তিন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বাইডেনপুত্র হান্টার

প্রকাশ | ১৩ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
হান্টার বাইডেন
আগ্নেয়াস্ত্র মামলায় তিনটি অভিযোগেই দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেন। দেশটির ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্ট দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তার সন্তানের অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার এটাই প্রথম ঘটনা। হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে যে তিনটি অভিযোগ আনা হয়, তার দুটি মিথ্যা তথ্য প্রদান সংক্রান্ত। অপরটি মাদক ব্যবহার কিংবা মাদকাসক্ত থাকা অবস্থায় নিজের অধিকারে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগ। হান্টার বাইডেন ২০১৮ সালে একটি হ্যান্ডগান কেনার সময় তার মাদক ব্যবহারের ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন বলে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ডেলাওয়ারের একটি অস্ত্রের দোকান থেকে কোল্ট কোবরা স্পেশাল রিভলভারটি কেনেন তিনি। তবে, হান্টার বাইডেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তার দাবি, সেই সময় তিনি মাদকাসক্তি থেকে বের হয়ে আসার পথে ছিলেন। সে কারণে আগ্নেয়াস্ত্রের আবেদনপত্রে তিনি যা বলেছেন, সেটাই সত্যি ছিল। ডেলাওয়ারের ১২ জন জুরি তিন ঘণ্টা আলোচনার পর দোষী সাব্যস্ত করার সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সক্ষম হন। প্রমাণিত অপরাধগুলোতে সর্বোচ্চ সাজা দাঁড়ায় ২৫ বছর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেনকে কারাভোগ করতে হতে পারে। যদিও তার সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বিচারক সাজা ঘোষণার জন্য কোনো দিন ধার্য করেননি। তবে, সাধারণত দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে সাজা ঘোষণা করা হয়ে থাকে। বাইডেনের আইনজীবী আবে লোয়েল বলেছেন, জোরালোভাবে সম্ভাব্য সব আইনি পদক্ষেপ নেবেন তারা। অভিযোগ প্রমাণের পর স্পেশাল কাউন্সিল ডেভিড ওয়েস বলেন, অভিযোগটা মাদকাসক্তি নিয়ে নয়। বরং আসক্ত অবস্থায় 'অভিযুক্তের অবৈধ তৎপরতা' নিয়ে। কৌঁসুলিদের কথার প্রতিধ্বনি পাওয়া গেল ওয়েসের কথায়। 'এই দেশে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়' উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'নিজের কৃতকর্মের দায় সবাইকেই নিতে হবে, এমনকি এই বিবাদীকেও।' মঙ্গলবার মামলায় নিজের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যাওয়ার সময়টায় বাইডেনকে সংযতই দেখা গেছে। হাত ভাঁজ করে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তারপর ঘুরে তার আইনজীবী দলের কয়েকজনকে জড়িয়ে ধরলেন। আদালত মুলতবির পর স্ত্রী মেলিসাকে আলিঙ্গন করেন তিনি। তারপর সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টদের প্রহরায় সেখান থেকে বের হয়ে আসেন। এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, তিনি এই 'রায়ে হতাশ', কিন্তু, 'মেলিসা, আমার পরিবার, বন্ধু এবং কমিউনিটির কাছ থেকে যে ভালোবাসা ও সমর্থন বিগত দিনগুলোতে পেয়েছি তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।' বিচারের পুরো সময়টাজুড়ে বাইডেন পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য তাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন। যদিও, রায়ের দিন মাত্র দুজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন- স্ত্রী মেলিসা কোহেন বাইডেন এবং চাচা জেমস বাইডেন। মার্কিন ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন রায় পড়ার কিছুক্ষণ পর এসে হাজির হন। তারপর সৎ ছেলেকে নিয়ে সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফারদের ভিড় পার করে বেরিয়ে যান। মঙ্গলবার ওই সময়টায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন ওয়াশিংটন ডিসিতে এক সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন। সেই সম্মেলনের বিষয়বস্তু ছিল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ। কর্মসূচি শেষে তিনি উইলমিংটনে যান। সেখানে অবতরণের পর টারম্যাকে পুত্র, পুত্রবধূ কোহেন বাইডেন এবং নাতি বিউকে শুভেচ্ছা জানান। রায়ের পর প্রেসিডেন্ট বলেন, মাদকাসক্তিকে পরাজিত করতে সন্তানের প্রচেষ্টায় তিনি 'অত্যন্ত গর্বিত।' 'যেসব পরিবারে কেউ আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে লড়াই করছে, তারাই বুঝবেন প্রিয় মানুষটার ওই পথ থেকে ফেরার জন্য আরও শক্তিশালী ও উদ্যমী হতে দেখার অনুভূতিটা কেমন,' বলেন তিনি। রায়ের আগে প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, দোষী সাব্যস্ত হলে ছেলেকে ক্ষমা করবেন না তিনি। তিনি বলেন, 'মামলার ফলাফল যাই আসুক আমি মেনে নেব। বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ অক্ষুণ্ন থাকবে, হান্টার প্রয়োজনবোধে আপিল করবে।' বিবিসি বাংলা