টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি জেলা। এর মধ্যে রয়েছে সিলেট, সুনামগঞ্জ, কুড়িগ্রাম ও মৌলভীবাজার। বিশেষ করে সিলেট এখন দ্বিতীয় দফার বন্যায়কবলিত। এ জেলার শহরের রাস্তা-ঘাট হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে। এ ছাড়া বেশকিছু উপজেলা পস্নাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে গেছে সড়ক ও ফসলিজমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। পাশাপাশি গৃহপালিত পশু নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন, দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান। অন্যদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় জরুরি নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
সিলেট অফিস জানায়, দ্বিতীয় দফা বন্যায় মহানগর ও জেলাজুড়ে প্রায় ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে মহানগরে ২১টি ওয়ার্ডের অর্ধলাখ মানুষ বন্যাকবলিত। বুধবার জেলা প্রশাসনের দেওয়া সর্বশেষ তথ্য এটি।
২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে সিলেট। গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন ফের কবলিত হয় সিলেট।
ঈদের দিন (১৭ জুন-সোমবার) ভোররাত থেকে সিলেটে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। সঙ্গে নামে পাহাড়ি ঢল। সকাল হতে না হতেই তলিয়ে যায় মহানগরের অনেক এলাকা। জেলার বিভিন্ন স্থানেও অবনতি হয় বন্যা পরিস্থিতির। সোমবার বিকালে বৃষ্টি থামলে ধীরে ধীরে কিছুটা কমে পানি। কিন্তু মঙ্গলবার ভোররাত থেকে ফের শুরু হয় বৃষ্টি। উজানেও
বৃষ্টিপাত হয় প্রচুর। ফলে হু হু করে বাড়তে সিলেটের সব নদনদীর পানি। বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৩টি নদীর পানি ৬ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এ সময় পর্যন্ত মহানগরের ২১টি ওয়ার্ড ও জেলার ১ হাজার ৩২৩টি গ্রাম পস্নাবিত হয়ে পড়েছে। এতে ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৭ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত। এর মধ্যে সিলেট মহানগরে অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি।
জেলা ও মহানগর মিলিয়ে ৬২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭ হাজার ২৮৫ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে, বেশিরভাগ মানুষজন নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক নন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন পাড়া-প্রতিবেশীদের উঁচু বাসাবাড়ি বা আত্মীয়স্বজনের ঘরে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র বুধবার সকাল ৯টায় জানিয়েছে, এ সময় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বইছে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯২ ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি বইছে।
এ ছাড়া সারি-গোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ০.৯ সে.মি সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া, মেজরটিলা ও দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই, বরইকান্দি, আলমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেকের বাসাবাড়িতে গলা পর্যন্ত পানি। বাদ যায়নি তালতলা ফায়ার সার্ভিসের অফিস।
এদিকে, এমন পরিস্থিতিতে সিলেটের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় জরুরি নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
বুধবার সচিবালয়ে ঈদপরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় ও বন্যাকবলিত এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, দেশের কয়েক জায়গায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় ডায়রিয়া এবং পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে পর্যাপ্ত স্যালাইন ও ওষুধ মজুত রাখতে হবে।
একই সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে, বন্যার সময় এবং বন্যা পরবর্তী রোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন তিনি।
সিলেট অফিস আরও জানায়, নগরীর বিভিন্ন বন্যাকবলিত কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এমপি। বুধবার নগরীর মিরাবাজার কিশোরী মোহন বালক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করেন তিনি।
সিলেট নগরীর বন্যা পরিস্থিতি দেখে তাৎক্ষণিক নগদ ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেন প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এমপি।
এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি দুর্যোগ প্রবণ এলাকা। এর মধ্যে সিলেট অঞ্চল অন্যতম। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি প্রধানমন্ত্রী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং প্রতিনিয়ত তিনি এর খোঁজ খবর রাখছেন।
তিনি আরও বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আমাদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ রাখছেন। ঈদের দিন আমাকে ফোন করে বন্যার খবর জানান। পানিবন্দি ত্রাণ সাহায্যের তিনি অনুরোধ জানান দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টাকা, ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করি।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার পর থেকে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যার খবর রাখছেন। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবারের পাশাপাশি রান্না করা খাবার বিতরণ করছে সিটি কর্পোরেশন। পানি না কমা পর্যন্ত আমাদের ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
এ সময় সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ও সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল ইসলাম, সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী, এনডিসি, সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ও বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছিলেন।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলা সদরের কাজির পয়েন্ট, উকিলপাড়া, ষোলোঘর পয়েন্ট, তেঘরিয়াঘাট, ষোলোঘর পয়েন্ট, নবীনগর, সুলতানপুর এলাকা বন্যায় পস্নাবিত হয়েছে। অনেক বাসাবাড়িতে ঢুকছে বানের পানি। বন্যার্তরা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন।
পাউবো জানায়, জেলার প্রধান নদী সুরমার পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার এবং ছাতক পয়েন্টে ১৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১০০ মিলিমিটার।
এদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। অনেক বাড়ির আঙিনা পানিতে নিমজ্জিত। ছাতক-সিলেট সড়কের মুক্তিরগাঁও অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়া বিঘ্নিত হচ্ছে সড়ক যোগাযোগ।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, প্রতিদিনই নতুন নতুন গ্রাম পস্নাবিত হচ্ছে। চার থেকে পাঁচ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে তাহিরপুর সুনামগঞ্জ সড়কসহ উপজেলা বিভিন্ন ইউনিয়নের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে যাদুকাটা নদীর তীরবর্তী অর্ধশতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গ্রাম। বন্যা পরিস্থিতি অবনতি দেখে ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নে ৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে হচ্ছে নৌকায়।
ইতোমধ্যে যেসব গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বালিজুরী, বড়খলা, মেঞ্জারগাঁও, আনোয়ারপুর, লোহাচুড়া, তিওরজালাল, পাতারী, দক্ষিণকুল, পিরিজপুর, মাহতাবপুর, চিকসা, রসুলপুর, ঠাকাঠুকিয়া, জামালগড়, লক্ষ্ণীপুর, পাতারগাঁও, ইসলামপুর, ধরুন্দ, হোসেনপুরসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভিন বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যার কারণে ইতোমধ্যে বন্যাশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ধর্মপাশা-মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, তাহিরপুর থেকে জেলা শহরে যেতে শক্তিয়ারখলা নামক সড়কটি ডুবে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর, দিরাই, জগন্নাথপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর উপজেলার অধিকাংশ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব উপজেলার গ্রামের মানুষজন পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে রয়েছেন। গত দুইদিন ধরে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিদু্যৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে পাহাড়ি ঢলে জেলার দোয়ারাবাজার, ছাতক ও তাহিরপুর এবং ধর্মপাশা, মধ্যনগর এলাকার বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তাঘাট ঢলের তোড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রীও রয়েছে। অতিরিক্ত ত্রাণসামগ্রীর জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করছি।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে মৌলভীবাজারের নদ-নদীর পানি বাড়ায় চার উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসন থেকে বন্যাকবলিত এলাকার উঁচু স্থানের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছে।
মৌলভীবাজার পাউবো জানায়, জেলার সবক'টি নদীতে উজানে বৃষ্টি হওয়ায় নদীগুলো পানিতে টইটুম্বর। বাড়ছে মনু, ধলাই, কুশিয়ারা, জুড়ি, কন্টিনালা ও ফানাই নদীর পানি। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ধলই বিপৎসীমার সমান্তরালে অতিবাহিত হলেও বাকি সবক'টি নদী বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম বলেন, 'ক্রমাগত বর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌলভীবাজার জেলার কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট পস্নাবিত হয়েছে।
তার মধ্যে বড়লেখা উপজেলার চারটি, জুড়ি উপজেলার তিনটি, কুলাউড়া উপজেলার তিনটি, সদর উপজেলার চারটি এবং রাজনগর উপজেলার দু'টি ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিয়েছে।
ক্রমবর্ধমান পানি বৃদ্ধির ফলে উলিস্নখিত উপজেলায় সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে জুড়ি, বড়লেখা এবং কুলাউড়া উপজেলায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ভুক্তভোগী মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, জেলার বড়লেখা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২৫২ গ্রামের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ ডুবে গেছে। এতে প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে বুধবার সকাল থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত অব্যাহত বৃষ্টি ঝরেছে। এতে খারাপের দিকে যাচ্ছে এই অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২২টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ঘরে টিকতে না পেরে বুধবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২২০টি পরিবারের ৬০০ মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবার ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। যদিও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বলে বন্যার্ত লোকজন জানিয়েছেন।
বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজরাতুন নাঈম বুধবার বিকালে জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২৫২টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরমধ্যে ২০টি আশ্রয় কেন্দ্রে ২২০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারের মাঝে খাবারের পাশাপাশি শুকনো খাবার ও স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বড়লেখা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ঢলের পানিতে ১৭৪ হেক্টর আউশ ধান এবং ৭ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি নিমজ্জিত রয়েছে। পানি আরও বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।
বড়লেখা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান বলেন, আমরা বন্যার্ত পরিবারের জন্য ঊর্ধ্বতনের কর্তৃপক্ষের কাছে শুকনা খাবারের চাহিদা পাঠিয়েছি। খাবার পাওয়া গেলে তা দুর্গত পরিবারগুলোর মাঝে বিতরণ করা হবে।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হাকালুকিসহ প্রতিটি হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পৌরসভাসহ উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পস্নাবিত হয়েছে। এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে আছেন। ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ। বিভিন্ন বাসাবাড়ির লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে উঠেছেন। এছাড়াও উপজেলার প্রায় ৭০০ হেক্টর জমির আউশধান ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
সূত্রে জানা গেছে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২৭টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্র্রে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে টিলাধসে পড়ার আশঙ্কায় পাহাড়ের পাদদেশ ঝুঁকি নিয়ে বসবসাকারী পরিবারকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।
এদিকে পানিবন্দি মানুষদের খোঁজখবর নিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার বিকাল পর্যন্ত হাকালুকি হাওড় তীরবর্তী ভূকশিমইল, জয়চন্ডী, কাদিপুর, বরমচাল ও ভাটেরা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন মৌলভীবাজার-২ কুলাউড়া আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল এবং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান সাহেদ। এ সময় তারা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রিত লোকজনের খোঁজখবর নেন এবং তাদের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করেন।
কুলাউড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শিমুল আলী বলেন, কুলাউড়ায় এখন পর্যন্ত ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। বুধবার বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের মাঝে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন জানান, বন্যায় কুলাউড়া উপজেলায় ৪৮০ হেক্টর আউশ ধান এবং ১৬৫ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি নিমজ্জিত রয়েছে। পানি আরও বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে বলেও জানান তিনি।
কুলাউড়া সংসদীয় আসনের এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল জানান, গত দুই দিন থেকে তিনি উপজেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রিত পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি দেওয়া হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, জেলার অভ্যন্তরে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার ও তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারীও রাজারহাট উপজেলার নদ-নদী তীরবর্তী চর-দ্বীপচর ও নিম্নাঞ্চলের কিছু ঘরবাড়ি, গ্রামীণ কাঁচা সড়ক ও মৌসুমি ফসলের ক্ষেত।
রংপুর প্রতিনিধি জানান, তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার প্রায় ২০ সিন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এ ছাড়া ব্রক্ষ্ণপুত্রসহ প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। রংপুরের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবো জানিয়েছে, পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা অববাহিকার বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোর অনেকে তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। বেশ কিছু চরাঞ্চলের বাড়িঘরের চারপাশে পানি ঢুকে পড়েছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ জনপদ। ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে ওইসব এলাকার সবজিক্ষেত। নদীভাঙন এলাকার দিনমজুর পরিবারের কেউ কেউ না খেয়ে দিনযাপন করছে। জরুরিভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানায়, রংপুর জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর অঞ্চলে ২২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কাউনিয়া পয়েন্টে শূন্য দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেলা ১২টা পর্যন্ত আরো বেশি ছিল। কাউনিয়া পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়ে থাকে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। বুধবার বিকাল ৩টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার। সকাল ৬টায় যা রেকর্ড করা হয়েছিল ৫১ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার। সূত্র বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডালিয়া পয়েন্টে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিস্তার পানি ক্রমে বিপদসীমার মধ্যে রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব পানিয়ালের ঘাট এলাকায় নদীতে ঘোলা পানি প্রবাহিত হচ্ছে। চরের অধিকাংশ জমি পানি নিচে নিমজ্জিত। কৃষকের ফসলি জমিতে ধরেছে ভাঙন। কেউ কেউ নদীরপাড়ে বাদাম তুলে স্তুপ করে রেখেছেন। স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন ধরে পানি প্রবাহ বেড়েছে। কখনো পানি বাড়ছে আবার কমছে। ফলে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে।
কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে দুর্ভোগের আতঙ্ক রয়েছে। নদীর তীরবর্তী আবাদি জমিগুলো তলিয়ে গিয়ে বাদাম ও শাক-সবজিসহ উঠতি বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হবে। নদীর নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে গবাদি পশুপাখি নিয়ে মানুষজন বিপাকে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হক সুমন পাউবো মাধ্যমে বন্যাসংক্রান্ত বিষয় প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছেন বলে জানিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে এমন। আশঙ্কা দেখা দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি। এর পাশাপাশি কোনো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহিদুল হক ও গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না একই কথা জানান।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের ঢল আর গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাতের কারণে ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ওঠা নামা করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডালিয়া ব্যারেজের সব ক'টি গেই খুলে রাখা হয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে কিছুটা বাড়ছে পানি প্রবাহ। এ ছাড়া ভাটির অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখছেন বলে জানান তিনি।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান বলেন, অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তা নদীতে চলে যাচ্ছে। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিস্তা খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি উপচে ইনাতগঞ্জ, দীঘলবাক ও আউশকান্দি ইউনিয়নের প্রায় ১২টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। ইতিমধ্যে পাঁচটি আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন। আরও আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে মাধবপুর গালিবপুর আশ্রয় কেন্দ্রে এক টন চাল দেয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দীঘলবাকের মথুরাপুর ডাইকের অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ। স্থানীয় লোকজন নিজ উদ্যোগে বালুভর্তি বস্তা ফেলে পানি আটকানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। তবে যেকোনো সময় বাঁধভেঙে পস্নাবিত হতে পারে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন।
সরেজমিন উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কুশিয়ারা নদীর পানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়ে ডাইক উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে গালিমপুর, মাধবপুর, আহমদপুর, কুমার কাঁদ, দুর্গাপুর, কসবা, আউশকান্দি ইউনিয়নের পাহাড়পুর, পারকুল, ঢালার পাড় এবং ইনাতগঞ্জের কয়েকটি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। মাধবপুর স্কুলে ঈদের আগেই বন্যার্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সে সময় সরকারিভাবে তাদেরকে এক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রায় শতাধিক পরিবার অবস্থান করছেন এখানে। ইনাতগঞ্জে চারটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজন আশ্রয় নিতে ছুটাছুটি করছেন। কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে বন্যার্তদের দেখার জন্য এবং সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে ওইসব এলাকায় ছুটে যান এমপি আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান শেফু, ভাইস চেয়ারম্যান সাইফুল জাহান চৌধুরী, দীঘলবাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছালিক মিয়া, ওসি মো. মাসুক আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুল, আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলাওর হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ।
স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে টাঙ্গাইল জেলার সব নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখনও নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ি পয়েণ্টে ৩১ সেণ্টিমিটার, বংশাই নদীর পানি কাউলজানী পয়েণ্টে ১০ সেন্টিমিটার, ঝিনাই নদীর (নিউ ধলেশ্বরী) পানি জোকারচর পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও কোনো কোনো এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।