খুব কাছ থেকে কনস্টেবল মনিরুলকে গুলি করেন সহকর্মী কাওসার

পরিবার বলছে 'কাওসার মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত'

প্রকাশ | ১০ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রাজধানীর কূটনীতিক এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল হককে খুব কাছ থেকে গুলি করেন আরেক কনস্টেবল কাওসার আহমেদ। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মনিরুল। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা রোববার এ তথ্য জানিয়েছেন। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়ে একই চিত্র। ফুটেজে গার্ডরুমের ভেতরে থাকা কনস্টেবল কাউসার আহমেদের সঙ্গে বাইরে থাকা কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের কয়েক সেকেন্ড কথা হয়। এই কথার ফাঁকেই ভেতর থেকে কাউসার খুব কাছ থেকে গুলি করলে মনিরুল রাস্তায় পড়ে যান। এই ঘটনায় মনিরুলের ভাই কনস্টেবল মাহবুবুল হক মামলা করেছেন, তাতে আসামি করা হয় কাউসারকে। তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হলে বিচারক ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন। এর আগে শনিবার রাতে ফিলিস্তিন দূতাবাসের নিরাপত্তাকর্মীদের কক্ষে গুলির এ ঘটনা ঘটে। ঘটনায় পথচারী জাপান দূতাবাসের এক গাড়িচালক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি গুলশানের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, মনিরুল ও কাওসারের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে মনিরুলকে খুব কাছ থেকে গুলি করেন কাওসার। তবে কী নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীম বলেন, 'এ ঘটনায় নিহত মনিরুলের বড় ভাই মাহাবুবুল হক বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় আসামি কাওসারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলায় উলেস্নখ করা হয়েছে, মনিরুলের সঙ্গে কাওসারের বাগ্‌বিতন্ডা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মনিরুলকে গুলি করেন কাওসার। মামলার তথ্য সূত্রে জানা যায়, নিহত মনিরুলের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলায়। আর আসামি কাওসারের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায়। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র বলছে, কাওসারকে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত মনে হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না। তার গত ১৫ দিনের কর্মকান্ড পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তিনি যাদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন, যাদের সঙ্গে থেকেছেন তাদের সঙ্গে তদন্তকারীরা কথা বলবেন। ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় যা ধরা পড়ল তিন মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের সিসিটিভির একটি ফুটেজ পুলিশের হাতে পৌঁছেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে। ওই ফুটেজটিতে দেখা যায়, মনিরুল ইসলাম অস্ত্র নিয়ে গার্ড রুমের বাইরে লাগোয়া ফুটপাথে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর কাওসার গার্ড রুমের ভেতর থেকে বাইরে আসেন। মনিরুল এ সময় কাওসারের কাছে আসেন এবং একটু দূরত্ব রেখে তাদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। এরপরেই কাওসার ভেতরে ঢুকে যান এবং গার্ডরুম লাগোয়া ফুটপাথ দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন মনিরুল। গার্ডরুমের থাই গস্নাস সরিয়ে কাওসারের সঙ্গে মনিরুলের আবার কথা হয়। এ সময় তাকে হাত নাড়াতে দেখা যায়। পরে তিনি গার্ডরুমের আরো কাছে আসেন এবং কয়েক সেকেন্ড পরেই ভেতর থেকে কাওসারের অস্ত্র গর্জে উঠে। সঙ্গে সঙ্গে মনিরুল ফুটপাথ থেকে রাস্তায় পড়ে যান এবং পরে আবার দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সময় না দিয়ে কাওসার বাইরে এসে তার শরীর লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। এরপরই মনিরুলের দেহ নিথর হয়ে যায়। গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, 'মনিরুলের মরদেহ কিছুক্ষণ পড়ে থাকার পর তা সেই পথ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে অতিক্রম করা সাজ্জাদ হোসেনের চোখে পড়ে। তিনি জাপান দূতাবাসের গাড়ি চালক।' সাজ্জাদ মরদেহটি দেখে এগিয়ে যান। তখন কাউসার তাকে লক্ষ্য করেও কয়েক রাউন্ড গুলি করেন। আহত হয়ে সাজ্জাদ বেশ কিছুদূর গিয়ে পুলিশের একটি গাড়ির সামনে পড়ে যান। পরে তাকে পুলিশই ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট ৩৮ রাউন্ড গুলি চালিয়েছেন কাওসার। কনস্টেবল মনিরুল ইসলামের দেহ তাতে ঝাঁঝরা হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃতু্য হয়। অন্যদিকে সাজ্জাদের শরীরের তিনটি গুলি লাগে। এর দুইটি পেটে এবং একটি হাতে। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত। তবে এই দৃশ্য সিসি ফুটেজে ধরা পড়েনি। পরিবার বলছে 'মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত' এদিকে, পরিবারের সদস্যরা বলছেন, চাকরিরত অবস্থায় প্রায় ১৪ বছর ধরে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন কাওসার। তিনি সরকারিভাবে হাসপাতালে গিয়ে মানসিক রোগের চিকিৎসাও নিয়েছেন। রোববার কাওসারের মা মাবিয়া খাতুনের সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'আমার ছেলে এমনিতে খুব ভালো। তার মাথার সমস্যা আছে। সে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে অসুস্থ হয়। তার সঙ্গে আমার শনিবার রাত ৮টার শেষ কথা হয়। আমার সঙ্গে ভালোভাবেই কথা বলেছে। মা কেমন আছ, আব্বা কেমন আছে জিজ্ঞেস করে। তবে কয়েক দিন ধরে বাড়িতে একটু কম কথা বলত আমার ছেলে।' কাওসার মাদকাসক্ত কিনা জানতে চাইলে তার স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিন সাথি বলেন, 'তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত; মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। মাদকের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। চার-পাঁচ দিন ধরে পরিবারের সঙ্গে কম কথা বলতেন।'