রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

সঠিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ খরচের পরামর্শ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
সঠিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ খরচের পরামর্শ

প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আগের বছরের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। নতুন অর্থবছরের এ বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য রাখা হয়েছে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং জিডিপির শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশ। এর আগের বছর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ছিল ৩৮ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ফলে আগের বছরের চেয়ে এবার বরাদ্দ বেড়েছে ৩ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তবে এ খাতে যে বরাদ্দ আছে তা প্রশাসনিক দক্ষতার অভাবে সঠিক কাজে লাগাতে পারে না। তাই এ খাতের কর্তা-ব্যক্তিদের সঠিক নজরদারির মাধ্যমে সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে এ টাকা ব্যয় করার পরামর্শ।

তারা বলছেন, গতবারের বরাদ্দের পুরো অর্থ খরচ করতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যে কারণে সংশোধিত বাজেটে পরিমাণ কমিয়ে ২৯ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা করা হয়, যা বিদায়ী অর্থবছরের মোট সংশোধিত বাজেটের ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং জিডিপির শূন্য দশমিক ৫৮ শতাংশে দাঁড়ায়।

এবারের বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পুরো স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, তার মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জন্য ৩০ হাজার ১২৫ কোটি এবং পরিবারকল্যাণ বিভাগের জন্য ১১ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এই টাকার মধ্যে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ২১৮ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ২০ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ যায়যায়দিনকে বলেন, জরুরি স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় ২ হাজার কোটি টাকা, গবেষণায় ১০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। কিডনি ডায়ালাইসিস ফিল্টার ও ডেঙ্গুর কিটের ওপর রেয়াত দিয়েছে, এগুলো ইতিবাচক। আবার মেডিকেল যন্ত্রপাতির শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সব পক্ষের সহযোগিতা লাগবে। খরচের উপযুক্ত খাত, দুর্নীতি বা অপচয় বন্ধ করা এবং ব্যয়ের জন্য দক্ষতা বাড়ানোর মতো বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, গত ২০ বছর ধরে বাজেটের মোট বরাদ্দের ৫ শতাংশের কাছাকাছি থাকছে স্বাস্থ্য খাতে। এবারও এবই রকম বাজেট হয়েছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, স্বাস্থ্য বিভাগের সামর্থ্য না থাকায় সেটিও খরচ করা যায় না। ফলে কোথাও ব্যয় বাড়িয়ে, কোথাও কমিয়ে প্রতি বছর একই কাজ করা হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, ২০২৪-২৫ বাজেটে মূল বাজেটের ৯-১০ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। এই বরাদ্দ সঠিক ব্যবহার করে চিকিৎসা সেবায়, স্বাস্থ্য শিক্ষায় ও গবেষণা উন্নয়ন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে উপজেলায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্য প্রদান করা সম্ভব হবে। দেশের অগ্রগতি উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে, স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বৃদ্ধির বিকল্প নাই। স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ না করলে স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত দুই দশকে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মোট জিডিপির ১ শতাংশের অনেক কম। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে মালদ্বীপে তাদের মূল বাজেটের ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ, ভারতে ১ দশমিক ১ শতাংশ কিন্তু বাংলাদেশে তা শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নে সরকার জিডিপি ২ শতাংশ বরাদ্দ রাখলে ভালো হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে