ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক ঈদ/ রাহেলিলস্নাহ্কে আপনাকে বিলিয়ে দিল, কে হলো শহীদ/ যে কোরবানি আজ দিল খোদায় দৌলৎ ও হাশমত/যার নিজের ব'লে রইলো শুধু আলস্নাহ ও হজরত/যে রিক্ত হয়ে পেল আজি অমৃত তৌহিদ....। রাত পোহালেই সারা দেশে ত্যাগের মহিমায় উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা।
হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা পালিত হয়। ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহায় ঠিক আগের দিন চাঁদ দেখার বিষয় নেই। ১০ দিন আগেই ঠিক হয়ে যায় ঈদের দিনক্ষণ। সে অনুসারে পশু কেনা, নাড়ির টানে গ্রামে যাওয়াসহ ঈদের সব
প্রস্তুতি সম্পন্ন করে থাকেন সবাই। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শেকড়ের টানে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে মানুষ; সাধ্যমতো কিনছেন পশু।
ঈদুল আজহা আমাদের দেশের মানুষের কাছে 'কোরবানির ঈদ' নামেই পরিচিত। এর ইতিহাস সুপ্রাচীন। সারা বিশ্বের মুসলমান ১০ জিলহজ কোরবানি দিয়ে থাকেন। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
সোমবার সকালে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ঈদ উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। নামাজের পর খুতবায় ইমাম সাহেব কোরবানির মর্মবাণী তুলে ধরবেন। পশু কোরবানির মাধ্যমে মনের পশুকে দমনের আহ্বান থাকে খুতবায়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে নামাজ আদায়ের পর কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। ঘুচে যাবে সব ভেদাভেদ। দোয়ার মাধ্যমে ঈদ উদযাপনের প্রথম পর্ব শেষ হবে।
নামাজ শেষে মুসলিস্নদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। চিরবিদায় নেয়া স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আলস্নাহর দরবারে আকুতি জানাবেন। এরপর বাড়ি ফিরে আলস্নাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদের প্রধান কর্তব্য সম্পন্ন করবেন।
গ্রাম থেকে শহর সব জায়গায় বিকাল পর্যন্ত আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর মধ্যে কোরবানির পশুর মাংস বিতরণের আনন্দে মেতে উঠবেন অনেকে। রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকটি ঈদের নামাজের জামাত হবে। ঈদের জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিতের্ যাব ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে।
ঈদুল ফিতরের পর মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহা। আলস্নাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার প্রিয় পুত্রকে কোরবানি করতে চেয়েছিলেন। ইব্রাহিম (আ.)-এর নিয়ত ও তা বাস্তবায়নের উদ্যোগে খুশি হয়ে তার পুত্রের বদলে পরম করুণাময় আলস্নাহতায়ালার ইশারায় দুম্বা কোরবানি হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর অসামান্য এই ত্যাগের মহিমা জাগ্রত রাখতে সারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে পশু কোরবানি করেন। ঈদুল আজহার পরের দুদিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানির সুযোগ থাকে।
বস্তুত ঈদুল আজহা শুধুমাত্র পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিকতাই নয়, এই ঈদ সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের ত্যাগ, আত্মসমর্পণ ও আত্মোপলব্ধির শিক্ষা দেয়। ঈদুল আজহার চেতনা মহান আলস্নাহর ইচ্ছার কাছে নিজেকে সঁপে দেয়ার শিক্ষাও দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদুল আজহার দিনে হালাল পশু কোরবানি করা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কাজ। পবিত্র কোরআনে সূরা কাওসারে বলা হয়েছে, 'অতএব আপনার পালনকর্তার নামে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।' সুরা হজে বলা হয়েছে, 'কোরবানি করা পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা।' কোরবানির পশু সম্পর্কে কোরআন মজিদে আরও বলা হয়েছে, 'এগুলোর গোশত বা রক্ত আমার কাছে পৌঁছায় না, কিন্তু তোমাদের তাকওয়া ঠিকই পৌঁছে যায়।'
\হরাসুল (সাঃ)-এর হাদিসে বলা হয়েছে, 'ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আলস্নাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।' অন্যত্র তিনি বলেছেন, 'যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিল না, সে যেন ঈদগাহে না যায়।'
সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুস্থরাও বঞ্চিত হবে না। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের একভাগ অনেকেই তাদের মধ্যে বণ্টন করবেন।
এদিকে প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে বরাবরের মতোই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহর থেকে অগণিত মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাত্রা শুরু করেছে। রাজধানীর বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে।
পবিত্র ঈদুল আজহার তাৎপর্য তুলে ধরে বরাবরের মতোই দেশের সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করছে বিশেষ সংখ্যা। বেতার থেকে সম্প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। অন্যদিকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ঈদ উপলক্ষে রয়েছে নানারকম আনন্দ-আয়োজন। আগামীকাল সোমবার থেকে টানা প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে চলবে ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
ঈদের জামাত
হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। এতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অংশ নেবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, বিচারপতি, কূটনৈতিক, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা ও ঢাকা মহানগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের মুসলিস্নগণ।
বিশিষ্ট ব্যক্তিরা নামাজে অংশ নেয়ার কারণে ঈদগাহ মাঠসহ আশপাশের এলাকা পুলিশ ওর্ যাবের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং ডগ স্কোয়াড দিয়ে তলস্নাশি করা হবে। ময়দানের চারদিকের উঁচু ভবনগুলোতে বসবে ওয়াচ টাওয়ার। পুলিশ ওর্ যাবের তরফ থেকে স্থাপন করা হচ্ছে কন্ট্রোলরুম। নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন ও তার সহধর্মিণী ড. রেবেকা সুলতানা সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানায়, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমটি সকাল ৭টায়, দ্বিতীয় জামাত ৮টায়, তৃতীয় জামাত ৯টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় ও সবশেষ পঞ্চমটি বেলা পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। আর মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ ক্বারী মো. আতাউর রহমান। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির থাকবেন এই মসজিদের খাদেম আব্দুল হাদী। তৃতীয় জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী। আর এতে মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. জসিম উদ্দিন। সকাল ১০টায় চতুর্থ জামাতে ইমামতি করবেন জামেয়া আরাবিয়া মিরপুরের মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান। এতে মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মোকাররমের খাদেম রুহুল আমিন।
পঞ্চম ও সবশেষ জামাতে ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুলস্নাহ। আর মুকাব্বির থাকবেন জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. আকতার মিয়া। এই ৫টি জামাতে কোনো ইমাম উপস্থিত না থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন হাইকোর্ট মাজার মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. আশরাফুল ইসলাম।
শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে এবার সকাল ৯টায় ঈদুল আজহার জামায়াত অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতি করবেন বড় বাজার মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শোয়াইব আব্দুর রউফ। এটি এই ঈদগাহের ১৯৭তম জামাত। পরে র?্যাব-১৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলিমুজ্জামান শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের নিরাপত্তা প্রস্তুতি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। কর্তৃপক্ষ জানায়, মুসলিস্নদের চিকিৎসা থেকে শুরু করে সার্বিক বিষয় মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পুরো মাঠ থাকছে সিসি ক্যামেরার আওতায়। পর্যাপ্ত পুলিশ, র?্যাব, আনসারসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবেন। মুসলিস্নদের আসার সুবিধার্থে 'শোলাকিয়া এক্সপ্রেস' নামে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ট্রেন দুটি ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ লাইনে চলাচল করবে। শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-১ ভৈরব থেকে ছাড়বে সকাল ৬টায়, কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল ৮টায়, আবার কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায়, ভৈরব পৌঁছাবে দুপুর ২টায়। শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-২ ময়মনসিংহ থেকে ছাড়বে সকাল পৌনে ৬টায়, কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল সাড়ে ৮টায়, আবার কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায় এবং ময়মনসিংহে পৌঁছাবে বেলা ৩টায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের প্রধান খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন সিনিয়র মুয়াজ্জিন এ জলিল। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুলস্নাহ মুসলিম হল মসজিদে সকাল ৭টায়, ড. মুহম্মদ শহীদুলস্নাহ্ হল লনে সকাল ৮টায় ও ঈশা খাঁ আবাসিক এলাকার মসজিদে সকাল ৭টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় ঈদ জামায়াত এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদ জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুশ শরফ আদর্শ সিনিয়র কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ আলস্নামা ড. সাইয়েদ আবু নোমান। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকছেন মুফতি মুহাম্মদ নুরুন্নবী। এছাড়া ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত জমিয়তুল ফালাহ ময়দান। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, সকাল সাড়ে ৭টায় ও সকাল সোয়া ৮টায় দুটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।