কলকাতায় খুন হওয়া বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে কলকাতার পুলিশ। উদ্ধার করা দেহাংশের সঙ্গে ডিএনএ নমুনা মেলানোর জন্য স্বজনদের ভারতে যেতে বলা হয়েছে।
এমপি আনারের বক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ শুক্রবার বলেন, 'ডিএনএ পরীক্ষার জন্য এমপি সাহেবের মেয়ে ও স্বজনদের যেতে বলা হয়েছে। তারা ঢাকার ডিবির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। ডিবি থেকে আমাদের জানিয়েছে, রোববার ডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিদেশ যাত্রার প্রয়োজনীয় সরকারি আদেশের (জিও) জন্য আবেদন করবেন। এরপর কবে, কীভাবে যাব সে বিষয়টি ঠিক করা হবে।'
রউফ জানান, তিনি এবং এমপি আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন গত ২২ মে ভিসার জন্য ভারতীয় দূতাবাসে আবেদন করেন। গত ৩ জুন তারা ভারতের ভিসা পান।
এমপি আনারের এক ভাইও তাদের সঙ্গে কলকাতায় যাবেন। আগে থেকেই তার ভারতের ভিসা রয়েছে। একসঙ্গে যাওয়ার জন্য তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন।
গত ১১ মে চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে নিখোঁজ হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার। তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাস কলকাতায় জিডি করার পর দুই দেশে তদন্ত শুরু হয়।
এরপর ২২ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমপি আনারকে কলকাতার এক বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
পরে ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশের পুলিশ শিমুল ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমান নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু হত্যাকান্ডের 'হোতা' শাহীন নেপালের কাঠমান্ডু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় কলকাতার পুলিশ জিহাদ হাওলাদার নামে এক কসাইকে গ্রেপ্তার করেছে। আর শাহীনের সহকারী সিয়াম হোসেন কাঠমান্ডুতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে নেপালের পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে সিয়ামের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে নিয়ে ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার থানা এলাকার কৃষ্ণমাটিতে বাগজোলা খালে নামে কলকাতার সিআইডি। পরে একটি ঝোপের পাশ থেকে বেশ কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়।
কলকাতার সিআইডি পুলিশের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম লিখেছে, আনারকে খুনের পর নিউ টাউনের বাসা থেকে তার শরীরের টুকরো টুকরো করা মাংস ট্রলি সুটকেসে ভরে বাগজোলা খালে ফেলে দিয়েছিল সিয়াম। সঙ্গে ছিল এই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদার। খালে মাংস ফেলে আবার নিউ টাউনের বাসায় ফিরে যান সিয়াম।
এর আগে কলকাতার ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকেও মাংসের টুকরা উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেগুলো ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। পরে জানানো হয়, উদ্ধার করা মাংসের টুকরা ও হাড়গোড় পুরুষ মানুষের।
সেসব দেহাংশগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এখন এমপি আনারের রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দের সেখানে যেতে হবে।
এমপি আনারকে হত্যার ঘটনায় ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে একটি মামলা করেন তার মেয়ে ডরিন। সেই মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারি বিভাগ।
ওই মামলায় শিমুল ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমান ছাড়াও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা সবাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
সেই জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী তার বাল্যবন্ধু ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ঝিনাইদহের আখতারুজ্জামান শাহীন। আর হত্যাকান্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুলস্না ওরফে শিমুল। তানভীর ও সেলিস্টিও হত্যাকান্ডস্থলে উপস্থিত ছিলেন।