যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা পাকিস্তান দ্বিতীয় ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের দেওয়া ছোট লক্ষ্য তাড়া করেও হেরেছে। টানা দুই হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে পাকিস্তান। একই বাস্তবতায় গতবারও পড়েছিল পাকিস্তান। ভারত ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হেরে খাদের কিনারে পৌঁছে গিয়েছিল তারা। আহত বাঘের মতো সেখান থেকে ফিরেই সেবার ফাইনাল খেলেছিল পাকিস্তান। আরও একবার তেমন মিরাকলের খোঁজে মেন ইন গ্রিনরা।
গ্রম্নপের শেষ দুই ম্যাচ জিতে সুপার এইটে খেলার আশায় আছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম। ভারতের কাছে হারের পর বাবর বলেন, 'শেষ দুই ম্যাচ জিতে পরের রাউন্ডে খেলতে চাই আমরা।'
পাকিস্তানের পরবর্তী ম্যাচ কানাডা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। আজ মঙ্গলবার নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে কানাডার বিপক্ষে লড়বে পাকিস্তান। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বিতর্কিত নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বোলারদের দারুণ নৈপুণ্যে ভারতকে ১১৯ রানে গুটিয়ে দিয়ে জয়ের সুযোগ পেয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় হাতের মুঠো থেকে জয় ফসকে যায় পাকিস্তানের। ৭ উইকেটে ১১৩ রান করলে, ৬ রানে ম্যাচ হারে বাবরের দল।
স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত হার। ফলে দুই ম্যাচ বাকি থাকলেও এখনোই বিদায়ের ক্ষণ গণনা করতে হচ্ছে বাবর আজমদের। তবে সুযোগ যে একদমই নেই, তাও নয়। অনেক 'যদি-কিন্তু'র ওপর দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের সুপার এইট স্বপ্ন।
বিশ্বকাপে গ্রম্নপ 'এ'-তে দুই ম্যাচ শেষে পাকিস্তান আছে পাঁচ দলের মধ্যে চার নম্বরে। তাদের নিচে শুধুই আয়ারল্যান্ড। তারাও এখনো কোনো ম্যাচেই জয় পায়নি। সবার ওপরে থাকা ভারত ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই দুটি করে ম্যাচ জিতে শীর্ষ দুইয়ে। সুপার এইটে জায়গা করে নিতে গ্রম্নপের সেরা দুইয়ে থাকতেই হবে পাকিস্তানকে।
সেরা দুইয়ে জায়গা করে নিতে পাকিস্তানকে প্রথমে বাকি দুই ম্যাচে কানাডা ও আয়ারল্যান্ডকে হারাতেই হবে। শুধু জিতলেই হবে না, জয়টা হতে হবে বড় ব্যবধানের। কারণ সুপার এইটে জায়গা করে নিতে রানরেটে যুক্তরাষ্ট্র ও এক ম্যাচে জয় পাওয়া কানাডাকে পেছনে ফেলা জরুরি তাদের জন্য।
পাকিস্তানের জয়ের পাশাপাশি বাকি দুই ম্যাচেই হারতে হবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে। যুক্তরাষ্ট্রের পরের দুই ম্যাচ ভারত ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। স্বাগতিকরা এই দুই ম্যাচে যত বড় ব্যবধানে হারে পাকিস্তানের লাভ ততই।
শুধু যুক্তরাষ্ট্র হারলেই চলবে না, হারতে হবে কানাডাকেও। আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে চমক দেওয়া কানাডাকে হারতে হবে বাকি দুই ম্যাচে। এই দুই ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ অবশ্য ভারত ও পাকিস্তান নিজেই। একই সঙ্গে একটা ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের জয়ও প্রার্থনা করতে হচ্ছে পাকিস্তানকে। উড়তে থাকা যুক্তরাষ্ট্রকে যদি আয়ারল্যান্ড হারাতে পারে, তবে সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে পাকিস্তানের।
গ্রম্নপের সেরা দুইয়ে থাকা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের রানরেট যথাক্রমে ১.৪৫৫ ও ০.৬২৬। চার নম্বরে থাকা পাকিস্তানের রানরেট ০.১৫০। ভারত বাকি দুই ম্যাচে হারলেও রানরেটে তাদের পেছনে ফেলা পাকিস্তানের জন্য প্রায় অসম্ভব। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বাকি দুই ম্যাচে হারলে এবং পাকিস্তান বড় ব্যবধানে জিততে পারলে এই দুই দলের মধ্যে যারা রানরেটে এগিয়ে থাকবে তারাই পাবে সুপার এইটের টিকিট।
নিজেদের শেষ দুই ম্যাচ জিতে সুপার এইটে খেলার আশায় আছেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর। বাবর বলেন, 'আমাদের শেষ দুই ম্যাচ জিততেই হবে। তার আগে আমরা নিজেরা আলোচনায় বসবো এবং নিজেদের ভুলগুলো খুঁজে বের করব এবং সমাধানের পরিকল্পনা সাজাব। এখন আমরা শেষ দুই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে রয়েছি।'
ভারতের বিপক্ষে হারের জন্য শেষ দশ ওভারে বাজে ব্যাটিংকে দুষলেন বাবর, 'আমরা প্রথম ছয় ওভারে খুব বেশি ভালো খেলিনি। লক্ষ্য ছিল ৪০-৪৫ রান করা। কিন্তু সেটা করতে পারিনি।'
নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে উইকেট নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, এ ম্যাচের উইকেট নিয়ে ইতিবাচক কথা বলেছেন বাবর। তিনি বলেন, 'উইকেট ভালো ছিল। বল ভালোভাবেই ব্যাটে আসছিল। কিছুটা মন্থর ছিল। কিছু বল বাড়তি বাউন্সও করেছে। কিন্তু এ ধরনের ড্রপ-ইন পিচে এটুকু হয়েই থাকে। একটি-দুটি বল এরকম হবেই।'
ভারতের বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন বাবর, 'আমার মনে হয়, প্রথম দশ ওভারের পর তারা (ভারত) ভালো বোলিং করেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল ১২০, প্রথম দশ ওভারে বল প্রতি রান নিয়েছি আমরা। কিন্তু এরপর একের পর এক উইকেট হারিয়েছি। সাথে বেশ কিছু ডট বলও করেছি। সমীকরণ একেবারেই সহজ ছিল। স্বাভাবিক ব্যাটিং, স্ট্রাইক রেটেট করা, ওভারে ৫-৬ রান করা এবং মাঝেমধ্যে বাউন্ডারি। কিন্তু ঐ সময় আমরা অনেক ডট বল দিয়েছি। ফলে চাপে পড়ে আমরা দ্রম্নত ৩টি উইকেট হারিয়ে ফেলি। আর টেলএন্ডারদের কাছ থেকে তো খুব বেশি আশা করা যায় না।'