রোববার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
হার দিয়ে সুপার এইট শুরু বাংলাদেশের

টাইগারদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় অস্ট্রেলিয়ার সহজ জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ২২ জুন ২০২৪, ০০:০০
টাইগারদের ব্যাটিং ব্যর্থতায় অস্ট্রেলিয়ার সহজ জয়

হার দিয়ে টি২০ বিশ্বকাপের সুপার এইট পর্ব শুরু করল বাংলাদেশ। শুক্রবার সুপার এইটে গ্রম্নপ-১এ নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। ১৪০ রানের মামুলি পুঁজি দাঁড় করানোর পর দ্রম্নতই উইকেটের দরকার ছিল বাংলাদেশের। তবে সেটি পারেননি টাইগার বোলাররা। ওপেনিংয়ে হেড ও ওয়ার্নারের ৬৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায় বাংলাদেশ।

টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪০ রান করে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে ২৮ বলে সর্বোচ্চ ৪০ রান করেন তাওহিদ হৃদয়। বল হাতে এ ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স। জবাবে ১১.২ ওভারে ২ উইকেটে ১০০ রান করে অস্ট্রেলিয়া। এরপর বৃষ্টির কারণে তৃতীয়বারের মতো খেলা বন্ধ হয়। তখন বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে এগিয়ে ছিল অসিরা। এমন অবস্থায় আর খেলা মাঠে না গড়ালেও বৃষ্টি আইনে ম্যাচের ফল নির্ধারিত হয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের অ্যান্টিগায় স্যার ভিভিয়ান রিচাডর্স স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশকে প্রথমে ব্যাটিংয়ে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। ব্যাট হাতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলে অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হন বাংলাদেশ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। দলের রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন তানজিদ। চলতি বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচের একটিতেও বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি দুই অংকের কোটা স্পর্শ করতে পারেনি।

শুরুতেই উইকেট হারানোর পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার লিটন দাস ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দু'জনের জুটিতে পাওয়ার পেস্নতে ৩৯ রান পায় বাংলাদেশ। অষ্টম ওভারে বাংলাদেশের রান ও জুটিতে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়। পরের ওভারে স্পিনার এডাম জাম্পার বলে স্স্নগ সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর আউট হন ২টি চারে ২৫ বলে ১৬ রান করা লিটন। দ্বিতীয় উইকেটে শান্তর সঙ্গে ৪৮ বলে ৫৮ রান যোগ করেন লিটন।

লিটনের বিদায়ে পিঞ্চ হিটার হিসেবে চার নম্বরে নেমে ২ রানে আউট হন রিশাদ হোসেন। কিছুক্ষণ পর এ অবস্থায় উইকেটে সেট হয়ে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক শান্ত। জাম্পার বলে সুইপ করতে গিয়ে মিস টাইমিংয়ে লেগ বিফোর আউট হন তিনি। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৬ বলে ৪১ রান করেন শান্ত।

১৩তম ওভারে দলীয় ৮৪ রানে শান্তর বিদায়ের পর জুটি গড়ার চেষ্টায় বেশিদূর যেতে পারেননি তাওহিদ হৃদয় ও সাকিব আল হাসান। দলের রান ১শ' পার হওয়ার পর টি২০ এক নম্বর অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিসকে বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে আউট হন ১০ বলে ৮ রান করা সাকিব। ১৯ বলে ১৯ রানের জুটি গড়েছিলেন তারা। সাকিব ফেরার ওভারেই পরপর দুটি ছক্কা মারেন হৃদয়।

প্যাট কামিন্সের করা ১৮তম ওভারের শেষ দুই বলে মাহমুদউলস্নাহ ২ এবং জাকের আলীর পরিবর্তে খেলতে নামা মাহেদি হাসান শূন্যতে আউট হন। এতে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি হয় কামিন্সের। ২০তম ওভারের প্রথম বলে হৃদয়কে শিকার করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন ম্যাচসেরা নির্বাচিত হওয়া কামিন্স।

দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করলেন কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম বোলার হিসেবে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন পেসার ব্রেট লি। সেটিও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই। টি২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটি সপ্তম হ্যাটট্রিক।

২টি করে চার-ছক্কায় বাংলাদেশের পক্ষে ২৮ বলে ৪০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন হৃদয়। শেষদিকে তাসকিন আহমেদের ৭ বলে অপরাজিত ১৩ রানে ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪০ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার কামিন্স ২৯ রানে ৩টি, জাম্পা ২৪ রানে ২টি উইকেট নেন।

১৪১ রানের টার্গেট ছুড়ে দিয়ে দ্বিতীয় ওভারেই অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট তুলে নিতে পারত বাংলাদেশ। পেসার তানজিম হাসান সাকিবের করা ওভারের প্রথম বলে পয়েন্টে ওয়ার্নারের ক্যাচ ফেলেন হৃদয়। ৫ রানে জীবন পেয়ে সতীর্থ ট্রাভিস হেডকে নিয়ে ঝড় তোলেন ওয়ার্নার। পাওয়ার পেস্নতে ৫৯ রান যোগ করেন তারা। সপ্তম ওভারে নামে বৃষ্টি। প্রায় ৩০ মিনিট বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকার পর খেলা শুরু হলে প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২১ বলে ৩১ রান করা হেডকে বোল্ড করেন রিশাদ।

নিজের দ্বিতীয় ওভারে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মিচেল মার্শকে ১ রানে লেগ বিফোর আউট করে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন রিশাদ। ৪ রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অসিরা।

৬৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর তৃতীয় উইকেটে জুটি বেঁধে দ্রম্নত রান তুলতে থাকেন ওয়ার্নার ও ম্যাক্সওয়েল। ১৫ বলে ৩১ রান তুলে ফেলেন তারা।

১২তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে টি২০তে ২৮তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ওয়ার্নার। এরপর আবারও বৃষ্টি নামলে বন্ধ হয় খেলা। এ সময় অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিল ১১ দশমিক ২ ওভারে ২ উইকেটে ১০০ রান। এমন অবস্থায় বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে এগিয়ে ছিল অজিরা। এরপর বৃষ্টির মাত্রা আরও বেড়ে গেলে খেলা সম্ভব না হওয়ায় বৃষ্টি আইনে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া।

৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ওয়ার্নার ৩৫ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন। ১টি করে চার-ছক্কায় ৬ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাক্সওয়েল। বাংলাদেশের রিশাদ ২৩ রানে ২ উইকেট নেন।

আজ শনিবার সুপার এইটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪০/৮ (তানজিদ ০, লিটন ১৬, শান্ত ৪১, রিশাদ ২, হৃদয় ৪০, সাকিব ৮, মাহমুদউলস্নাহ ২, মেহেদি ০, তাসকিন ১৩*, তানজিম ৪*; স্টার্ক ১/২১, হেইজেলউড ০/২৫, কামিন্স ৩/২৯, জাম্পা ২/২৪, স্টয়নিস ১/২৪, ম্যাক্সওয়েল ১/১৪)।

অস্ট্রেলিয়া: ১১.২ ওভারে ১০০/২ (ওয়ার্নার ৫৩*, হেড ৩১, মার্শ ১, ম্যাক্সওয়েল ১৪*; মেহেদি ০/২২, তানজিম ০/৯, তাসকিন ০/২২, মুস্তাফিজ ০/২৩, রিশাদ ২/২৩)।

ফল: ডাকওয়ার্থ লুইস স্টার্ন পদ্ধতিতে অস্ট্রেলিয়া ২৮ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: প্যাট কামিন্স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে