রাজধানীর হাটগুলোতে চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ গরু-মহিষ-ছাগল আসলেও কেনাবেচা এখনো জমে ওঠেনি। অন্যদিকে খামারিরা অল্প লাভে পশু ছাড়লেও মৌসুমি ব্যবসায়ী ও পাইকাররা দাম ছাড়ছেন না। তাদের আশা, আজ-কালের মধ্যেই বিক্রি বাড়বে। তাই কাঙ্ক্ষিত সে সময়ের জন্যই অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ডিএসসিসিতে ১১টি অস্থায়ী এবং ডিএনসিসিতে ৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে। এছাড়া উত্তর সিটির গাবতলী ও দক্ষিণ সিটির শারুলিয়ার স্থায়ী হাট বসেছে। ১৩ জুন বৃহস্পতিবার থেকে এসব হাটে আনুষ্ঠানিকভাবে পশু বেচাকেনা শুরু হয়।
এদিন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার হাটগুলোতে পশুর কমতি না থাকলেও তেমন ক্রেতা দেখা যায়নি। তিব্বত বাসস্টপ থেকে শুরু করে কলোনিবাজার মাঠ হয়ে হাটের দৈর্ঘ্য ছাড়িয়েছে নাক কান গলা হাসপাতাল পর্যন্ত। ইতোমধ্যেই ৩ হাজারের বেশি পশু এসেছে এই হাটে। তবে বিক্রি নেই বললেই চলে।
নাটোর থেকে আসা এক পশু বিক্রেতা জানান, মঙ্গলবার এই হাটে তিনি ৬০টি গরু নিয়ে এসেছেন তবে বিক্রি হয়েছে মাত্র ২টি। আজ-কালের মধ্যে বিক্রি বাড়ার প্রত্যাশার কথা জানালেও শঙ্কা রয়েছে বেশির ভাগ পশু অবিক্রীত থাকতে পারে- তা নিয়ে। কারণ যে দাম চাওয়া হচ্ছে ক্রেতারা তার অর্ধেক দামও বলছেন না।
মেরাদিয়া হাট কর্তৃপক্ষ বলছে, অন্যান্য বাবের মতো এবার আফতাবনগরে হাট বসছে না। আফতাব নগরবাসী মেরাদিয়া পশুর হাট থেকে কোরবানির গরু কিনবে। হাটের সকল প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। হাটে এ বছর ২ থেকে আড়াই লাখ পশু আসবে। এখন পর্যন্ত যে সকল পশু এসেছে তার বেশির ভাগই উত্তর বঙ্গের। বড় বড় গাড়ি ভর্তি নিয়ে আসছে মৌসুসি ব্যবসায়ী, খামারি ও কৃষকরা। এখন পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হয়নি। হাসিল দেওয়ার জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। হাটে পশু রাখার জন্য এখনো জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। পাহারার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক রাখা হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর খিলগাঁও রামপুরা বনশ্রী এলাকায় মেরাদিয়া পশুর হাটে ৫০-৬০ হাজারে বেশি গরু নিয়ে এসেছে খামারি ও ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা হয়েছে এসব পশু। পশুর হাটের কারণে এলাকার সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
মেরাদিয়া পশুর হাটে ১০ তলা মার্কেট রোডে কথা হয় কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ী
\হমো. শাহাদত হোসেনে সঙ্গে। তিনি বলেন, ১৭টা গরু নিয়ে এসেছি। এখনো একটাও বিক্রি হয়নি। দুইটা বাড়ির পালের, বাকিগুলা কেনা। গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে ১০-৫০ হাজার টাকা দিয়ে নিয়ে এসেছি। বিক্রি না হলে ফিরিয়ে নিয়ে যাব। দরদাম হচ্ছে, ১০ মণ ওজনের গরুর দাম চাচ্ছি, ৫ লাখ টাকা, অনেকে দাম বলেছে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর ৪০ হাজার টাকা বাড়িয়ে বললে ছেড়ে দেব।
কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার ব্যবসায়ী মো. কদম আলি বলেন, ৮টা নিজের পালা গরু নিয়ে এসেছি। চারটা বিক্রি করেছি। একটা ১ লাখ ৯০ হাজার ও বাকি তিনটা ১ লাখ ৭০ হাজার করে বিক্রি হয়েছে। পালার গরুগুলো ১ লাখ টাকার মধ্যে কিনে ৭ মাস পেলে প্রতি গরুর পেছনে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। তখন যা বেশি বিক্রি করতে পারি তাই লাভ। প্রতি গরুতেই আমার লাভ হয়েছে। আমি আশা করছি বাকি গরুও বিক্রি হয়ে যাবে।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ব্যবসায়ী মো. সাইফুল বলেন, ৮টা গরু নিয়ে এসেছি। গরুর দাম দেড় থেকে ৩ লাখ টাকার মধ্যে। আমার সব গরু দেশি। মেহেরপুর জিনারুল ইসলাম বলেন, ৯টা ভালো মানের গরু নিয়ে এসেছি। কোনোটাই এখনো বিক্রি হয়নি।
রামপুরা এলাকার নজরুল মিয়া বলেন, বাজারে গরু দেখতে এসেছি। দাম যাচাই করছি। কিন্তু কেউ দাম ছাড়ছে না। রোববার গরু কিনব। আমিন আহমেদ বলেন, আমার বাসা জি বস্নকে। গত কয়েকদিন ধরে গরু দেখছি। ১ লাখের মধ্যে ছোট গরু খোঁজ করছি। পছন্দ মতো পাই না তাই কেনা হয়নি। মন মতো পেলে কিনে ফেলব।
মেরাদিয়া হাটের ইজারাদার আবু সাইদ বলেন, ঐতিহ্যবাহী মেরাদিয়া পশুর হাট তৈরির কাজ শেষ। নির্ধারিত সময়ে পশু হাটে চলে এসেছে। হাটের হাসিল ঘর, কন্ট্রোল রুম, পশু চিকিৎসা কেন্দ্র ও পশু রাখার ব্যবস্থা আছে। এখন পর্যন্ত ১৩টি হাসিল কাউন্টার বসানো হয়েছে। আশা করছি ভালো শুক্রবার থেকে ভালো বেচাকেনা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কোরবানির জন্য এক কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর সর্বোচ্চ সম্ভাব্য চাহিদা এক কোটি ৭ লাখ ২ হাজার ৩৯৪টি। কোরবানি যোগ্য পশুর মধ্যে ৫২ লাখ ৬৮৪টি গরু রয়েছে। এ ছাড়া, মহিষ ১ লাখ ৬০ হাজার ৩২০টি, ছাগল ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ৫৮টি, ভেড়া ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭৪৩টি এবং ১ হাজার ৮৫০টি পশু অন্য প্রজাতির পশু রয়েছে।