শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১
স্বাভাবিক রূপে বর্ষা

বৃষ্টির পানিতে আমন রোপণে ব্যস্ত কৃষক

আলতাব হোসেন
  ২০ জুন ২০২৪, ০০:০০
বৃষ্টির পানিতে আমন রোপণে ব্যস্ত কৃষক

আষাঢ়ের শুরু থেকেই সারাদেশেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। ষড়ঋতুর পালা বদলে বর্ষা অনন্য, তার রূপের সৌন্দর্যে। বর্ষাকাল মানেই সবুজের ছোঁয়া। বর্ষায় প্রকৃতি সেজেছে নবযৌবনের রূপে। পুষ্পে-বৃক্ষ, পত্রপস্নববে নতুন প্রাণের সুর। প্রকৃতিতে চলছে নব উচ্ছ্বাসের জোয়ার। নদী-নালা খাল-বিল ফিরে পেয়েছে প্রাণের ছোঁয়া। অতিবৃষ্টিতে জলে থৈ থৈ করছে মাঠ-ঘাট। নতুন পানিতে মাছ ধরার ধুম পড়েছে। বর্ষার নবধারা জলের সঙ্গে সঙ্গে নেচে উঠছে প্রকৃতি। বর্ষায় প্রকৃতি রূপ-রঙে নতুন করে সেজেছে। নবীন প্রাণের ছন্দে বন বীথিকায় চোখে পড়ে বকুল, কদম, জারুল, জুঁই, পারুল, কৃষ্ণচূড়াসহ অসংখ্য ফুল। অতিবৃষ্টি কৃষকের জন্য তা সৌভাগ্য হিসেবে এসেছে। কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন কৃষক। তারা আমনের বীজতলা তৈরি করছেন। ক্ষেতেই আইল বাঁধাসহ চালচাষে তাদের দিন কেটে যাচ্ছে। ট্রাক্টর দিয়ে জমিতে হালচাষে আমন ধান রোপণের জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করছেন অনেকে।

কৃষি প্রধান বাংলাদেশের শস্য উৎপাদন-পঞ্জিকা বৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত। আমন ধান সম্পূর্ণভাবে বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। বর্ষার বৃষ্টির পানিতে মাছ ডিম ছাড়ে, আমন ও আউশ রোপণ করেন কৃষক। আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে বজ্রপাত শুরু হলে মাছ, ব্যাঙ ও সরীসৃপ প্রাণীদের প্রজনন শুরু হয়। দেশের প্রধান তিন নদী- পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রের

শাখা নদীগুলোতে মা মাছ এসে ডিম পাড়ে। আষাঢ়ের অঝোর ধারায় স্বস্তি ফিরেছে গ্রাম-বাংলায়। ক্ষেত-খামার হয়েছে চাষের উপযোগী। বৃষ্টির ছোঁয়ায় প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে প্রাণ। বোরো ধান কাটার পর পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে রোপা আমন চাষে কোমর বেঁধে মাঠে কাজ করছেন, কৃষক ও কৃষানীরা। তীব্র রোদ, তাপমাত্রা ও খরার কারণে অনেক কৃষকই আমন চাষ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আবার অনেকে সেচ পাম্প বসিয়ে আমন রোপণের চিন্তা করছিলেন। আমন মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিপাত হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন কৃষক।

এদিকে, গত কয়েক বছর অনাবৃষ্টির কারণে আমন ধান লাগাতে পারছিলেন না কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৯-২০২৩ সাল পর্যন্ত আমন মৌসুমে খরায় ফসলের ক্ষেতে ফাটল ধরে। কৃষকরা সেচ দিয়ে আমন রোপণ করেন। গত কয়েক বছর ধরে বৃষ্টির অভাবে নিলফামারী, বরেন্দ্র অঞ্চল, বগুড়া, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং মাগুরার কৃষকরা আমন চাষ নিয়ে ত্যাক্ত-বিরক্ত। বোরোর মতো সেচের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে আমন চাষও। এবার আষাঢ়ের শুরুতে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে আমন চাষে আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে কৃষকের। নেত্রকোনো জেলার দুর্গাপুরের বারমারি গ্রামের কৃষক সুরেন হাজং জানান, আমাদের এলাকায় আমন চাষ নিয়ে সবাই ব্যস্ত। বৃষ্টি নিয়মিত হলে আমনের বাম্পার ফলন হবে।

এ বিষয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞ সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, আষাঢ়ের শুরু থেকেই পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে। নয়া পানিতে খাল-বিল ভরে উঠেছে। অতিবৃষ্টিতে সুনামগঞ্জ, সিলেট, কলমাকান্দা, দুর্গাপুরসহ অনেক এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ঋতু পরিবর্তিত চিরায়ত ধারায় আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। এ সময় মৌসুমি বায়ু যে বিপুল বৃষ্টি নিয়ে আসে, তা এই অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বৃষ্টি পৃথিবীর এক পঞ্চমাংশ মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাবিত করে। সময়মত বৃষ্টি যেমন ফসল উৎপাদন বাড়ায়, তেমনি আবার অসময়ের অতিবর্ষণ ফসল ধ্বংস করে দেয়। তপ্ত মে ও জুন মাসে এক ফোটা বৃষ্টির দেখা মেলেনি। গত কয়েক বছর ধরে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর যতটুকু নিচে নেমে গিয়েছিল, এবারের পর্যাপ্ত বৃষ্টিতে তা পুষিয়ে যাবে।

আবহাওয়াবিদ আব্দুল কালাম জানান, টানা বৃষ্টি নাগরিক জীবনে কিছুটা ছন্দপতন হলেও স্বস্তি ফিরেছে গরমে। আর কৃষকের জন্য তা সৌভাগ্য হিসেবেই বর্ষিত হয়েছে। আষাঢ়ের অঝোর ধারায় বর্ষা ফিরেছে গ্রাম-বাংলায়। ক্ষেত-খামার হয়েছে হালচাষের উপযোগী। অনুকূল আবহাওয়া পেয়ে বর্ষার নবধারা জলে কৃষক আমন ধান রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোমড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন কৃষক। বৃষ্টিতে পাট ও আমনের সুদিন ফিরবে এবার। বর্ষার ছোঁয়ায় পুবালী বাতাসে জলে থৈ থৈ করছে। বৃষ্টির রিমঝিম ধ্বনিতে পেখম মেলছে ময়ুর।

ময়মনসিংহের ফুলপুরের কৃষক শরিফ মিয়া বলেন, আমন আবাদটা কৃষকের অনেক লাভজনক। তাই যেভাবেই হোক আমরা বৃষ্টিতে আমনের চারা রোপণ করছি। কারণ, এতে সেচ লাগে না, বৃষ্টির পানিই যথেষ্ট। এতে ফলনও ভালো পাওয়া যায়। বর্ষাকালের প্রথম দিকে বৃষ্টি হওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকদের মনে আশা জেগেছে। স্বস্তির বৃষ্টিতে পুরোদমে রোপা আমন ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। জমিতে চাষ, আগাছা পরিষ্কার, সার দেওয়াসহ নানা কাজে এখন পুরো ব্যস্ত তারা।

কৃষিবিদ ড. আফজাল হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানিতে আমন রোপনে কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এতে বজ্রপাতে কৃষষের মৃতু্য বেশি হচ্ছে। এই সময়টায় কৃষকদের জন্য মাঠে আশ্রয় নেওয়ার ব্যবস্থা করলে বজ্রপাতে মৃতু্য ঠেকানো সম্ভব। সারাদেশে মজিব কেলস্না নির্মাণ করলে মানুষ ও গরু ছাগল মৃতু্য থেকে রক্ষা পাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে