ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ডক্টর ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বর্তমান বাজেট একটি উচ্চাভিলাষী, ফাঁকাবুলির বাজেট। পাশাপাশি এটি বৈষম্যমূলক বাজেট, সেইসঙ্গে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অর্থহীন বাজেট এটি।
সোমবার রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক পস্ন্যাটফর্ম আয়োজিত জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ ও বিরাজমান পরিস্থিতি অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের প্রাপ্তি শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই বাজেটে শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। এটি এমন একটি বাজেট, যা জবাবদিহিতাহীন। এটি দুর্নীতি সহায়ক ও অনৈতিক বাজেট। এই কথাগুলো বলার অবশ্যই যৌক্তিক কারণ আছে। প্রথমে যদি কালো টাকার বিষয়টি বলি, কালো টাকাকে বৈধতা দেওয়া যাবে না এমন ঘোষণা কিন্তু আমাদের আছে। আপনি সৎভাবে উপার্জন করে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর দেবেন, অন্যজন অনৈতিকতার সঙ্গে দুর্নীতি করে প্রচুর পরিমাণে আয় করে নামমাত্র ১৫ শতাংশ কর দেবেন। আবার এসব বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্নও তোলা যাবে না।
তিনি বলেন, যারা দুর্নীতি করছে তাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে, লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে সারাবছর অবৈধভাবে আয় করার। বছর শেষে রাজস্ব বিভাগ তাদের ক্লিন সার্টিফিকেট দেবে। অনেকে আবার শুদ্ধাচার পুরস্কার পাবেন, সেরা করদাতার পুরস্কারও পাবেন। এর মাধ্যমে দেশবাসীকে বোঝানো হচ্ছে তোমরা চাইলে এই পথটা অনুসরণ করো। এসবের কারণে আমরা আগামী প্রজন্মকে বলার সাহস পাব না যে তোমরা ভালো আদর্শ অনুসরণ করো। এই বলার সাহসটা আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। নৈতিকতার যে ভিত্তি তা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে।
নাগরিক পস্ন্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে নিয়ম রাখা হয়েছে তা সংবিধান পরিপন্থি। এই বাজেট বে-নজির বাজেট।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের ঘোষিত নীতির সঙ্গে বাজেটে অন্তত পাঁচটি ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যত্যয় হয়েছে। ৭ জানুয়ারিতে যে নির্বাচন প্রক্রিয়া হয়েছে, সেখানে বর্তমান শাসক দল যে ইশতেহার দিয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে তারা ইশতিহারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকেনি। প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী ইশতিহারের বড় ধরনের বরখেলাপ হয়েছে। বর্তমান সরকারের যে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা আছে তার সঙ্গে কিন্তু বর্তমান প্রস্তাবিত বাজেটের কৌশল এবং বরাদ্দের মিল নেই।
এর আগে সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান ব্রিফিং-এ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, আয়করে কোথায় ছাড় আছে সেটা বাজেটে বলা হয়েছে। বড় ভাবে ছাড় কমানো হয়েছে পরোক্ষ করে। গার্মেন্টস, জ্বালানি, মাইক্রোক্রেডিটের মতো প্রত্যক্ষ কর ছাড়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই, আগামীতে কী করা হবে এই বিষয়ে দিকনির্দেশনা নেই। আয়করের ছাড়ের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই।
নাগরিক পস্ন্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।