কোরবানির প্রতিটি গরুর কাঁচা চামড়ার দাম সরকার গতবারের তুলনায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়ালেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি। এবারও নির্ধারিত দরের চেয়ে গরুর চামড়া ২৭৫-৩০০ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া দর অনুযায়ী মাঝারি সাইজের গরুর চামড়ার আনুমানিক মূল্য ১ হাজার ৭৫ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকায় আড়াতদাররা তা কিনেছেন সর্বোচ্চ ৮০০ টাকায়।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে বড় আকারের কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায়। মাঝারি ও ছোট আকারের গরুর চামড়ার দাম ছিল ৪০০-৬০০ টাকা। আর একেকটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ টাকায়।
মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, কাঁচা চামড়ার বাজার দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি। সরকার লোক দেখানো নানা উদ্যোগ নিলেও তা কার্যকর করতে পারেনি। এ কারণে গত কয়েক বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে ন্যায্য দাম পাননি তারা।
মাদ্রাসা ও এতিমখানাসহ যেসব দাতব্য প্রতিষ্ঠান কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকায় সারা বছর চলে তাদের অবস্থা আরও করুন। গরুর কাঁচা চামড়ার কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় এ ধরনের অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের অভিযোগ, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মাদ্রাসা-এতিমখানা বন্ধ করে দেওয়ার টার্গেট নিয়ে বাজার সিন্ডিকেট এভাবে কৌশলে কাঁচা চামড়া কম দামে কিনে নিচ্ছে। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
এদিকে, বাজার পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, সিন্ডিকেটের কারসাজিতে কাঁচা চামড়া যেভাবে নামমাত্র মূল্যে কেনা হচ্ছে, তাতে কোরবানির পশুর চামড়ার একটি বড় অংশ প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের ভাষ্য, পাচার রোধে সরকার সীমান্ত নজরদারি জোরদার করলেও বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার কোনো কৌশলী উদ্যোগ নেয়নি। তাই পাচার রোধের ছক কতটা কার্যকর করা সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
গত ৩ জুন চামড়া খাতের একাধিক বাণিজ্য সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে কোরবানির পশুর চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৫০-৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০-২৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সাধারণত বড় আকারের গরুর চামড়া ৩১-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২১-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ঢাকায় মাঝারি আকারের গরুর ২৫ বর্গফুটের একটি লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৩৭৫ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এই হিসাব থেকে লবণ, মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাবদ গড়ে ৩০০ টাকা বাদ দিলে ওই চামড়ার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৫ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।
পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যতম বড় জায়গা। সেখানে গত সোমবার বিকালে বড় ও মাঝারি আকারের গরুর কাঁচা চামড়া সর্বোচ্চ ৮০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে বড় ও মাঝারি আকারের চামড়া ৭০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। হাজারীবাগ এলাকায়ও একই দরে চামড়া বিক্রি হতে দেখা গেছে।
পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খানের দাবি, নির্ধারিত দরে চামড়া কেনা হয়েছে। সিন্ডিকেটের কারসাজির কোনো সুযোগ নেই। কারণ, বাজারে আড়তদার, ব্যাপারী, ট্যানারি মালিক ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন। অর্থাৎ প্রতিযোগিতা বেশি। ফলে একজন কম দাম বললে বিক্রেতারা
আরেকজনের কাছে চলে যাবে। তবে কাঁচা চামড়া যেহেতু অন্তত ১০ শতাংশ নষ্ট হয়, তাই কেনার সময় এটি সমন্বয় করা হচ্ছে।
তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তার এ বক্তব্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। তাদের ভাষ্য, গত কয়েক বছরের মত এবারও সরকারের বেঁধে দেওযা দরে কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়নি। শুধু তাই নয়, আড়তদার সিন্ডিকেটের কারণে কোরবানিদাতারা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের অর্ধেকও পাননি। বাধ্য হয়ে অনেকে স্থানীয় মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকজনকে বিনা পয়সায় কোরবানির পশুর চামড়া দি?য়ে দিয়েছেন। আবার কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কমে চামড়া কেনার পরও লোকসান গুনেছেন। আড়তদাররা তাদের ইচ্ছেমতো দামে চামড়া কিনেছেন খুচরা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।
লালবাগের পোস্তায় এক লাখ টাকা দামের একটি গরুর কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। আর দেড় লাখ টাকা দামের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫৫০ টাকায়, যা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চে?য়ে চার থে?কে পাঁচগুণ কম।
তবে আড়তদাররা বলছেন, কিছু আনাড়ি মৌসুমি ব্যবসায়ী লোকসান গুনলেও বেশিরভাগ লোক কাঁচা চামড়া বিক্রি করে লাভ করেছেন। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির মালিক মো. সাখাওয়াত উলস্নাহ বলেন, সার্বিকভাবে এবার কাঁচা চামড়া কেনাবেচা ভালো হয়েছে। বেশিরভাগ মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কিনে লাভবান হয়েছেন। লবণের দাম তুলনামূলক এবার কম ছিল, এ কারণে সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও ভালো হয়েছে। তবে যেসব মৌসুমি ব্যবসায়ী লবণ না লাগিয়ে অতিরিক্ত দামের আশায় এক আড়ত থেকে আরেক আড়ত ঘুরেছেন, সকালের চামড়া বিকালে বিক্রি করতে গেছেন, কেবল তারাই লোকসানে পড়েছেন।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, 'কাঁচা চামড়া কেনার পর তার পেছনে আমাদের যে খরচ হয় সেটা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জানার কথা। কিন্তু তারপরও তারা কম দামে কেনার অভিযোগ করেন। সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা বলেন।' এ ধরনের অভিযোগ তোলার কোনো যুক্তি নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে তারা নিজেদের পক্ষে সাফাই গাইলেও কাঁচা চামড়ার বাজারে সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা জানিয়েছেন খোদ সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তারা চামড়া পাচার রোধ ও সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে কোরবানির ঈদের আগ থেকেই গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর কথা জানান। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কাঁচা চামড়ার দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হলে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং লবণের সিন্ডিকেট ও অধিক দামে বিক্রির বিষয়গুলোও তারা মনিটরিং করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।
এদিকে, চামড়া পাচার প্রতিরোধে সীমান্ত অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। কাঁচা চামড়া যাতে সীমান্ত অভিমুখে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়। পাশাপাশি কোরবানির পশুর চামড়ার বাজার পর্যবেক্ষণে মনিটরিং সেলসহ ৫টি তদারকি কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এসব কমিটি চামড়া সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহণসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনায় তদারকি করার কথা।
তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও মাঠপর্যায়ে তাদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। এমনকি সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধে কৌশলি কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি, যা এ চক্রকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকার মৌসুমি ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের বলেন, 'সরকার না চাইলে এ ব্যবসা টিকবে না। যে কোনো ব্যবসার মূল জিনিস হলো কাঁচামাল। এখানে যারা চামড়া আনছে, তারা দাম পাচ্ছে না। সরকারকে শুধু দাম নির্ধারণ করে দিলে হবে না। তদারকিও করতে হবে। ট্যানারিগুলো সরকারের কথা শুনে না। এরপরও সরকার তাদের সঙ্গে কথা বলে। এভাবে হলে এই ব্যবসা টিকবে না।'
এদিকে সরকারি কোনো নির্দেশনাই যে কেউ মানেনি এবং তা মানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনেরও যে ব্যাপক গাফিলতি ছিল তার প্রমাণ মেলে সোমবার। এদিন রাত ১০টার পর সরকারি নির্দেশনা ভেঙে দূর-দূরান্তের জেলা থেকে পুরান ঢাকার পোস্তায় ঢুকে পড়ে কাঁচা চামড়াভর্তি ৫০-৬০টি ট্রাক। তারা নির্ধারিত মূল্যের কয়েক গুণ কম দামে চামড়া বেচে দিয়ে বড় লোকসানের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করেন।
এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত থাকলেও এসব ট্রাক ঢুকেছে নির্দেশনা অমান্য করেই। তারা পথে কোনো বাধা পায়নি। বিষয়টি শিল্প সচিব ও বাণিজ্য সচিবকে জানানো হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
আমাদের রংপুর প্রতিনিধি আবেদুল হাফিজ জানান, মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের অর্ধেকেও লবণযুক্ত চামড়ার বিক্রি করতে পারেননি। ঢাকার বাইরে গরুর চামড়া ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও রংপুরে কেনাবেচা হয়েছে ২৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকায়।
মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রংপুর নগরীর শাপলা চত্বর টার্মিনাল রোডের চামড়াপট্টি এলাকার ব্যবসায়ীরাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে এবারও পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। গরুর চামড়ায় দাম কিছুটা মিললেও ছাগলের চামড়া বিনামূল্যে দিতে হয়েছে।
তবে চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের দাবি, ঢাকায় সিন্ডিকেট থাকলেও রংপুরে নেই। মূলত পুঁজি সংকটসহ লবণের দাম বৃদ্ধি ও বিভিন্ন কারণে সরকার নির্ধারিত দামে তারা চামড়া কিনতে পারেননি। বড় ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজারে লবণের দাম বেশি। এর ওপর শ্রমিকের মজুরির কারণে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি।
টাঙ্গাইলের স্টাফ রিপোর্টার জোবায়েদ মলিস্নক বুলবুল জানান, সেখানকার কোরবানিদাতারা লাখ টাকায় কেনা পশুর চামড়া ফড়িয়া বা মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মাত্র ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা দাম দিতে চেয়েছেন। তাই তা বিক্রি না করে মাদ্রাসা, মসজিদ বা এতিমখানায় বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন। জেলার সবচেয়ে বড় চামড়ার হাট পাকুটিয়ায় চামড়ার ক্রেতার দেখা মেলেনি। বুধবার (১৯ জুন) কোরবানির পর প্রথম হাটে দু-একজন ক্রেতা এলেও দাম দিচ্ছেন সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও কম।
কয়েকজন চামড়া বিক্রেতা জানান, এক সময় পাকুটিয়ার চামড়ার হাট সপ্তাহে বুধ ও রোববার বসত। এখন চামড়ার বাজার নেই- তাই বুধবারে হাট জমে না, রোববারে ক্রেতারা এলে কিছুটা জমে ওঠে। কোরবানির পর বুধবারের হাটটি ছিল প্রথম। তাই তারা কাঁচা চামড়া নিয়ে এসেছিলেন। ক্রেতা না থাকায় ফেরত নিয়ে যাচ্ছেন- বাড়িতে গিয়ে লবণ মেখে ডাবর (স্তপূ) দিয়ে রাখবেন।
স্থানীয় আড়তদাররা জানায়, বলস্না এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীদের ২৫-৩০ কোটি টাকা ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাকি পড়ে রয়েছে। ট্যানারি মালিকরা ঈদের আগে দিতে চেয়ে বছরের পর বছর ঘোরাচ্ছেন। তারাও ফড়িয়া বা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাকিতে চামড়া কিনে ট্যানারিতে সাপস্নাই দিয়েছিলেন। ট্যানারি মালিকরা টাকা না দিলেও কেউ কেউ জমি-বাড়ি বিক্রি করে ফড়িয়া বা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের টাকা পরিশোধ করে ব্যবসা গুটিয়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি মো. রজব আলী জানান, সেখানকার কোরবানির পশুর চামড়ার বাজারে এবার বড় ধস নেমেছে। সরকার নির্ধারিত দামে কোথাও চামড়া বেচাকেনা হয়নি। দেড় লাখ টাকা দামের এঁড়ে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকায় এবং এক লাখ টাকা দামের এঁড়ে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকা দামে। এ ছাড়া গাভীর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দামে। রাজারামপুর কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু জানান, তিনি এক লাখ টাকা দামের এঁড়ে গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৫০০ টাকা দামে।
সেখানকার চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে অনেক খরচ বেড়ে গেছে লবণ ও শ্রমিকের দাম বৃদ্ধির কারণে। তাই সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া কিনছে না চামড়ার মহাজনরা। আর এ কারণে তারাও সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কিনতে পারছে না।
পূর্বধলা (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি মো. জায়েজুল ইসলাম জানান, সেখানে মাঠ পর্যায়ে কোরবানির পশুর চামড়ার কোনো ক্রেতা না থাকায় বিনামূল্যে চামড়া দিয়ে দিয়েছেন কোরবানিদাতারা। এতে চামড়া বিক্রির টাকার হক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সমাজের অসহায় ও দুস্থরা।
ঈদের দিন বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ে কোনো চামড়া ক্রেতা ছিল না বললেই চলে। আর ক্রেতা না থাকায় এসব চামড়া মাদ্রাসায় দান করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলার বিশাকুনী ইউনিয়নের ধলা গ্রামের কোরবানিদাতা মো. আসাদুজ্জামান জানান, চামড়ার ক্রেতা না থাকায় চামড়া ফ্রিতে মাদ্রাসায় দিয়ে দিয়েছি। কোনাডহর গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি ১ লাখ ৩২ হাজার টাকার মূল্যের ষাঁড়ের চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৪০০ টাকায়। উপজেলার হোগলা ইউনিয়নের ভরাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা মো. ফারুক হোসেন ফকির জানান, তাদের সমাজে ১৫টি গরু কোরবানি হয়। ক্রেতা না থাকায় চামড়াগুলো একত্রিত করে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে গাভীর চামড়া ১৫০ টাকা দরে ও ষাঁড়ের চামড়া ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করে টাকা মাদ্রাসায় দিয়ে দিয়েছেন।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি আবু-বিন-আজাদ জানান, এবারের ঈদুল আজহায় সেখানে পশু কোরবানি কম হয়েছে। আগে যারা একা একটি গরু কোরবানি দিতেন তারা এবার ৫-৭ ভাগে কোরবানি দিয়েছেন। তাই, এবারে গরু-ছাগলের চামড়ার আমদানি ও চামড়ার মূল্যও কম ছিল। ঈদের দিন সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সৈয়দপুর (বঙ্গবন্ধু চত্বর এলাকা) শহরের পাঁচমাথা মোড় ও বিমানবন্দর সড়ক মোড়, দিনাজপুর সড়ক মোড়ের পয়েন্টগুলোয় যেখানে আগে উলেস্নখযোগ্যসংখ্যক চামড়া ব্যবসায়ীরা চেয়ার-বেঞ্চি বসিয়ে চামড়া কিনতেন এবার তার তুলনায় অল্প কয়েকজনকে চামড়া কিনতে দেখা গেছে।
সরকার চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও কোনো ব্যবসায়ীই তা মানেননি। দুই/আড়াই লাখ টাকার গরুর চামড়া ৭ থেকে ৮শ' টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এক-দেড়লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৪শ' থেকে সাড়ে ৬শ' টাকায়। লাখ টাকার নিচের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে আড়াইশ' থেকে ৩শ' টাকায়। ছাগলের চামড়া কোনো ব্যবসায়ী না কেনায় বিক্রেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে তা শহরের সড়কেই ফেলে দেন।