আমদানি শুল্ক নির্ধারণ

অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশ | ১০ জুন ২০২৪, ০০:০০

রেজা মাহমুদ
দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে তোড়জোড় থাকলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার পাশাপাশি নীতিগত দুর্বলতা এই খাতে বিনিয়োগে বাধা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগে আমদানি শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে সব ধরনের শিল্পের ক্যাপিটাল মেশিনারি বা মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর ১ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হবে। যা আগে শূন্য ছিল। আসন্ন বাজেটে এমন প্রস্তাব বিদেশি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিনিয়োগকারী ও শিল্প উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে আবেদনের প্রস্তুতি নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পিত শিল্পায়নে অর্থনৈতিক জোনের বিকাশের বিকল্প নেই। কিন্তু এসব অঞ্চলে বিনিয়োগ টানতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন। নইলে কেউ এখানে বিনিয়োগ করবে না। এ ছাড়াও সরকার স্থাপিত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প ইউনিট কর অবকাশ সুবিধা পাবে, কিন্তু বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত শিল্প ইউনিট কর অবকাশ সুবিধা পাবে না, তা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০-এর সম্পূর্ণ পরিপন্থি এবং তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন শিল্প উদ্যোক্তরা। এতে নতুন শিল্পায়ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। ফলে কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্থ হবে। এছাড়া, মূলধনী যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, নির্মাণ উপকরণ ও গাড়ি আমদানিতে শুল্ক কর পরিহারের প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। এ বিষয়ে মেঘনা গ্রম্নপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জেনারেল ম্যানেজার (হিসাব) সুমন ভৌমিক যায়যায়দিনকে বলেন, ' অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে, সেটি দেখিয়ে আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করে থাকি। বিনিয়োগকারীরা এসব সুবিধা দেখেই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করে থাকে। এখন যদি তাদের বলি, যে সুবিধার কথা বলে তাদের এনেছিলাম, এখন সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে, তাহলে আর নতুন করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কেউ আসবে না '। তিনি আরও বলেন, 'অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরেও ক্যাপিটাল মেশিনারির ওপর ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক, আবার যদি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভেতরও ১ শতাংশ দেওয়া লাগে তাহলে কোনো ভেরিয়েশন রইলো না। অর্থনৈতিক অঞ্চলের এই সুবিধা দেখে অনেক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী আসত। একটা পরিকল্পিত শিল্পায়ন হচ্ছিল, সেটি এখন বাধাগ্রস্ত হবে।' বেজা সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রস্তাবিত এফডিআই আছে দেড় বিলিয়নের মতো। বর্তমানে অঞ্চলের মধ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শিল্পের ক্যাপিটাল মেশিনারি বা মূলধনী যন্ত্রপাতি ও নির্মাণ সামগ্রীর ওপর কর ছাড় দেওয়া হয়। ক্যাপিটাল মেশিনারির ওপর কোনো চার্জ ছিল না, কিন্তু নতুন বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিতে হবে।' মেঘনা অর্থনৈতিক জোনের সংশ্লিষ্টরা যায়যায়দিনকে বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০ প্রণয়ন ও বাংলাদেশে পরিকল্পিত শিল্পায়নের বিকাশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের জন্য বেসরকারি খাতে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে মেঘনা গ্রম্নপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ তিনটি ইকোনমিক জোনের বাস্তবায়ন সম্পন্ন করে এবং আরও একটি জোন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তিনটি জোনে দেশি বিদেশি ৩৩ টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করেছে এবং প্রায় ৩০ (ত্রিশ) হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এবার বাজেট প্রণোদনা না দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাস্তবায়ন ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। এদিকে প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ক্যাপিটাল মেশিনারিতে ট্যাক্স বসানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম বলেন, 'কিছু কিছু ক্যাপিটাল মেশিনারিতে যেখানে শূন্য শতাংশ ছিল, সেখানে আমরা ১ শতাংশ করেছি। আমরা কোনো জায়গায় শূন্য দেখতে চাই না। অন্তত ১ শতাংশ থাকবে। আমরা কর আহরণ বাড়াতে চাই।' বেজা সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত অনুমোদিত অর্থনৈতিক অঞ্চল মোট ৯৭টি; এর মধ্যে সরকারি অঞ্চল রয়েছে ৬৮টি এবং বেসরকারি ২৯টি। এগুলোর ১১টি উৎপাদনে রয়েছে। যারমধ্যে সরকারি ৩টি ও বেসরকারি ৮টি। আর নতুন করে বাস্তবায়নাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চল ২৯টির মধ্যে সরকারি ১৫টি ও বেসরকারি ১৪টি। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে উৎপাদনরত শিল্প প্রতিষ্ঠান মোট ৫০টি। এর মধ্যে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১৩টি এবং বেসরকারিতে ৩৭টি অঞ্চল রয়েছে। এ ছাড়া, নির্মাণাধীন ৫৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬টি সরকারি অঞ্চলে ও ১৭টি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে রয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে প্রায় ৬০ হাজার লোক কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ৫৩ হাজার জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।