আদালতের ক্রোক আদেশের ১৬ দিন পর পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন গোপালগঞ্জের 'সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের' নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম বলেছেন, বহুল আলোচিত সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক গোপালগঞ্জ স্পেশাল জজের আদেশে ক্রোক করা হয়েছে। এই সম্পত্তি এখন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এসেছে।
শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের অফিস কক্ষে আদালতের নির্দেশে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সাভানা পার্কের রিসিভার নিয়োগ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, 'আদালতের আদেশে এসি ল্যান্ড সদর এই ক্রোক আদেশ জারি করেছেন। দুদকের উপ-পরিচালকের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আদালত থেকে আমাকে রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। এই সম্পদের তিনটি পার্ট রয়েছে, সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কের ভিতরের মৎস্য ও জলমহাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মৎস্য বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'যেসব কৃষি জমি রয়েছে সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কৃষি বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর সেখানে যে ইকো রিসোর্টটি রয়েছে সেটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে।'
সরকারিভাবে আদালতের রায় হাতে আসেনি জানিয়ে তিনি
বলেন, 'আদালতের আদেশ পেলে আমরা সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক সুষ্ঠু ব্যবস্থার জন্য কাজ করব। আদালত এবং দুদক সবার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রকৃত সম্পত্তির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, বন্ধ করে দেওয়া নয়। সেখানে মৎস্য চাষ হবে, কৃষি জমি রক্ষণাবেক্ষণ হবে। এছাড়া আমরা একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি করে সেখানে যেসব কটেজ রয়েছে, অবকাশকালীন সময়ে লোকজন ঘুরতে আসে সেটিও আগের মতো চলবে। সেখানে যে আয় হবে তা আমরা একটি অ্যাকাউন্টে রাখবো, সেগুলো সরকারি কোষাগারে জমা হবে।'
তিনি উলেস্নখ করেন, সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কে যেসব লোকজন চাকরি করেন তাদেরও যাতে কর্মসংস্থান ঠিক থাকে তার ব্যবস্থা আমরা করব। পুরো রিসোর্টটি আগে যেভাবে ছিল সেভাবে থাকবে, তবে সেটি আমাদের ব্যবস্থাপনায় চালু করব।'
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে গোপালগঞ্জে করা সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক শনিবার সকাল থেকে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম চালু থাকবে।
এর আগে, শুক্রবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন এবং মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দু'টি দল পার্কে অবস্থান নেয়। পরে তারা পার্কের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে পার্কের নিয়ন্ত্রণ বুঝে নেয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজ বাবলী শবনম পার্কের প্রধান ফটকের পাশে মাইকিং করে পার্কটি সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেন।
একই রাতে পার্কের মাছ চুরির সংবাদ পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় প্রশাসন। এ সময় ৫৯০ কেজি মাছ জব্দ করে তা নিলামে বিক্রি করা হয় এবং পার্কের মৎস্য কর্মকর্তার নামে গোপালগঞ্জ থানায় একটি চুরির মামলা দেওয়া হয়।
এই অভিযানে গোপালগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজ বাবলী শবনম, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গোপালগঞ্জের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান, সহকারী পরিচালক সোহরাব হোসেন সোহেল, দুদক মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান ও গোপালগঞ্জ জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মো. জিলস্নুর রহমান রিগানসহ জেলা প্রশাসন ও দুদক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।