সুপার এইটের পথে বাধা দক্ষিণ আফ্রিকা

প্রকাশ | ১০ জুন ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া ডেস্ক
চলতি টি২০ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে ২ উইকেটের রোমাঞ্চর জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ দল। জয় নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করতে পারলেও, ব্যাটিং নিয়ে উদ্বেগ আছে টাইগার শিবিরে। তবে প্রথম ম্যাচ থেকে পাওয়া পূর্ণ দুই পয়েন্ট দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাড়তি অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে বাংলাদেশ দলকে। যদিও টি২০তে এখন পর্যন্ত প্রোটিয়াদের বিপক্ষে আট ম্যাচ খেলে কোনো জয় নেই টাইগার শিবিরের। কিন্তু এবার হারের বৃত্ত ভাঙতে আত্মবিশ্বাসী নাজমুল হোসেন শান্তর দল বাংলাদেশ। এমন এক সমীকরণকে সামনে রেখে আজ সোমবার টি২০ বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলার আশা করছে বাংলাদেশ। আজ বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হবে ম্যাচটি। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি স্পোর্টস ও গাজী টিভি। শ্রীলংকার বিপক্ষে জয়টা সবার আগে প্রয়োজন ছিল সেটাই হয়েছে। ১২৫ রান তাড়া করে যেভাবে জেতা উচিত সেটা অবশ্য হয়নি। বাংলাদেশ দলের সেই বিশাল চাপ এখন নেই। সুপার এইটে যেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে জিততেই হবে এমন সমীকরণ অন্তত নেই। তবুও জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে প্রোটিয়াদের হারাতে পারলে গ্রম্নপ সেরা হয়ে পরের রাউন্ডে যাওয়ার সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের। একদিন আগে ডালাসে লংকানদের হারিয়ে বিমান ধরে শনিবার সকালে নিউইয়র্কে নেমেছে বাংলাদেশ দল। বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ নেই। আজই যে প্রতিপক্ষ প্রোটিয়ারা। নিউইয়র্কের উইকেটের চরিত্র ও প্রথম ম্যাচে জয়ের আত্মবিশ্বাস কাজে লাগতে পারলে নাজমুল হোসেনদের ভালো সুযোগই আছে। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ মাঠে নামবে আজ রাত সাড়ে ৮টায়। নিউইয়র্কের উইকেট ও আউট ফিল্ড নিয়ে বিতর্ক থামছেই না। স্স্নো উইকেট আরও স্স্নো আউটফিল্ড। মাটি কামড়ে শট মারলে বাউন্ডারি লাইনেই যাচ্ছে না। আবার উইকেটে হঠাৎ অতিবাউন্স, কখনো অতিমাত্রায় নিচু হয়ে যাওয়ার উদ্ভট স্বভাব তো রয়েছেই। মাঠের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ খেলেছিল ভারতের বিপক্ষে। প্রোটিয়ারা অবশ্য নিউইয়র্ক থেকেই নড়েনি। টানা দুটি ম্যাচ তারা এখানেই খেলেছে। শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৭৮ রান ও শনিবার নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১০৪ রান তাড়া করতে গিয়েও হারের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। গতকাল ভারত ও পাকিস্তানের ম্যাচ যে উইকেটে হয়েছে আজও বাংলাদেশ সেই উইকেটে খেলবে। নিউইয়র্কের উইকেট মিরপুরের চেয়েও অনেক স্স্নো। উইকেট বিবেচনায় বাংলাদেশের পক্ষেই থাকবে। সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলে ফলও পক্ষে চলে আসতে পারে। গ্রম্নপ পর্বে ইতোমধ্যে শ্রীলংকা ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু মন্থর উইকেটের কারণে দুই ম্যাচেই জয় পেতে বেগ পেতে হয়েছে প্রোটিয়াদের। ইতোমধ্যেই নিউইয়র্কের উইকেট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। উইকেটের উন্নতিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে আইসিসি। তবে উইকেট মন্থর হলে সেখান থেকে বেশি সুবিধা পাবে বাংলাদেশই। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, 'দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমাদের ম্যাচের আগে নিউইয়র্কে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। তাই উইকেট সম্পর্কে আমরা কিছুটা ধারণা পাব। উইকেট যেমনই হোক না কেন, আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে আমরা যে কোনো দলকে হারাতে পারি বলেই আমি বিশ্বাস করি।' বাংলাদেশের বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণেই আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন নাজুমল হোসেন শান্ত। ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফরম্যান্স করছেন দলের বোলাররা। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে বেশিরভাগ সময় ভেস্তে গেছে বোলারদের অর্জন। আর তাই বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত বলেন, বেশ কিছু দিন যাবতই আমাদের বোলাররা সেরা ফর্মে আছে। বিশ্বের যে কোনো ব্যাটিং লাইন আপকে ধসিয়ে দিতে পারে তারা। আগামী বছরগুলোতেও তারা সেটা ধরে রাখতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।' তিনি আরও যোগ করে বলেন, 'ব্যাটিং উদ্বেগ থাকলেও আমি খুব বেশি চিন্তিত নই। সব ব্যাটসম্যান একসঙ্গে জ্বলে উঠবে এমনটা আশা আপনি করতে পারেন না। কিন্তু এটাও সত্য, কাজ করার জায়গা আছে। আমরা আমাদের ব্যাটিং সমস্যা সমাধানের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি।' শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের জন্য বাংলাদেশের বোলারদের কৃতিত্ব দিতে হবে। প্রথমে ব্যাট করা শ্রীলংকাকে ৯ উইকেটে ১২৪ রানের বেশি করতে দেয়নি টাইগার বোলাররা। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বেগ পেতে হয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের ২ উইকেটের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে মিডল অর্ডার ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়ের ২০ বলে ঝড়ো ৪০ রান। ৩৬ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলেন লিটন দাস। স্ট্রাইক রেট কম থাকলেও ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী লিটনের ধীর গতির ব্যাটিং ম্যাচে বড় ভূমিকা রাখে। শেষদিকে মাহমুদউলস্নাহর অভিজ্ঞতায় জয়ের হাসি হাসে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত বলেন, 'আমি মনে করি, শ্রীলংকা সত্যিই ভালো বোলিং করেছে। কিন্তু এ রকম উইকেটে আমাদের সহজেই জেতা উচিত ছিল। লিটনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সে লড়াই করেছে ঠিকই, কিন্তু তার দক্ষতাও দেখিয়েছে। আমার মনে হয়, সে সত্যিই ভালো ব্যাটিং করেছে। হৃদয় সাহসী ছিল। তার খেলার ধরন সত্যিই আমাদের দারুণভাবে সাহায্য করেছে।' সমালোচনায় বিদ্ধ লিটন দাস শ্রীলংকার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই ৩৬ রানে সময়োপযোগী ইনিংস খেলেন। তবে টপ অর্ডারের অপর তিন ব্যাটার সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ভরসা করার মতো কিছুই করতে পারছেন না। উইকেট ও টপ অর্ডারের পরিস্থিতি বিবেচনা করে একাদশে আজ একটি পরিবর্তন হতেও পারে। সে ক্ষেত্রে জাকির আলী ও শেখ মেহেদী হাসানের একজনের সুযোগ মিলে যেতে পারে। ইনজুরিতে থাকা শরিফুল ইসলামকে নিয়ে হয়তো এখনই ভাবছে দল। পরিপূর্ণ ফিট হলে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তাকে দেখা যেতে পারে। তবে উইকেট বাংলাদেশের পক্ষে হওয়ায় প্রোটিয়াদের হারানোর সুযোগটাও বেশি। প্রথম ম্যাচে রিশাদ হোসেন যে বার্তা দিয়েছেন সেটা দলকেই আত্মবিশ্বাসী করে রাখতে পারে। দুর্দান্ত লাইন-লেন্থ', অসাধারণ ধারাবাহিকতা। একজন লেগ-স্পিনারের যা প্রয়োজন সবই তিনি করেছেন। একই সঙ্গে আইপিএলের ধারাবাহিকতা বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে দেখালেন মুস্তাফিজ। ইনজুরি থেকে ফিরে প্রথম ম্যাচেই তাসকিন লংকানদের উপর প্রচন্ড চাপ তৈরি করেছেন। সাকিব প্রথমে খরচে বোলিং করলেও শেষে তিনি ভালোভাবে ফিরেছেন। এই বোলারদের কাছ থেকে আরও বেশি প্রত্যাশা করছে দল। সবার আগে স্কোর বোর্ডে রান তোলা এই মাঠে আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হতে যাচ্ছে। টপ অর্ডারের দিকে তাকিয়ে থাকবে টিম ম্যানেজমেন্ট। লংকানদের বিপক্ষে জয়ের পর অধিনায়ক নাজমুল বলেন, 'দ্বিতীয় ম্যাচটা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে। সেই ম্যাচের জন্য নতুন করে পরিকল্পনা করে আবার শুরু করতে হবে। ভালো ক্রিকেট খেলা ছাড়া উপায় নেই। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা সবাই যদি অবদান রাখতে পারি, তাহলে পরের ম্যাচেও ভালো কিছু করতে পারব।' এদিকে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ নিয়েও অল্প রান তাড়া করতে গিয়ে লড়াই করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে পারে। তবে একই মাঠে পরপর দুই ম্যাচে খেলে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া প্রোটিয়াদের জন্য কিছুটা সহজ হয়ে যাওয়ার কথা। আজ দক্ষিণ আফ্রিকা জিতলেই তাদের শেষ আট নিশ্চিত। বাংলাদেশ জিতলেও সুপার এইটে এক পা দিয়ে রাখবে।