ঈদের আগে কাঁচা মরিচের ডাবল সেঞ্চুরি

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলমানদের ধর্মীয় এই উৎসবকে ঘিরে এক সপ্তাহ আগে থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাজার সিন্ডিকেট। ঈদে যে পণ্যগুলোর চাহিদা থাকে সবার শীর্ষে, ইতোমধ্যেই দফায় দফায় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর দাম। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক দিনের ব্যবধানেই কেজি প্রতি মরিচের দাম বেড়েছে ৫০-৬০ টাকা, আর সপ্তাহের মধ্যেই বেড়েছে ৮০-১০০ টাকা পর্যন্ত। শুক্রবার রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। বিক্রেতারা বিষয়টি সরবরাহের সংকট বললেও ক্রেতারা ঈদকে ঘিরে ব্যবসায়ীদের শক্ত সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছেন। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার বাজারে দেশি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত, বিদেশি (ভারত) কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি করে। এছাড়া প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি করে এবং লাউ প্রতি পিস ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও বাজারে কাঁচামরিচ ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হতো। এরপর আরও এক দফায় দাম বেড়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কাঁচামরিচ বিক্রি হয় ১৬০ টাকায়। তবে এক রাতের ব্যবধানেই সেটির দাম বেড়ে এখন ২৪০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। তবে কিছুটা নিম্নমানের কাঁচামরিচ কোথাও কোথাও ২২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। গত বছর ঠিক এই সময়ে ঈদুল আজহার আগে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে ৭০০ টাকায় উঠেছিল। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সময়ে দেশে কাঁচামরিচের কিছুটা ঘাটতি থাকে, সে কারণে দাম বেড়ে যায়। তখন আমদানি করে কাঁচামরিচের ঘাটতি মেটানো হয়। আর যদি মাঝেমধ্যে আমদানি ব্যাহত হয়, তখন দামটা লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে। বাড্ডা পাঁচতলা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. সামছুল হক জানান, বৃহস্পতিবার কাঁচামরিচ বিক্রি করেছি ১৬০ টাকা কেজি। শুক্রবার সকালে যখন আড়তে গেলাম, তখন দাম দেখে চোখ কপালে উঠেছে। এদিন দেশিটা ২৪০ এবং ইন্ডিয়ান কাঁচামরিচ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে এই বিক্রেতা বলেন, দাম বাড়লে কিছু তো করার নেই। দাম বাড়লে আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হয় এবং সেভাবে বিক্রি করতে হয়। মনে হচ্ছে বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। বিশেষ করে শুক্রবারে ইন্ডিয়ান কাঁচামরিচের সংকট থাকে। তাই অন্যান্য দিনের তুলনায় দামটাও বেশি থাকে। চোখ রাঙাচ্ছে সবজি এদিকে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। ফাঁকা ঢাকার বাজারেও চোখ রাঙাচ্ছে সব ধরনের সবজি। বলতে গেলে বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজিই মিলছে না। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। শুধুমাত্র মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা। বাকি সব সবজি ৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার বাজারে প্রতি কেজি কাঁকরোল বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুরমুখি প্রতি কেজি ১২০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ধুন্দুল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ঝিঙা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৬০, টমেটো প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পটল প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর মহাখালী বাজারে বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, বাজার একেবারেই ফাঁকা, ক্রেতা নেই বললেই চলে। তবুও বিক্রেতারা সব ধরনের সবজি অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছেন। বাজারের ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। শুধুমাত্র মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা কেজি, বাকি সব সবজি ৬০ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে। ফাঁকা বাজারে বিক্রেতারা সবজির এমন বাড়তি দামের হাঁকডাক কেন দিচ্ছে, তা বুঝতে পারলাম না। বিক্রি কম সেই হিসেবে তো সবজির দাম তুলনামূলক কম হওয়ার কথা, ঢাকা শহর ছেড়ে অধিকাংশ মানুষ ইতোমধ্যে চলে গেছে, তবুও ফাঁকা বাজারে সবজির অতিরিক্ত বাড়তি দাম। সবজির দাম বাড়তি বিষয়ে গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় বাজারের সবজি বিক্রেতা শরিফুল ইসলাম বলেন, আজ (শুক্রবার) অতিরিক্ত বাড়তি দামে সব ধরনের সবজি কিনে আনতে হয়েছে। যে কারণে খুচরা বাজারে সবজির দাম বেশি। মূলত ঈদের সময় হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সবজি ভর্তি ট্রাক বাজারে কম ঢুকেছে। সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বাড়তি। যেহেতু ঈদ করতে বেশিরভাগ মানুষ ইতোমধ্যে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন, তাই বলতে গেলে ঢাকা শহর অনেকটাই ফাঁকা। বাজারে ক্রেতা খুবই কম, তবুও সবজির দাম একটু বাড়তি যাচ্ছে। ঈদের আগে ও পরে কয়েকদিন একটু বাড়তিই বাজার যাবে।