রোববার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

দিলিস্নতে প্রধানমন্ত্রী আজ মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ জুন ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার নয়াদিলিস্নর পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় -ফোকাস বাংলা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নয়াদিলিস্ন পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশটিতে নতুন সরকার গঠনের পর এটিই কোনো বিদেশি প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় সফর।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, শুক্রবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে নয়াদিলিস্নর পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র ও পরিবেশবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং।

এর আগে শুক্রবার দুপুর ২টা ৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব এমএম ইমরুল কায়েস জানান, গুরুত্বপূর্ণ এ দ্বিপক্ষীয় সফর উপলক্ষে ২১ থেকে ২২ জুন ভারতে অবস্থান করবেন বাংলাদেশ সরকারপ্রধান।

সফরের শুরুতে শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। আজ প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পরে মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। এরপর হায়দরাবাদ হাউজে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করবেন। এরপর দুই

প্রধানমন্ত্রী তাদের বিবৃতি দেবেন।

এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের মধ্যে ১০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই ও নবায়ন হতে পারে।

দিলিস্নর হায়দরাবাদ হাউজে শনিবার (আজ) দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর অন্তত ১৪টি চুক্তি ও এমওইউ সইয়ের প্রস্তুতি চলছে। সব মিলিয়ে ১০টির বেশি চুক্তি ও এমওইউ সই হতে পারে। এর মধ্যে অন্তত চারটির মেয়াদ শেষে নবায়ন হওয়ার কথা। এসব চুক্তি ও এমওইউ জ্বালানি, সংযুক্তি, অর্থনীতিসহ সহযোগিতার নানা ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, 'ভবিষ্যতে দুই দেশের এই সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে যেতে চান, তার একটি দিকনির্দেশনা থাকবে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে। একধরনের রূপকল্পের কথা উঠে আসবে তাদের আলোচনায়। যার ধারাবাহিকতায় ব্যাপকতর অর্থে সংযুক্তি, পরিবেশ, মহাকাশসহ নতুন নতুন কোন ক্ষেত্রগুলোতে ভবিষ্যতে আমাদের সহযোগিতা এগোবে, তার একটা নির্দেশনা থাকবে।'

তিস্তা নিয়ে নতুন প্রস্তাব

বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি অভিন্ন নদীর তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি, সীমান্ত হত্যা পুরোপুরি বন্ধের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় তুলবে বাংলাদেশ।

তিস্তা চুক্তির বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, তিস্তা চুক্তিটি যে পর্যায়ে আছে, খুব শিগগির এতে ইতিবাচক কিছু ঘটবে, এমন কোনো পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। তবে আশার দিকটি হচ্ছে, তিস্তা ঘিরে উন্নয়ন প্রকল্প বা সংরক্ষণের বিষয়ে সম্প্রতি ভারত আগ্রহ দেখাচ্ছে।

বেশ কয়েক বছর আগে তিস্তায় বৃহদায়তন উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশকে একটি প্রস্তুাব দিয়েছিল চীন। এ নিয়ে দুই দেশই আগ্রহী ছিল। কিন্তু ভারতের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ওই প্রকল্পের ব্যাপারে কিছুটা নীরবতা পালন করছে। গত মে মাসে ঢাকা সফরে আসা ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে আলোচনার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ভারত তিস্তার প্রকল্পে অর্থায়নে আগ্রহী।

বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা

দক্ষিণ এশিয়ার দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্য এখন ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়লেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য অনেকটাই ঝুঁকে আছে ভারতের দিকে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের প্রবেশাধিকার দেওয়া হলেও শুল্ক ও অশুল্ক বাধা প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। এবারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সেপা (সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি) আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে। সেপা সই হলে দুই দেশের বাণিজ্যে ভারসাম্য আসার পথ সুগম হতে পারে।

ভারত ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশকে ঋণচুক্তির আওতায় অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছে। প্রায় সাড়ে সাতশ' কোটি ডলারের ঋণচুক্তির বাস্তবায়ন খুব ধীর হচ্ছে। চুক্তি বাস্তবায়নে গতি আনতে গত কয়েক বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। ঋণচুক্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে নতুন একটি রূপরেখা চুক্তি নিয়ে দুই দেশের কর্মকর্তারা বেশ কিছু দিন ধরে কাজ করছেন। তবে এবার ওই চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা কম। শীর্ষ বৈঠক শেষে প্রচারিত যৌথ ঘোষণায় নতুন ওই রূপরেখা চুক্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

নানা মাত্রায় সংযুক্তি

সড়ক, রেল, নৌসহ নানা মাত্রায় দুই দেশের মধ্যে সংযুক্তির (কানেকটিভিটি) বিষয়গুলো ২০১০ সাল থেকে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। পরে জ্বালানিও এসেছে সংযুক্তিতে। ইতিমধ্যে ভারতের ভূখন্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশ জলবিদু্যৎ আমদানি করছে নেপাল থেকে। এবারের আলোচনায় জ্বালানিসহ সংযুক্তির বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। যৌথ ঘোষণায় এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

হাসিনা-মোদি শীর্ষ বৈঠকে এবার যে প্রকল্পগুলোর বিষয়ে ঘোষণা আসার কথা, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু। বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির রামগড়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুমের মধ্যে এই সেতু যোগাযোগ স্থাপন করবে।

এদিকে, সফরের শেষ দিন আজ বিকালে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যা ৬টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে নয়াদিলিস্ন ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী। রাত ৯টায় ঢাকায় পৌঁছার কথা রয়েছে তার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে