শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

ঈদুল আজহা উদযাপিত

যাযাদি রিপোর্ট
  ২০ জুন ২০২৪, ০০:০০
ঈদুল আজহা উদযাপিত

ত্যাগ-তিতিক্ষার মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে গত সোমবার ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে মুসলমান সম্প্রদায় তাদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করেছেন। মহান আলস্নাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ত্যাগের মহিমা হিসেবে মুসলমানরা হালাল পশু কোরবানি দিয়েছেন। কোরবানির পশুর মাংস বিলিয়েছেন ফকির, মিসকিন ও দরিদ্র মানুষ এবং প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের মাঝে। এর আগে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানসহ দেশের প্রতিটি মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন মুসলিস্নরা।

নামাজ শেষে মুসলিস্নদের অনেকেই কবরস্থানে ছুটে যান। স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রম্নসজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আলস্নাহর দরবারে আকুতি জানান।

ঈদুল-আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রধান ঈদ জামাতে অংশ নেন। এই জামাতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।

ভোর থেকেই প্রধান জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য মুসলিস্নদের ঢল নামে। সকাল সাড়ে ৭টার আগেই জাতীয় ঈদগা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জাতীয় ঈদগাহে প্রধান

জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন। দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ শেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির শান্তি সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করা হয়। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য এই জামাতে মুসলিস্নরা দোয়া করেন। এরপর রাষ্ট্রপতি সকলের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে বঙ্গভবনের ক্রিডেনশিয়াল হলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও তার স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা। রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্য এবং বঙ্গভবনের সংশ্লিষ্ট সচিবরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি মন্ত্রিসভার সদস্য, সিনিয়র রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিচারক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কবি, লেখক, শিক্ষক এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঈদুল আজহা উপলক্ষে দলীয় নেতাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন শেখ হাসিনা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ দলের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

এরপর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ ও ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ঈদগাহ ময়দান কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদুল আজহার ১৯৭তম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল নয়টায়। ঈদ জামাতে লক্ষাধিক মুসলিস্ন অংশ নেন। জামাতে ইমামতি করেন জেলা মারকাজ মসজিদের খতিব মাওলানা হিফজুর রহমান খান। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।

প্রতি বছরের মতো এবারও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হয়। শেষ জামাত হয় বেলা পৌনে ১১টায়।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযোগ্য গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে। দেশের সকল হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে।

পবিত্র হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রতিবছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে বিশ্ব মুসলিম প্রত্যেকে সাধ্য ও পছন্দ অনুযায়ী পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন এবং নামাজ আদায় করেন। আরবি আজহা এবং কোরবান উভয় শব্দের অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ। কোরবানি শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে- আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, নিজেকে বিসর্জন, নৈকট্য লাভের চেষ্টা ও অতিশয় নিকটবর্তী হওয়া ইত্যাদি। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আদি পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে আলস্নাহর নির্দেশে তার প্রিয় শিশুপুত্র হজরত ইসমাঈলকে (আ.) মহান আলস্নাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে কোরবানি দেয়ার উদ্যোগ নিয়ে ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। ত্যাগের সেই দৃষ্টান্ত অনুকরণ করেই সমগ্র বিশ্বে মুসলমানরা কোরবানির ঈদ পালন করে থাকেন।

কোরবানির ঈদ নামে পরিচিত ঈদুল আজহার অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে, মনের পশু কু-প্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করা এবং আলস্নাহর সন্তুষ্টি অর্জন। পবিত্র কোরআন শরিফের সূরা হজে আলস্নাহ বলেন, আমার কাছে পশুর রক্ত, মাংস, হাড় পৌঁছে না, পৌঁছে তোমাদের অন্তরের তাকওয়া অর্থাৎ খোদাভীতি। আলস্নাহর বান্দারা কে কতটুকু আত্মত্যাগ ও খোদাভীতির পরিচয় দেন এবং আলস্নাহর নির্দেশ পালন করেন তিনি তা-ই প্রত্যক্ষ করেন।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অনেককে গরিব ও দুস্থদের মধ্যে কোরবানির মাংস বিতরণ করতে দেখা গেছে। দুপুরের পর থেকেই রাজধানীবাসীকে নতুন পোশাক বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র ও আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধরের বাড়িতে বেড়াতে বের হয়। যানজটমুক্ত রাজধানী এক অচেনা শহরে রূপ নিয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে