বিকাশমান অর্থনীতির দেশের জোট ব্রিকসে আপাতত নতুন সদস্য নেওয়া হবে না। পূর্ণ সদস্যের পরিবর্তে এ জোটে 'অংশীদার রাষ্ট্র' মডেলে ভবিষ্যতে নতুন দেশকে যুক্ত করা হবে। রাশিয়ার মধ্যাঞ্চলীয় নিঝনি নোভগ্রোদ শহরে সোমবার শুরু হওয়া ব্রিকসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দুই দিনের বৈঠকে এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ বৈঠকে জোটের সদস্য হতে আগ্রহী কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ পেয়েছে বাংলাদেশও।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ১ জুন বৈঠকে যোগ দিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি লেখেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যদিও আমন্ত্রিত দেশের প্রতিনিধিরা সরাসরি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে নয়, তাদের জন্য নির্ধারিত আলাদা একটি ফোরামে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ নন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি যোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, 'বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিবর্তে সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি অংশ নিয়েছেন। কারণ, একই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌদি আরবে পূর্বনির্ধারিত সফর রয়েছে। ওই সফর অনেক আগেই চূড়ান্ত হয়েছিল।'
এদিকে, ভারতের হিন্দু বিজনেস লাইনের খবরে বলা হয়েছে, ব্রিকসের পরিধি বৃদ্ধির ফলে চীনের প্রভাব বাড়তে থাকবে। চীনের এ প্রভাবের লাগাম টানতে ভারত নতুন করে আরও কয়েকটি দেশকে সদস্যপদ দেওয়ার আগে পাঁচ বছরের বিরতি দিতে বলেছে। ভারতের এমন অবস্থানে সায় আছে ব্রাজিলের। চীন ও রাশিয়া যখন ব্রিকসকে পুরোপুরি একটি পশ্চিমাবিরোধী ফোরামে রূপান্তরে আগ্রহী, ভারত ও ব্রাজিলের অবস্থান ঠিক এর উল্টো।
ব্রিকসের পরিধি বাড়ানোর আগে বিরতি নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের মনোভাবের বিপরীতে চীনের অবস্থান। ৩ জুন বেইজিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনায় চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সুন ওয়েডং বাংলাদেশের ব্রিকসের সদস্য হতে তার দেশের সমর্থনের কথা জানান।
তবে ভারতের এমন মনোভাবের কারণে জোটের সদস্য হতে বাংলাদেশসহ অন্তত ১০টি দেশকে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।
ঢাকা ও মস্কোর কূটনৈতিক সূত্রমতে, ব্রিকসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশকে একেবারে শেষ মুহূর্তে আমন্ত্রণ জানায় রাশিয়া। এ আমন্ত্রণের জন্য নানামুখী তৎপরতা চালানো হয়।
ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি গত ৩ জুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে তার দপ্তরে সাক্ষাৎ করে সের্গেই লাভরভের চিঠি তার হাতে তুলে দেন। ওই সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্য কাউকে ব্রিকসের বৈঠকে পাঠানোর বিষয়টি উলেস্নখ করেন।
কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ব্রিকসের কলেবর বাড়ানোর বিষয়ে চীন আর ভারতের পরস্পরবিরোধী এমন অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে অংশগ্রহণ বাঞ্ছনীয় ছিল। কারণ নতুন সদস্যপদ এবার দেওয়া হোক বা না হোক, বৈঠকে বাংলাদেশের যথাযথ অংশগ্রহণ করাটা ছিল জরুরি।
এই বিশ্লেষকদের মতে, এ অংশগ্রহণ থেকে ব্রিকস জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে, তার প্রতিফলন ঘটবে। কারণ এ বৈঠকে সদস্য নয়, এমন দেশগুলোর আমন্ত্রিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ওপর বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
রাশিয়া, ব্রাজিল, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা- প্রাথমিকভাবে এই পাঁচ দেশ ব্রিকস গঠন করেছিল। ২০২৩ সালের আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলনে সৌদি আরব, আর্জেন্টিনা, ইরান, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইথিওপিয়াকে সদস্য হতে আমন্ত্রণ জানায় ব্রিকস। পরে জোটের সদস্য করা হয় আর্জেন্টিনা বাদে বাকি পাঁচ দেশকে।