ব্যর্থ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে বিএনপি। সরকার পতনের আন্দোলন ও কমিটি পুনর্গঠনে ব্যর্থতার কারণে ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন ব্যর্থ নেতাদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হবে। যে কোনো সময়ে ঢাকা মহানগরসহ যুবদলের নতুন কমিটির ঘোষণা আসতে পারে।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বিএনপি। যেটাকে দলের নেতাকর্মীরা 'মধ্যরাতের ঝড়' বলে উলেস্নখ করছেন। ঈদের আগে এরকমভাবে কমিটি ভেঙে দেওয়ায় হতবাক তারা।
নেতাদের অনেকে মনে করেন, আন্দোলনে ব্যর্থতা ও সংগঠন গতিশীল করতে না পারায় কমিটিগুলোর নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ দলের শীর্ষ নেতা। বলা যায়, এক ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তিনি।
বিএনপি সূত্র মতে, কমিটি ভেঙে দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে দলের মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতাকে জানানো হয়েছে। নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ঢাকা মহানগরের সাবেক নেতাদের এখনো সম্পৃক্ত করা হয়নি।
জানা গেছে, পাঁচ কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর এবার ঢাকা ও গাজীপুর জেলা, খুলনা, কুমিলস্না ও গাজীপুর মহানগরসহ আরও অন্তত সাতটি জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কেন্দ্রীয় মহিলা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল ও শ্রমিক দলের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। জাসাস'রও নতুন কমিটি যেকোনো সময় ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি পৃথক বৈঠক করেন তারেক রহমান। সেখানেই নেতাদের নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে তাকে সহযোগিতার নির্দেশনা দেন তিনি। বিএনপির চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর কমিটি গঠনের কথা আগেই জানিয়েছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কমিটি বাতিল করা হয়েছে। এটা খুব স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া।
বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গত বছর জুলাই থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থানের কর্মসূচি সফল না হওয়ায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নগর কমিটিগুলো দলের মধ্যে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব নিয়ে তখনই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এর কয়েক দিনের মধ্যেই ছাত্রদল সভাপতির পদ থেকে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে 'অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে' সরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি, যা দলের মধ্যে তোলপাড় তৈরি করেছিল। এরপর ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে ডাকা মহাসমাবেশ পন্ড হওয়ার ঘটনাতেও এই নেতাদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দলের আস্থাভাজন, শারীরিকভাবে সুস্থ, আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ভূমিকা রাখতে সক্ষম এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন নেতাদের নতুন কমিটিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি থাকলে ভেঙে নতুন কমিটি করা হবে। যেসব কমিটির মেয়াদ আছে; কিন্তু সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক বিগত আন্দোলনের মাঠে ছিলেন না, তাদেরকে কমিটি থেকে সরিয়ে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ ধরনেরও একটি তালিকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়েছে।
বিগত আন্দোলন পরিচালনা এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে সরকার পতনের আন্দোলনে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কার কী সফলতা-ব্যর্থতা ছিল, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। ওই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর দল পুনর্গঠনে হাত দেওয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, আন্দোলনে সফলতা-ব্যর্থতা সংক্রান্ত দলের প্রতিবেদনকে অনুসরণ করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, সারা দেশের জেলা ও মহানগর কমিটি এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন সংক্রান্ত কাজ শুরু করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এই নিয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মতামত নিয়েছেন তিনি।