ঈদের ছুটির দিনে দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৬৪ জন আহত রোগী পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে। যা অন্য বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। গত শুক্রবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬ দিনে ১ হাজার ৫৮৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬০, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ২২৩ ও কোরবানির পশু জবাই করতে ছুরি-চাপাতি চালিয়ে বা গরুর গুতো খেয়ে ১৫৩ জন আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, ঈদের ছুটিতে সারাদেশের হাসপাতালগুলোর জরুরি বিভাগে রোগীর চাপ কিছুটা কমলেও ব্যতিক্রম রাজধানী ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালে। এ হাসপাতালে বিভিন্ন মৌমুমে জরুরি বিভাগে রোগী বেড়ে যায়।
পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তথ্যমতে, ঈদের আগে দিন রোববার, ঈদের দিন সোমবার ও ঈদের পরেরদিন মঙ্গলবার-এই তিন দিনে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ৮৮৪ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ১২৭ জনের মধ্যে ৯৫ জনই মোটর সাইকেল আরোহী, যা মোট রোগীর ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ ছাড়া কোরবানি দিতে গিয়ে ১৫ দশমিক ৭২ শতাংশ আহত হয়েছে।
পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তথ্যমতে, গত ১৪ জুন জরুরি বিভাগের মোট রোগী ভর্তি হয়েছে ২২৭ জন। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪ জন, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ২৩ জন, ১৫ জুন ২৩৩ জনের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮ জন, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ২০ জন ও কোরবানির পশু জবাই করতে ছুরি-চাপাতি চালিয়ে বা গরুর গুতো খেয়ে ১২ জন আহত হয়েছে। ১৬ জুন ২৭৯ জনের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৪ জন, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ৪০ জন ও কোরবানির পশু জবাই করতে ছুরি-চাপাতি চালিয়ে বা গরুর গুতো খেয়ে ১৫ জন। ১৭ জুন ৩২২ জনের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১ জন, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ৩৪ জন ও কোরবানির পশু জবাই করতে ছুরি-চাপাতি চালিয়ে ১১১ জন। ১৮ জুন ২৫৩ জনের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫২ জন, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ৫৩ জন ও কোরবানির পশু জবাই করতে ছুরি-চাপাতি চালিয়ে আহত হয়েছে ১৩ জন। ১৯ জুন ২৬৯ জনের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১ জন, মোটর সাইকেলে ৫৩ জন ও কোরবানির পশু জবাই করতে ছুরি-চাপাতি চালিয়ে বা গরুর গুতো খেয়ে আহত হয়েছে ২ জন। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছে ১৪৩ জন। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন, মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ২৩ জন ও কোরবানির পশু জবাই করতে ছুরি-চাপাতি চালিয়ে বা গরুর গুতো খেয়ে ১ জন আহত হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ঈদের সময় সারাদেশ থেকেই রোগী আসছে। রোগীর চাপ প্রতিদিনই বাড়ে। এক হাজার শয্যার হাসপাতালে কোনো শয্যা খালি নেই। হাসপাতাল প্রতিটি ওয়ার্ড রোগীতে ঠাসা। প্রতিবার ঈদে রোগীর সংখ্যা যেন বেড়ে যায়। জরুরি বিভাগে চাপ সামলাতে ঈদের ছুটিতে প্রতি শিফটে চারজন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেছেন। আরও চারজন জরুরি বিভাগের অপারেশন থিয়েটারে দায়িত্ব পালন করেছেন। অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক, নার্সসহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. উপল সেনগুপ্ত যায়যায়দিনকে বলেন, 'হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোরবানির ঈদের আগের দুই দিন মোটর সাইকেল দুর্ঘটনার রোগী বেশি এসেছে। ঈদের দিন কোরবানির পশু জবাই দেওয়ার সময় ছুরি-চাপাতি চালাতে গিয়ে, আবার কেউ পশুর আঘাতে অহত রোগী এসেছে। ঈদের পরের দিন থেকে আবার মোটর সাইকেল ও সড়ক দুর্ঘটনার রোগী আসছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সড়ক দুর্ঘটনার রোগী ভোর সকালে বেশি আসে, ঈদের দিন সারাদিনই পশু জবাই দেওয়ার সময় ছুরি-চাপাতি আঘাতের রোগী বেশি এসেছে। এদেও মধ্যে যারা অল্প আঘাত বা আহত হয়েছেন তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। মোটর সাইকেল ও সড়ক দুর্ঘটনার গুরুতর রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।'
বৃহস্পতিবার সরেজমিন পঙ্গু হাসপাতালে কথা হয় ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা মহিব আকন্দের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'ভাগিনা সাকিব ঈদের পর দিন কুমিলস্না গিয়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে। সেখানেই দুর্ঘটনার শিকার হন। সকালে এখানে আনা হয়। এখন অবস্থা খুবই খারপ।' গাজীপুরের আরিফুল ইসলাম নামে একজন গুরুতর আহত রোগীর চিকিৎসা জরুরি ওয়ার্ডে দেওয়া হচ্ছে। তার স্বজন রফিকুল ইসলাম বলেন, 'সড়ক দুর্ঘটনায় এক সিএনজিতে ৫ জন আহত হয়। সবার অবস্থা খুবই খারাপ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছে। বাকি ২ জন গাজীপুরের একটা সরকারি হাসপাতালের আছে। আমাদের রোগীর অবস্থা খুবই নাজুক।'
ধানমন্ডি এলাকায় গরু কোরবানি দিতে গিয়ে আহত হন নিয়াজ আহমেদ। গরু শোয়ানোর সময় গরুর লাথি লাগে তার বাঁ পায়ে। নিয়াজের স্ত্রী বলেন, 'পা ভেঙে গেছে। চিকিৎসা চলছে। ভোগান্তি আছে। সেটা এখন বলে লাভ নাই।' মিরপুরের বাসিন্দা গণমাধ্যম কর্মী মজিবুর রহমান হাতের চিকিৎসা নিতে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তিনি বলেন, 'বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়ে আহত হয়েছি। হাত এক্সরে করতে বলছে চিকিৎসক। এক্সরে করে দেখলাম, সমস্যা তেমন কিছু হয়নি।'