শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

আজিজের ভাই ও রহমত পুত্রের দখলবাণিজ্য

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০০
দখল করা জমিতে সাইনবোর্ড -যাযাদি

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের পর এবার তার ভাই হাসান হারিস আহমেদ ও তার সহযোগীদের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অসহায় মানুষের জমি দখলের চাঞ্চল্যকর খবর বেরিয়ে এসেছে। তবে এতদিন তারা সেখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রাখলেও নির্যাতিত জনগণ এবার ফুঁসে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে যাওয়া অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে স্থানীয়রা রুখে দাঁড়ানোয় হাসান হারিস ও তার সহযোগীরা পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, রাজধানীর বাড্ডার সাঁতারকুলে মগারদিয়ার পূর্ব হাররদিয়া মৌজায় প্রায় ২৩৫ বিঘা জমি দখল করে রেখেছেন সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই হারিস আহমেদ এবং স্থানীয় সাবেক এমপি রহমত উলস্নাহর ছেলে হেদায়েত উলস্নাহ রন। বাড্ডা মডেল টাউনের ওই ২৩৫ বিঘা জমির বড় বড় খন্ডে বিশাল সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কালো রঙের সাইনবোর্ডে সাদা কালিতে লেখা রয়েছে- এই সম্পত্তির মালিক হাসান হারিছ আহমেদ ও হেদায়েত উলস্নাহ রন। প্রকল্পজুড়ে প্রায় দেড় ডজন সাইনবোর্ড রয়েছে। তবে সাইনবোর্ডে জমির পরিমাণ ও দাগ-খতিয়ান কিছুই লেখা নেই। কিছু কিছু সাইনবোর্ডে আবার হারিস আহমেদের সঙ্গে এপেক্স প্রোপার্টিস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের নাম রয়েছে।

এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাড্ডা থানার বড় বেরাইদ পূর্ব হারাদিয়া ও চিনাদিতে ছোট খাল-বিলের উৎপত্তি বালু নদী থেকে। এই খাল-বিলে বর্ষা মৌসুমে ডাঙ্গি খনন করে মাছ ধরেন জেলেরা। আর শুষ্ক মৌসুমে চাষ হয় বোরো ধান ও রবিশস্য। সারা বছরই খালটিতে থাকে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনা। আইনে জলাধার ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার কোনো সুযোগ না থাকলেও আবাসন প্রকল্প করছেন হেদায়েত উলস্নাহ রন ও হাসান হারিস আহমেদ।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় কয়েকটি পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে ৬০/৭০ বিঘা জমি কিনেন তারা। অথচ এপেক্স প্রোপার্টিস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে তারা ইতোমধ্যে প্রায় ৭৫০ বিঘা জমির ওপর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ভূমি অফিস থেকে আরএস ও এসএ খতিয়ান তুলে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি দাগে অল্প জমি এপেক্স প্রোপার্টিস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের

নামে জারি হয়েছে। এসব জমির অধিকাংশই বোরো ও আমন শ্রেণির। কিছু রয়েছে নালা শ্রেণির।

১৯৭২ সালের নদী আইনের ১৩৫ নং অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ভরা মৌসুমে পানি যত দূর পর্যন্ত যাবে, তার পুরোটাই নদী বা বিলের জমি। পানি শুকিয়ে গেলে ফোরশোর ভূমি হিসেবে পূর্ববর্তী মালিক পুনরায় ওই জমির দখল পাবেন। কিন্তু সেখানে কোনোভাবেই স্থাপনা নির্মাণ বা বালি ভরাট করা যাবে না। শুধু চাষাবাদের কাজে ওই জমি ব্যবহার করা যাবে। সে হিসেবে এপেক্স প্রোপার্টিস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড আইন ভঙ্গ করে খালের জমিতে বালি ভরাট করছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

খাল-বিলের জমি আবাসন প্রকল্পের জন্য নামজারির সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসনও। তারপরও কীভাবে নামজারি হলো, জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, যদি কেউ এমন কাজ করে থাকে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে জনসাধারণের সহায়সম্বলের পাশাপাশি মসজিদের জমি, খাল-বিলও রেহাই পায়নি এ দখলবাজ চক্রের করালগ্রাস থেকে। বেরাইদ মোড়লপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি মাজেদুর রশিদ বলেন, মসজিদের জন্য খালের মধ্যে থাকা ৪২ বিঘা জমি মসজিদ উন্নয়নের জন্য ভরাটের উদ্যোগ নিলে এপেক্স প্রোপার্টিসের লোকজন বাধা দেয় এবং গত শুক্রবার স্থানীয় সাবেক এমপি রহমত উলস্নাহর পুত্র হেদায়েত উলস্নাহ রন জুমার নামাজের পর মুসুলিস্নদের বলেন, মসজিদের ৪২ বিঘা জমি তার কোম্পানি ভরাট করে দেবে। মসজিদের জমি আবাসন কোম্পানি কেন ভরাট করে দেবে? আর তারা কেনই বা এই জমি দখল করে রেখেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মসজিদ কমিটির এই সভাপতি।

এলাকার স্কুলমাস্টার তাজুল ইসলাম বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই হাসান হারিস আহমেদ এই প্রজেক্টে এমপিপুত্র হেদায়েত উলস্নাহ রন'র মাধ্যমে শতকোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন এবং তার ভয় দেখিয়েই সাধারণ মানুষের জমিতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন। এ বিষয়টি এলাকায় ওপেনসিক্রেট। বিষয়টি অনুসন্ধান করলে তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি ও দখলবাজির পাশাপাশি অবৈধভাবে অর্জিত কালোটাকার উৎসের সন্ধান পাওয়া যাবে।

৪২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শের মোহাম্মদ বলেন, 'এখানে আমার পৈতৃক সম্পত্তিতেও বালি ভরাট করতে দিচ্ছে না এপেক্স প্রোপার্টিস। যেখানে তারা মসজিদের সম্পত্তি জোর করে দখলে রেখেছে, সেখানে আমি তো কিছুই না। ৭৫০ বিঘা জমি দখল করে তারা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রেখেছে। এই জমিতে মালিকরা যেতে পারেন না এবং বালি ভরাটের উদ্যোগ নিলেই শুরু হয় হামলা-ভাঙচুর।'

এ বিষয়ে বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াসীন গাজী বলেন, 'আমি শুনেছি মসজিদের জায়গায় বালি ভরাট করা হবে। তবে কেউ বাধা দিচ্ছে সেই বিষয়ে কোনো অভিযোগ পায়নি। আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী যে-ই হোক, অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে