দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর এক-তৃতীয়াংশের বেশি শৌচাগার (৩২ শতাংশ) ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। আবার ব্যবহার উপযোগী ৬৮ শতাংশ শৌচাগারের মধ্যে ৩৩ শতাংশ পাওয়া গেছে পরিচ্ছন্ন। অন্যদিকে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোর ৯২ শতাংশ শৌচাগার ব্যবহার উপযোগী থাকলেও ৫৬ শতাংশই অপরিচ্ছন্ন। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) করা এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
আইসিডিডিআর,বি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ২০২২ সালে এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। গবেষণাটি সম্প্রতি পস্নাস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বলে সোমবার জানিয়েছে সরকারের এই সংস্থাটি।
জানা গেছে, ঢাকার ১২টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এতে ২৪৫৯টি শৌচাগার পর্যবেক্ষণ করে ঢাকার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে টয়লেট ব্যবহারের সুবিধা, ব্যবহার উপযোগিতা এবং পরিচ্ছন্নতা মূল্যায়ন করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতি একটি শৌচাগারের বিপরীতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২১৪ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে শৌচাগার প্রতি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৪ জন। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো বাংলাদেশ জাতীয় ওয়াশ (ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন) স্ট্যান্ডার্ড ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা ২০২১ অনুযায়ী অন্তর্বিভাগে প্রতি ছয় বেডের জন্য একটি শৌচাগার থাকার মানদন্ড পূরণেও ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা শৌচাগার সুবিধা পাওয়া গেছে এক শতাংশের কম স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। মাত্র ৩ শতাংশ হাসপাতালে মাসিকের সময় ব্যবহৃত প্যাড এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ময়লা ফেলার ঝুড়ি ছিল।
গবেষণায় টয়লেটের ব্যবহার উপযোগিতা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ ব্যবহৃত মানদন্ড অনুযায়ী। দৃশ্যমান মলের উপস্থিতি, মলের তীব্র গন্ধ, মাছি, থুতু, পোকামাকড়, ইঁদুর এবং কঠিন বর্জ্যের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে টয়লেটের পরিচ্ছন্নতা মূল্যায়ন করা হয়েছে।
আইসিডিডিআর,বির অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট এবং এই গবেষণার প্রধান সমন্বয়ক ডা. নুহু আমিন বলেন, 'আমরা গবেষণাটি করেছিলাম কোভিড-১৯ মহামারির ঠিক পরে। তখন অনেক হাসপাতাল কোভিড রোগীদের চিকিৎসা থেকে সাধারণ চিকিৎসাসেবার দিকে মনোনিবেশ করেছে। ফলে তখন রোগীর প্রবাহ এবং শৌচাগার ব্যবহার কমে যেতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'পরিচ্ছন্ন হাসপাতাল ও কার্যক্ষম টয়লেট বজায় রাখার জন্য বরাদ্দ বাড়াতে হবে। লিঙ্গভিত্তিক প্রয়োজনীয়তা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদার ওপর দিতে হবে গুরুত্ব। স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং এর প্রাপ্যতা হাসপাতালগুলোতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এসব স্থান থেকে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলো ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে।'