সিলেটে টিলা ধসে মাটিচাপা পড়ার প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা পর একই পরিবারের তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দল। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই বছরের শিশুসন্তানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মারা যাওয়া তিনজন হলেন- চামেলিবাগ এলাকার ২ নম্বর রোডের ৮৯ নম্বর বাড়ির মৃত রফিক উদ্দিনের ছেলে করিম উদ্দিন (৩১), তার স্ত্রী শামীমা আক্তার রোজী (২৫) এবং তাদের শিশুসন্তান তানি (২)। এর আগে সোমবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে টিলা ধসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত আরও তিনজনকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া চামেলিবাগ এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ঘটনার সময় সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। চাপাপড়া আধাপাকা ঘরটি ছিল টিলার নিচে। অনেক বৃষ্টিপাতের কারণে টিলার বিশাল একটি অংশ ধসে ঘরটির ওপর পড়লে করিম, তার স্ত্রী ও শিশুসন্তান মাটিচাপা পড়ে। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তাদের সন্ধান মেলেনি। পরে সেনাবাহিনী তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার পরপর ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয়রাসহ সিসিকের কর্মীরা নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার তৎপরতা চালালেও সন্ধান মেলেনি। পরে উদ্ধার কাজে যোগ দেয় সেনাবাহিনী।
সিসিকের ৩৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'টিলা ধসে মাটিচাপা পড়ে যাওয়া একই পরিবারের তিনজনের সন্ধানে ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর একটি দল। একপর্যায়ে মাটিচাপা পড়া করিমসহ তার স্ত্রী ও শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক।'
তিনি বলেন, 'ধসে পড়া বাড়িতে দুটি পরিবার থাকতো। টিলা ধসে চাপাপড়া ঘরের নিচে দুই পরিবারের ছয়জন আটকে পড়েছিলেন। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং আমরা এসে এক পরিবারের তিনজনকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই।'
শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ চৌধুরী জানান, বৃষ্টির কারণে টিলা ধসে একটি আধাপাকা ঘরের ওপরে পড়ে ওই ঘরের নিচে একই পরিবারের তিনজন চাপা পড়ে মারা যান। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, 'ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। সিলেটে বৃষ্টিপাত বেড়েছে। বর্ষাকালে এখানে টিলা ধসের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।'
এই সময়ে টিলার নিচে বা ওপরে কাউকে না থাকার অনুরোধ জানিয়ে মেয়র বলেন, 'অপরিকল্পিতভাবে টিলা কাটার কারণে ধসের ঘটনা ঘটছে। তাই টিলা কাটা এবং টিলার আশপাশে থাকা থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। জনসচেনতা বাড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় মাইকিং করবে সিলেট সিটি করপোরেশন।'
পরে দুপুরে মেয়রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জরুরি বিশেষ সভায় টিলায় নিহতদের পরিবারকে ঘর নির্মাণ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমানসহ বিভিন্ন শাখা প্রধানরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
তিন ঘণ্টার ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা
এদিকে, সোমবার ভোর থেকে টানা তিন ঘণ্টার ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে সিলেট নগরীর নিম্নাঞ্চল। অনেক স্থানে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে অনেক বাসাবাড়ির ভেতরেও। এ পরিস্থিতিতে নগরীর বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
নগরীর যতরপুর, পাঠানটুলা, বর্ণমালা পয়েন্ট, বাগবাড়ি, দরগা মহলস্না, উপশহর, সোবহানীঘাট, তেরোরতন, মাছিমপুর, তালতলা, শেখপাড়া ও বেতেরবাজার এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর আগে শনিবার রাতেও বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকা পস্নাবিত হয়। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর সাংবাদিকদের বলেন, 'এটাকে ঠিক জলাবদ্ধতা বলা যাবে না; প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় পানি জমেছে। এ ছাড়া পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সুরমা নদীও টইটম্বুর। এতে নগরে প্রবাহিত ছড়া ও খাল দিয়ে পানি গিয়ে নদীতে মিশতে পারছে না। তাই বৃষ্টিতে নগরীর নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ছে।'