আগামী ২ বছরও প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে থাকবে
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস
প্রকাশ | ১৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
সংকটের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের অর্থনীতি 'নিম্নমুখী প্রবণতা' থেকে আগামী দুই অর্থবছরে ঘুরে দাঁড়িয়ে 'স্থিতিশীল' হলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে থাকবে বলে আভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
আগামী জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং পরের অর্থবছরে তা ৫ দশমিক ৯ শতাংশে উঠবে বলে আভাস দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাটি।
মঙ্গলবার ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থাটি 'গেস্নাবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট' শিরোনামে সদস্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সামনের দিনগুলোতে কোন পর্যায়ে যেতে পারে, তা পর্যালোচনা
করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতি কতটুকু এবং কীভাবে এগোবে সেই আভাসও দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিদায়ি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির বিষয়ে গত এপ্রিলে দেওয়া আভাসই বজায় রেখেছে বিশ্বব্যাংক। তাদের প্রাক্কলন বছর শেষে তা ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে।
একটি দেশে এক অর্থবছরে যে পরিমাণ পণ্য ও সেবা উৎপাদন হয়, তার সামষ্টিক বাজার মূল্যই হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি।
কোভিড মহামারির কারণে বাংলাদেশের ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধির ধারা হোঁচট খায় গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসে। বিদায়ি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে তা সাড়ে ৬ শতাংশ হবে বলে আশা করা হলেও বছর শেষে বিবিএস প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। সেই ভিত্তির
ওপর দাঁড়িয়ে আগামী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে।
তবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে এটি অর্জিত না হওয়ার কথাই বলা হয়েছে। এদিন প্রকাশিত 'গেস্নাবাল ইকোনমিক প্রসপেক্ট' প্রতিবেদনে এর কিছুটা ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে।
এতে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল ৬ দশমিক ৯, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ১ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮ প্রবৃদ্ধির হারের তথ্য তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির নিম্নগামিতা কাটিয়ে প্রায় স্থিতিশীল হয়ে উঠবে; উপরন্তু সামান্য বাড়বে, তবে কমবে না। পরের অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আরও একটু বেড়ে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ হবে।
মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তা-ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এবং বড় বিনিয়োগের প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সামগ্রিক বিনিয়োগ বাড়বে। এ বছরে অভ্যন্তরীণ জোগান ও আমদানি পণ্যের সংকট ধীরে ধীরে কাটতে থাকবে।
মুদ্রার 'উদার' বিনিময় হারের কারণে আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহও বাড়বে বলে আভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, যা দায় শোধের চাপেও ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) প্রথম সাত মাসের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে অর্থনীতির আকার বাড়তে পারে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ হারে।
গত কয়েক বছর আওয়ামী লীগ সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য ধরলেও এবার কিছুটা রাশ টেনে ধরে। এই পিছিয়ে আসার স্পষ্ট ব্যাখ্যা বাজেট বক্তৃতায় দেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বাজেট উপস্থাপনায় তিনি বলেন, '২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬.৭ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ গতি ধরে রাখার লক্ষ্যে কৃষি ও শিল্প খাতের উৎপাদন উৎসাহিত করতে যৌক্তিক সব সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পসমূহের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং রপ্তানি ও প্রবাস আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। আশা করছি আমাদের গৃহীত এসব নীতিকৌশলের ফলে আগামী অর্থবছরে ৬.৭৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে এবং মধ্যমেয়াদে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৭.২৫ শতাংশে পৌঁছাবে।'
অর্থনীতিবিদদের অনেকে প্রবৃদ্ধির হারকে অর্থনীতির গতিশীলতা হিসেবে মানলেও টেকসই উন্নয়নের সূচক হিসেবে মানতে নারাজ। তারপরও অর্থনীতির এই প্রপঞ্চ বাংলাদেশের রাজনীতিতে বারবার আলোচনায় এসেছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল বাংলাদেশ। এরপর আসে মহামারি। তার মধ্যেও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য যখন ধরেছিলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু অর্জিত হয় ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন।
মহামারির ধাক্কা সামলে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে। দুঃসময় কাটিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয় ৭ দশমিক ১০ শতাংশ।
এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরে অর্থনীতির আকার ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য ধরেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল। পরে তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামানো হলেও তা অর্জন হয়নি।
বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী ওই অর্থবছর শেষে স্থির মূল্যে জিডিপি বেড়েছে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
নতুন বাজেটে চলতি মূল্যে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। বিদায়ি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এর আকার ছিল ৫০ লাখ ৪৮ হাজার ২৭ কোটি টাকা।