে হেরে সুপার এইটেই বিশ্বকাপ মিশনের সমাপ্তি ঘটলো নাজমুল হোসেনের দলের। আফগানদের বিপক্ষে আগে কখনো বিশ্বকাপে না হারলেও এবার সেই অভিজ্ঞতাও হয়েছে বাংলাদেশের। মঙ্গলবার সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভ্যালে স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বোলিং তোপে ১১৫ রান করতে পারে আফগানিস্তান। সেমিফাইনালে যেতে হলে ১১৬ রানের লক্ষ্য ১২.১ ওভারেই পার হতে হতো বাংলাদেশকে। সেই উদ্দেশ্যে রান তাড়ায় নামলেও লক্ষ্য ছুঁতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষমেশ জিততে পারেনি ম্যাচও। ১৭.৫ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে গেছে লাল-সবুজের দল। লক্ষ্য তাড়ায় নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ফজল হক ফারুকির গুড লেংথের বল একপাশে সরাতে গিয়ে মিস করেন তানজিদ হাসান তামিম। বল আঘাত করে তার প্যাডে। আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও অবশ্য রক্ষা হয়নি। ৩ বলে কোনো রান না করেই ফিরে যান তানজিদ। দ্বিতীয় ওভারে আবারও উইকেট হারায় বাংলাদেশ। নাভিন-উল-হকের ফুল লেংথের স্স্নোয়ার বুঝতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। উড়িয়ে দিয়েছিলেন ডিপ স্কয়ার লেগে। অনায়াস ক্যাচ নেন মোহাম্মদ নবী। পরের বলে সাকিব আল হাসানকেও ফেরান নাভিন। নিজের বলেই ক্যাচ নিয়ে সাকিবকে শূন্য রানে বিদায় করেন তিনি। এরপর ক্রিজে আসেন সৌম্য সরকার। একপ্রান্তে ভালো খেলতে থাকা লিটনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন এই বাঁহাতি। এরপরই শুরু হয় বৃষ্টি। কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে। পুনরায় খেলা শুরু হলে দলকে নিয়ে এগোতে থাকেন লিটন-সৌম্য। পাওয়ারপেস্ন'তে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেট হারিয়ে ৪৬ রান। এরপরই উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন সৌম্য সরকার। ১০ বলে ১০ রান করে রশিদের লেগ স্পিনে ধরা খান তিনি। সৌম্যের আউটের পর দুই চারে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তাওহিদ হৃদয়। তবে তাকেও ফিরিয়ে বাংলাদেশকে এক প্রকার খাদে ঠেলে দেন আফগান অধিনায়ক রশিদ। এরপর মাহমুদউলস্নাহ ক্রিজে এসে জুটি বাঁধেন লিটনের সঙ্গে। কিন্তু দলের সেমিফাইনালের স্বপ্নের পালে হাওয়া লাগানোর বদলে উল্টো আশার শেষটুকুও নিরাশা করে দেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। ৯ বলে ৬ রান করে বিদায় নেন তিনি। সেই সঙ্গে শেষ হয় বাংলাদেশের সেমির আশা। পরের বলে রিশাদ এসে ফেরেন কোনো রান না করেই। তানজিম সাকিবও পারলেন না টিকতে। ৩ রানে তাকে আউট করেন গুলবাদিন। দলের এই বিপর্যয়ের মাঝেই ফিফটি করেন লিটন। একপ্রান্ত আগলে ৪১ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে যান এই ওপেনার। এরপর লিটনকে সঙ্গ দেন তাসকিন। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। শেষে মুস্তাফিজকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেই উলস্নাসে মেতে ওঠে আফগানরা। এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৮ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান। একাদশ ওভারে আফগান শিবিরে প্রথম আঘাত করেন রিশাদ হোসেন। তার লেগ স্পিনে সাজঘরে ফেরান ২৯ বলে ১৮ রান করা ইব্রাহিম জাদরান। এ সময় টানা ১২ ডট বল খেলে আফগানিস্তান। চতুর্দশ ওভারে মিস হয় আজমতউলস্নাহ ওমরজাইয়ের ক্যাচ। এরপর আবারও রান করতে থাকে আফগানিস্তান। শেষদিকে দারুণ বোলিং নৈপুণ্য দেখান রিশাদ। তার বোলিং আর সৌম্য সরকারের ফিল্ডিংয়ে এক ওভারে দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ চেপে ধরে আফগানদের। ১৯তম ওভারে মাত্র ১ রান খরচ করে রশিদ খানের দলকে অল্প রানে আটকে রাখার আশা দেখান মুস্তাফিজুর রহমান। তবে শেষ ওভারে হিসেব খানিক এলোমেলো করে দেন তানজিম। তাকে জোড়া ছক্কা হাঁকান রশিদ খান, অপরাজিত থাকেন ১০ বলে ১৯ রান করে। তাতেই শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে আফগানদের দলীয় পুঁজি দাঁড়ায় ১১৫ রান। বাংলাদেশের পক্ষে রিশাদ তিনটি এবং তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান একটি করে উইকেট শিকার করেন। সংক্ষিপ্ত স্কোর: আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১১৫/৫ (গুরবাজ ৪৩, জাদরান ১৮, ওমারজাই ১০, নাইব ৪, নাবি ১, জানাত ৭*, রাশিদ ১৯*; তানজিম ০/৩৬, তাসকিন ১/১২, সাকিব ০/১৯, মুস্তাফিজ ১/১৭, রিশাদ ৩/২৬)। বাংলাদেশ: (লক্ষ্য ১৯ ওভারে ১১৪) ১৭.৫ ওভারে ১০৫ (লিটন ৫৪*, তানজিদ ০, শান্ত ৫, সাকিব ০, সৌম্য ১০, হৃদয় ১৪, মাহমুদউলস্নাহ ৬, রিশাদ ০, তানজিম ৩, তাসকিন ২, মুস্তাফিজ ০; নাভিন ৪/২৬, ফারুকি ১/১৫, নবি ০/১৫, রশিদ ৪/২৩, নুর ০/১৩, নাইব ১/৫)। ফল:ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে আফগানিস্তান ৮ রানে জয়ী। ম্যাচসেসরা: নাভিন-উল-হক।