বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
গ্রামকে নাগরিক সুবিধার আওতায় আনা হবে
দেশের ৫৮ জেলা ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে অসহায় মানুষের জীবন বদলে গেছে
প্রকাশ | ১২ জুন ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
'সরকার দেশের সকল গ্রামের মানুষের জন্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে' জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'আমরা প্রতিটি গ্রামকে নাগরিক সুযোগ-সুবিধার আওতায় আনব এবং প্রতিটি গ্রামের মানুষ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে।'
মঙ্গলবার ঈদুল আজহার পাঁচ দিন আগে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি বাড়ি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, কক্সবাজারের ঈদগাঁও ও ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের কাছে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের ফ্ল্যাগশিপ আবাসন কর্মসূচি আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত বাড়িগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে হস্তান্তর করেন জনপ্রতিনিধি ও মাঠ প্রশাসন। ঘর বিতরণের পাশাপাশি ২৬টি জেলার সব উপজেলাসহ আরও ৭০টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে দেশের ৫৮ জেলা ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত হলো।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে যাদের ঘরবাড়ি একেবারে ভেঙে গেছে, তাদের ঘর তৈরি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'গত কয়েকদিন আগে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস হয়ে গেল। সেখানে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ইতোমধ্যে আমরা তালিকা করেছি কোন কোন এলাকায় কতগুলো ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কতগুলো আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। যেগুলো সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে,
\হতাদের আমরা ঘর তৈরি করে দেব। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো নির্মাণে উপকরণ দিয়ে সহায়তা করব। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের পাশে আমরা আছি। প্রাথমিকভাবে যা যা প্রয়োজন তা করে যাচ্ছি।'
গত ২৬ মে রাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল। সরকারি হিসাবে, ঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে, ঘর ভেঙে ও দেয়াল ধসে পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, ভোলা, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১৬ জনের মৃতু্য হয়েছে।
ঘরবাড়ি যাদের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'প্রত্যেকে যেন ঘর নির্মাণ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আমি করে দেব। ইতোমধ্যে সেভাবে আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রত্যেক এলাকা থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি। সেই অনুযায়ী আমরা সহায়তা পাঠাব।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'জাতির পিতাকে হত্যা করার পর অবৈধভাবে ক্ষমতার দখলকারীরা এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে ব্যস্ত ছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের সেবক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তখন থেকেই ভূমিহীন মানুষের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তখন বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তার পরও ভূমিহীন মানুষের মধ্যে ঘর তৈরি করার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প নিয়ে আমরা ঘর বানাতে শুরু করি।'
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে অসহায় মানুষের জীবন বদলে গেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'দেশের মানুষের সেবক হিসেবেই বাবার মতো সেবা করে যাব। এই দেশের মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত জীবন পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আশ্রয়ণের মাধ্যমে মানুষের যে পরিবর্তন হয়েছে, তাতে মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন?্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।'
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। সেটিই আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। এজন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর মতো আজীবন দেশের মানুষের কল্যাণে ও তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'প্রত্যেকটা গ্রামকে আমরা নাগরিক সুবিধার আওতায় নিয়ে আসব। সেই নাগরিক সুবিধা আমরা নিশ্চিত করে যাচ্ছি। পাশাপাশি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, বিদু্যতের ব্যবস্থা করা, দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করছি; যার সুফল মানুষ ভোগ করছে।'
যে ৭০ উপজেলা ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত হলো
ঢাকা জেলার ধামরাই; গোপালগঞ্জের গোপালগঞ্জ সদর; শরীয়তপুরের নড়িয়া, জাজিরা; ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা; নেত্রকোনার খালিয়াজুরী; কক্সবাজারের কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, ঈদগাঁও; চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সন্দ্বীপ, সীতাকুন্ড; চাঁদপুরের হাইমচর, চাঁদপুর সদর; লক্ষ্ণীপুরের রামগতি, কমলনগর; নোয়াখালীর হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর; কুমিলস্নার আদর্শ সদর, মুরাদনগর; ফেনীর সোনাগাজী; গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সাঘাটা; কুড়িগ্রামের কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, নাগেশ্বরী, রাজারহাট, চররাজিবপুর, রৌমারী; রংপুরের গংগাচড়া, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ; লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, আদিতমারী; নীলফামারীর সৈয়দপুর, সিরাজগঞ্জের চৌহালী; বগুড়ার শেরপুর; সাতক্ষীরার আশাশুনি; যশোরের মনিরামপুর; খুলনার পাইকগাছা, কয়রা, দাকোপ; নড়াইলের লোহাগড়া, নড়াইল সদর; বাগেরহাটের বাগেরহাট সদর, শরণখোলা, রামপাল, মোলস্নাহাট, ফকিরহাট, চিতলমারী, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, কচুয়া; ভোলার বোরহানউদ্দিন, চরফ্যাশন, মনপুরা; বরগুনার বরগুনা সদর, আমতলী; বরিশালের বরিশাল সদর, হিজলা, গৌরনদী; হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ; সুনামগঞ্জের দিরাই, ছাতক, জগন্নাথপুর, জামালগঞ্জ এই ৭০ উপজেলাকে সম্পূর্ণ ভূমিহীন এবং গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গৃহহীনদের পুনর্বাসন কর্মসূচি শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর এ কর্মসূচিকে অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহ ও ভূমিহীনদের ঘর ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেন।