এখনো ফাঁকা ঢাকা

রাজধানীতে ফিরছেন কর্মজীবীরা যানবাহন-সড়কে নেই চাপ

প্রকাশ | ২০ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
স্বজনদের সঙ্গে ঈদ পালন করে ফের রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবী মানুষ। ছবিটি বুধবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
ঈদের ছুটি শেষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। তবে যানবাহন ও সড়কে নেই অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ। মূলত কর্মজীবী মানুষ ফিরছে। এখনো তাদের পরিবার গ্রামেই রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। এদিকে সরকারি-বেসরকারি অফিস চালু হলেও পুরোদমে কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠেনি রাজধানী। ঈদুল আজহার ছুটিতে রাজধানী ছেড়েছিলেন এই মানুষ। এখন ফেরার পালা। যাদের বাড়তি ছুটি নেই, কাজে যোগ দেওয়ার তাড়া, মঙ্গলবার থেকেই ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন তারা। বুধবার যাদের অফিস খোলা ছিল, তারা মঙ্গলবারই পৌঁছেছেন ঢাকায়। এভাবেই ধাপে ধাপে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে ফিরবেন কর্মজীবী মানুষ। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই কর্মব্যস্ত মানুষের উপস্থিতিতে চিরচেনা রূপে ফিরবে রাজধানী ঢাকা। কেবল কর্মজীবী মানুষই ঢাকায় ফিরছেন এমনটা না। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীও ফিরছেন ঢাকায়। তাদেরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সময় হয়ে এসেছে। এদিকে টানা পাঁচ দিন ঈদের ছুটি শেষে বুধবার খুলেছে সরকারি ও বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে অফিস খুললেও এখনো পুরোপুরি কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠেনি। ফলে রাজধানীতে যেমন মানুষের চাপ নেই, তেমনই নেই যানবাহনের চাপও। এদিকে বুধবার দুপুরে এক পশলা বৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীতে বিরাজ করছে স্বস্তির পরিবেশ। নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়নি কোনো যানজট। গণপরিবহণে ওঠার জন্য নেই কোনো তাড়াহুড়ো। বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধানমন্ডির মিরপুর রোড, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান, কমলাপুরসহ বিভিন্ন সড়ক বুধবারও ছিল ফাঁকা ও কোলাহলমুক্ত। সড়কগুলো ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে ঢাকার সড়কগুলোয় যানবাহন ও যাত্রী উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। রাস্তায় কিছু বাস চললেও যাত্রী ছিল খুব কম। কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন, সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশা চলাচল করতে দেখা যায়। ধানমন্ডির ২৭ নম্বর এলাকা থেকে বাসে উঠে ২০ মিনিটে প্রেস ক্লাব পার হয়ে গুলিস্তানে পৌঁছেছেন এমন একজন যাত্রী জানান, ঈদের সময় ঢাকায় গাড়িতে চড়ে আরাম আছে। ফাঁকা রাস্তা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে না। বুধবার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সরেজমিন অবস্থান করে দেখা যায়, সকাল থেকেই স্টেশনে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়। একে একে স্টেশনে আসতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন। এ সময় কথা হয়, ফিরে আসা কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে। মূলত কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতেই তড়িঘড়ি করে ঢাকায় ফিরেছেন তারা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও ফিরছেন নিজেদের প্রয়োজনে। স্টেশন মাস্টার সাইফুল ইসলাম বলেন, সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কমিউটার ও আন্তঃনগর মিলিয়ে মোট ১১টির মতো ট্রেন ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। এগুলোর মধ্যে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা এক্সপ্রেস, ধূমকেতু এক্সপ্রেস, পর্যটক এক্সপ্রেস, ঢাকা মেইল, নীলসাগর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো এসেছে। একই সঙ্গে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্দেশে এখনো ২৪টি কমিউটার ও আন্তঃনগর ট্রেন ছেড়ে গেছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঈদ শেষে মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। মঙ্গলবারের চেয়ে বুধবার ফিরে আসা যাত্রীর সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। তরিকুল ইসলাম রানা বনলতা এক্সপ্রেসে ঢাকা এসেছেন রাজশাহী থেকে। তিনি বলেন, স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার থেকে আমার অফিস শুরু হবে, তাই আজকে ফিরে এসেছি। সময় মতো ট্রেন ছাড়া এবং সময় মতো পৌঁছানোর প্রশংসা করে তিনি বলেন, রাজশাহী থেকে ট্রেন ছাড়তে কোনো দেরি করেনি। কোথাও কোনো সমস্যাও হয়নি। আমরা সময় মতোই ঢাকায় এসেছি। খুবই ভালো লেগেছে। পঞ্চগড় থেকে ঢাকা ফিরেছেন হুমায়ূন কবির। তিনি বলেন, 'আমার নিজের ব্যবসা। তাই দেরিতে ফিরলেও সমস্যা হতো না। কিন্তু আসতে হয়েছে বাচ্চাদের স্কুলের জন্য। ওদের স্কুল খুলে যাবে তাই চলে এসেছি। লম্বা জার্নি করলে বাচ্চারা টায়ার্ড হয়ে যায়, তাই আগেভাগেই চলে এসেছি। স্কুল খোলার আগে ওরা কিছুটা রেস্ট নিতে পরেবে।' ইমরান নামে এক যাত্রী ঢাকায় ফিরেছেন বনলতা এক্সপ্রেসে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে অফিস শুরু হবে। তাই আজকে (বুধবার) আসতে হলো। তবে ফিরে এসে মনে হচ্ছে আরও দু-একদিন থাকতে পারলে ভালো হতো। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ। ঈদের ছুটিতে গিয়েছিলেন পঞ্চগড়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে। তিনি বলেন, আমার ভার্সিটি খুলবে রোববার, ছুটি আছে আরও তিনদিন। আজকে (বুধবার) না এলেও হতো। কিন্তু বন্ধের আগে কয়েকটা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে দিয়েছে। তাই আগে চলে এসেছি সেগুলো শেষ করতে। বন্ধুদের নিয়ে রমনা পার্কে ঘুরতে আসা মাহমুদ হাসান জানান, আমরা বাড্ডা থেকে কয়েক বন্ধু মোটর সাইকেলে ঘুরতে বের হয়েছি। ঈদের বন্ধে রাস্তায় গাড়ি কম থাকে, ঘুরতে ভালো লাগে। প্রতি ঈদে আমরা বন্ধুরা মিলে এভাবে মোটর সাইকেল নিয়ে বের হই। গাড়ির সংখ্যা কম হওয়ায় দ্রম্নত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারছি। একটু আগে বৃষ্টিও নামল। সব মিলিয়ে সুন্দর একটি পরিবেশ উপভোগ করছি। এদিকে, ফাঁকা শহরে অনেকে রিকশায় চেপে ঘুরতে বের হয়েছেন। রাজধানীর আজিমপুর এলাকা থেকে রিকশায় ঘুরতে বের হওয়া এক যাত্রী বলেন, ঈদে সবচেয়ে ভালো লাগে ঢাকার ফাঁকা রাস্তা। আমরা যারা সারাবছর ঢাকায় থাকি, তারা ঢাকার বাইরে না গেলে খুব একটা ফাঁকা রাস্তা চোখে পড়ে না। শুধু ঈদ এলে ঢাকার রাস্তায় স্বস্তি পাওয়া যায়। কোলাহলমুক্ত রাস্তায় পরিবার নিয়ে বের হয়েছি। বেশ ভালো লাগছে। রাস্তা ফাঁকা হলেও কিছুক্ষণ পরপর গণপরিবহণ চলতে দেখা যায়। ঈদুল আজহায় যে অল্পসংখ্যক মানুষ রাজধানীতে রয়ে গেছেন, তারা ঈদের ছুটিতে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাচ্ছেন, ঘুরতে বের হচ্ছেন। এ কারণে স্বল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়েই চলাচল করছে গণপরিবহণগুলো। গুলিস্তানমুখী 'সাভার পরিবহণ' বাসের হেলপার রমজান আলী বলেন, 'আমরা ঈদে বাড়ি যাইনি। তাই গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। তবে যাত্রী কম। গাড়ি চালিয়ে আরাম পাচ্ছি, ট্রিপ মারতে সময় কম লাগছে। দ্রম্নত পৌঁছে যাচ্ছি।'