সুপার এইটে আজ অজিদের সামনে টাইগাররা

প্রকাশ | ২১ জুন ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
২০০৭ সালে প্রথম আসরের পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার টি২০ বিশ্বকাপে সুপার এইটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল বাংলাদেশ দল। আজ শুক্রবার সকালে অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় দিয়ে টি২০ বিশ্বকাপের সুপার এইট পর্ব শুরু করতে চায় টাইগাররা। আর এই ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৬টায়। বাংলাদেশ ও অস্ট্রেয়িার মধ্যকার ম্যাচ ছাড়া রয়েছে আরও একটি খেলা। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। আজকের এই দু'টি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও টি স্পোর্টস। দ্বিতীয়বারে মতো টি২০ বিশ্বকাপে সুপার এইটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এরপর টি২০ বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশের ব্যর্থতার হতাশায় পুড়েছে ভক্তরা। এবারের আসরে কন্ডিশন পক্ষে থাকার কারণে দৃশ্যপট পাল্টে গিয়েছে। কন্ডিশনের সঙ্গে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশের বোলাররা। টাইগার বোলারদের অসাধারণ পারফরম্যান্সের কারণেই ব্যাটসম্যানদের অবদান ছাড়াই সুপার এইটে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ঘরের মতো কন্ডিশনে শ্রীলংকার বিপক্ষে জয় দিয়ে নবম টি২০ বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে মাত্র ৪ রানে হেরে যায় টাইগাররা। ভাগ্য সহায় হলে প্রোটিয়াদের বিপক্ষেও জিততে পারত শান্ত-সাকিবরা। গ্রম্নপ পর্বে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে হারিয়ে সুপার এইট নিশ্চিত করে টাইগাররা। সুপার এইটে মানসিক ও শারীরিক দৃঢ়তার পরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশকে- সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কন্ডিশন যদি একই হয়, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফেভারিটের তকমা নিয়েই খেলতে নামবে বাংলাদেশ। মন্থর উইকেটের কারণেই ২০২১ সালে ঘরের মাঠে পাঁচ ম্যাচের টি২০ সিরিজে অস্ট্রেলিয়াকে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল টাইগাররা। তারপরও বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত মনে করেন, যে কোনো সুযোগ কাজে লাগাতে হলে ব্যাটিং সমস্যার সমাধান করতে হবে। যদিও অফ-ফর্মে থাকা বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত বলেন, 'আশা করছি আমাদের বোলিং পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারব এবং পরের পর্বে আমাদের ব্যাটিং ভালো হবে। আমরা খুব বেশি রান করছি না। কিন্তু আমরা জানি দ্রম্নত কিছু উইকেট তুলে নিতে পারলে আমাদের রান ডিফেন্ড করতে পারব। টি২০তে মোমেন্টাম সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। এই রাউন্ডের জন্য আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে এবং পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগাতে হবে।' টি২০ ফরম্যাটে এখন অবধি ১০ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া। এরমধ্যে বাংলাদেশ ৪টিতে জিতেছে এবং ৬টিতে হেরেছে। টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাঁচবারের মোকাবিলায় সবগুলোতেই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। কন্ডিশন পক্ষে থাকায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় খড়া কাটানোর প্রত্যাশা করছে টাইগাররা। টি২০ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম জয়ের জন্য বোলারদের দুর্দান্ত ফর্মের উপর নির্ভর করছেন অধিনায়ক শান্ত, 'গত দুই-তিন বছরে সব বোলারই কঠোর পরিশ্রম করছেন। এই ফরম্যাটে বোলিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি তারা ফর্ম ধরে রাখবেন।' এদিকে আইপিএলে পাওয়া হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলেন মিচেল মার্শ। অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে বোলিং করতেও আর বাধা নেই অস্ট্রেলিয়া অধিনায়কের। বাংলাদেশের বিপক্ষে সুপার এইটের ম্যাচ থেকেই বোলিংয়ে ফিরতে প্রস্তুত তিনি। ম্যাচের আগের দিন সংবাদমাধ্যমে মার্শ নিজেই জানিয়েছেন এই খবর। তবে দলের গোছানো আক্রমণে তার আদৌ বোলিং করতে হবে কিনা সেটি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক নিজেও সন্দিহান। আইপিএলের শুরুর দিকে গত এপ্রিলে পাওয়া হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে যান মার্শ। চলতি টি২০ বিশ্বকাপ দিয়েই মাঠে ফেরেন তিনি। তবে প্রথম রাউন্ডে বোলিং করার অবস্থায় ছিলেন না ৩২ বছর বয়সি অলরাউন্ডার। সুপার এইট শুরুর আগেই মার্শ পেয়েছেন সুখবর। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে বোলিং করার সবুজ সংকেতও দেওয়া হয়েছে তাকে। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, 'আমি বোলিংয়ের জন্য তৈরি থাকব। তবে আমাদের যে লাইন-আপ, তাতে আমার মনে হয় না আমাকে বোলিং করতে হবে। তবে এই সংস্করণে বিকল্প থাকা খুবই জরুরি। আমরা ভাগ্যবান যে আমাদের অনেকগুলো বিকল্প আছে।' মার্শের বোলিং না করার দিনগুলোতেও বোলার সংকটে পড়তে হয়নি অস্ট্রেলিয়াকে। নিয়মিত বোলারদের সঙ্গে দলের প্রয়োজনে হাত ঘুরিয়ে অবদান রেখেছেন আরেক পেস অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিস। স্পিনে গেস্নন ম্যাক্সওয়েলও বোলিং করেছেন নিয়মিত। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে সুপার এইটের সম্ভাব্য কন্ডিশন মাথায় রেখে ১২ ওভার স্পিন করায় অস্ট্রেলিয়া। সেদিন বিশ্রামে ছিলেন জশ হ্যাজেলউড, প্যাট কামিন্সরা। এখন বাংলাদেশ ম্যাচের আগে নিজের বোলিংয়ে ফেরা তাদের পেস বিভাগকে আরও সমৃদ্ধ করবে মনে করেন মার্শ, 'শারীরিক দিক থেকে ভালো অনুভব করছি। বোলিং থেকে বিরতি পাওয়া সবসময়ই ভালো। আমি প্রায়ই এটি নিয়ে মজা করি। তবে আমি আর স্টয়নিস নিয়মিতই নিজেদেরকে অলরাউন্ডার হিসেবে ধরে কথা বলি। আমরা খেলায় সম্পৃক্ত থাকতে ভালোবাসি।' অস্ট্রেলিয়া দলে আছেন ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ, ট্রাভিস হেড, টিম ডেভিড, জশ ইংলিশ, গেস্নন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিসের মতো ব্যাটসম্যানরা। একইসঙ্গে এই দলে আছেন এডাম জাম্পা, অ্যাস্টন আগার, ক্যামেরন গ্রিন, মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজলউড, প্যাট কামিন্সের মতো বিশ্বসেরা পেসার ও স্পিনাররা। যারা কিনা একটি ম্যাচকে একাই ঘুরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ দলে আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাস ও মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদের মতো ব্যাটসম্যান থাকার পরও এই দলে আছেন পেসার তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান ও তানজিম হাসান সাকিব এবং রিশাদ হোসেনের মতো লেগ স্পিনার। তাইতো আজ অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে বাংলাদেশের পেসার ও স্পিনারদের দারুণ এক উপভোগ্য লড়াই দেখায় অপেক্ষায় আছে ক্রিকেট বিশ্ব।