জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

প্রকাশ | ০৯ জুন ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
বয়স ৩৮ হলেও যে মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ ফুরিয়ে যাননি, সেটা আরেকবার প্রমাণ করেছেন শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে। শ্রীলংকার বিপক্ষে জয়সূচক রান নিচ্ছেন তিনি। পেছনে বিমর্ষ লংকান উইকেটকিপার কুশল মেন্ডিস -ওয়েবসাইট
পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও স্পিনার রিশাদ হোসেনের বোলিং নৈপুণ্যে জয় দিয়ে টি২০ বিশ্বকাপ শুরু করলো বাংলাদেশ। শনিবার 'ডি' গ্রম্নপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ২ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলংকাকে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর পর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষেও পরাজিত লংকানরা। আগামী ১০ জুন গ্রম্নপ পর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। দারুণ বোলিংয়ে প্রতিপক্ষকে অল্পে আটকে রাখে বোলাররা। ইনিংস বিরতিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তাসকিন আহমেদের চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস। ম্যাচ জেতার পর উদযাপন করার কথাও বললেন তিনি। কিন্তু তাওহিদ হৃদয়ের ঝড়ো ইনিংসের পরও বাকিদের ব্যর্থতায় জেগে উঠে শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত দৃঢ়তা দেখিয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ। বোলারদের কল্যাণে সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতেছে শান্তরা। টি২০ বিশ্বকাপে তিনবারের দেখায় শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয় এটি। টানা দুই ম্যাচ হেরে সুপার এইট খেলার সম্ভাবনা অনেকটাই ম্রিয়মাণ হয়ে গেল লংকানদের জন্য। সামনের ম্যাচগুলোর জন্য বড় প্রেরণা পেল বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৪ রান করে শ্রীলংকা। বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ও রিশাদ ৩টি করে উইকেট নেন। জবাবে ১৯ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৫ রান করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে তাওহিদ হৃদয় ২০ বলে ৪০, লিটন দাস ৩৮ বলে ৩৬ ও মাহমুদউলস্নাহ রিয়াদ অপরাজিত ১৬ রান করেন। ম্যাচসেরা হয়েছেন অভিষিক্ত রিশাদ হোসেন। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে শ্রীলংকাকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তৃতীয় ওভারেই পেসার তাসকিন আহমেদের হাত ধরে ম্যাচে প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। লংকান ওপেনার কুশল মেন্ডিসকে (১০) বোল্ড করেন তাসকিন। সতীর্থকে হারালেও রানের গতি বাড়ান আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। এতে ৫ ওভারেই ৪৮ রান উঠে শ্রীলংকার। পাওয়ার পেস্নর শেষ ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসে উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজুর রহমান। মিড অফে তানজিম হাসান সাকিবকে ক্যাচ দেন ৪ রান করা কামিন্দু মেন্ডিস। মারমুখী ব্যাটিংয়ে হাফ-সেঞ্চুরির পথে ছিলেন নিশাঙ্কা। নবম ওভারে দলীয় ৭০ রানে নিশাঙ্কাকে সাজঘরের পথ দেখান মুস্তাফিজ। ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৮ বলে ৪৭ রান করে কভারে বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্তকে ক্যাচ দেন নিশাঙ্কা। চতুর্থ উইকেটে ৩২ বলে ৩০ রানের জুটিতে শ্রীলংকার রান শতরানে পৌঁছে দেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও চারিথ আসালঙ্কা। ১৪ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ১০০ রান নিয়ে ভালো অবস্থায় ছিল লংকানরা। এরপর শ্রীলংকা ইনিংসে ধস নামান স্পিনার রিশাদ হোসেন। ইনিংসের ১৫ ও নিজের তৃতীয় ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নেন রিশাদ। প্রথম বলে সস্নগ সুইপে ডিপ স্কয়ার লেগে সাকিব আল হাসানকে ক্যাচ দেন ১টি ছক্কায় ১৯ রান করা আসালঙ্কা। পরের বলে আউটসাইড-এজড হয়ে সিস্নপের সৌম্য সরকারকে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক মারেন শ্রীলংকার অধিনায়ক হাসারাঙ্গা ডি সিলভা। প্রথম দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান রিশাদ। কিন্তু রিশাদকে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত করেন সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। এক ওভার পর নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন রিশাদ। ২৬ বলে ২১ রান করা ধনাঞ্জয়াকে স্টাম্প আউট করেন রিশাদ। ১০৯ রানে ৬ উইকেট পতনে চাপে পড়ে শ্রীলংকা। এরপর ইনিংসের শেষ দিকে বাংলাদেশের তিন পেসার ৩ উইকেট শিকার করলে, ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৪ রানের মামুলি সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা। দাসুন শানাকাকে ৩ রানে তাসকিন, মহীশ থিকশানাকে শূন্যতে মুস্তাফিজ ও ম্যাথুজকে ১৬ রানে শিকার করেন তানজিম। ৪ ওভার বল করে বাংলাদেশের মুস্তাফিজ ১৭ রানে ও রিশাদ ২২ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। ১৮ ম্যাচের টি২০ এটিই ক্যারিয়ার সেরা বোলিং রিশাদের। এছাড়া তাসকিন ২টি ও তানজিম ১টি উইকেট নেন। জয়ের জন্য ১২৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলেই ওপেনার সৌম্যকে হারায় বাংলাদেশ। রানের খাতা খোলার আগেই স্পিনার ধনাঞ্জয়ার শিকার হন সৌম্য। পরের ওভারে তানজিদকে ৩ রানে বোল্ড করেন থুশারা। দলীয় ৬ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলকে চাপমুক্ত করতে তৃতীয় উইকেটে ২২ বলে ২২ রানের জুটি গড়েন লিটন ও শান্ত। ষষ্ঠ ওভারে শান্তকে ৭ রানে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন থুশারা। ২৮ রানে তৃতীয় উইকেট পতনের পর ক্রিজে এসেই শ্রীলংকার বোলারদের ওপর চড়াও হন তাওহিদ হৃদয়। লিটনকে সাথে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৩৮ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়েন হৃদয়। হাসারাঙ্গার করা ১২তম ওভারের প্রথম তিন বলে তিনটি ছক্কা মারেন হৃদয়। কিন্তু চতুর্থ বলে লেগ বিফোর আউট হন ৪টি ছক্কা ও ১টি চারে ২০ বলে ৪০ রান করা হৃদয়। দলীয় ৯১ রানে হৃদয় ফেরার কিছুক্ষণ পর হাসারাঙ্গার বলে লেগ বিফোর আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৮ বলে ৩৬ রান করা লিটন। দলের রান ১০০ পার করে ব্যক্তিগত ৮ রানে পাথিরানার বলে আউট হন সাকিব। ১৮তম ওভারে রিশাদ ১ ও তাসকিন শূন্যতে ফিরলে দলীয় ১১৩ রানে অষ্টম উইকেট হারিয়ে চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ। শেষ ২ ওভারে ১১ রান দরকার পড়লেও, শ্রীলংকার পেসার দাসুন শানাকার করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মারেন মাহমুদউলস্নাহ। ওভারের বাকি পাঁচ বল থেকে ৫ রান নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মাহমুদউলস্নাহ। ১টি ছক্কায় ১৩ বলে অপরাজিত ১৬ রান করেন মাহমুদউলস্নাহ। ১ রানে অপরাজিত থাকেন তানজিম। শ্রীলংকার থুশারা ১৮ রানে ৪ উইকেট নেন। সংক্ষিপ্ত স্কোর: শ্রীলংকা: ২০ ওভারে ১২৪/৯ (নিসাঙ্কা ৪৭, কুশল ১০, কামিন্দু ৪, ধনাঞ্জয়া ২১, আসালাঙ্কা ১৯, হাসারাঙ্গা ০, ম্যাথুজ ১৬, শানাকা ৩, থিকশানা ০, পাথিরানা ০*, থুশারা ০*; তানজিম ১/২৪, সাকিব ০/৩০, তাসকিন ২/২৫, মুস্তাফিজ ৩/১৭, রিশাদ ৩/২২, মাহমুদউলস্নাহ ০/৪)। বাংলাদেশ: ১৯ ওভারে ১২৫/৮ (তানজিদ ৩, সৌম্য ০, লিটন ৩৬, শান্ত ৭, হৃদয় ৪০, সাকিব ৮, মাহমুদউলস্নাহ ১৬*, রিশাদ ১, তাসকিন ০, তানজিম ১*; ধনাঞ্জয়া ১/১১, থুশারা ৪/১৮, থিকশানা ০/২৫, হাসারাঙ্গা ২/৩২, পাথিরানা ১/২৭, শানাকা ০/১১)। ফল: বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী ম্যাচসেরা: রিশাদ হোসেন।