শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সমস্যাকে মেনে না নিয়ে অবাস্তব বাজেট :সিপিডি

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
শুক্রবার সিপিডি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। পাশে অন্য কর্মকর্তাদের দেখা যাচ্ছে -যাযাদি

আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফেরাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর যে লক্ষ্য নতুন অর্থবছরের বাজেটে নেওয়া হয়েছে, তা পূরণে বাস্তবসম্মত কোনো দিকনির্দেশনা অর্থমন্ত্রীর পরিকল্পনায় দেখছে না সিপিডি।

বেসরকারি এ গবেষণা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের ভাষায়, চাপে থাকা সামষ্টিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের পথ দেখাতে প্রস্তাবিত বাজেট 'ব্যর্থ হয়েছে'।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন।

'টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা' শিরোনামে এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি আগামী বছরের জুনের মধ্যে সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

দীর্ঘদিনের রেওয়াজ মেনে বাজেটের পরদিন শুক্রবার প্রতিক্রিয়া জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সিপিডি। আগে ব্র্যাক ইন সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলন হলেও এবারের আয়োজন ছিল আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, 'সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি জায়গায় যন্ত্রণা আছে। সূচকগুলো অস্বস্তিতে রয়েছে। এমন অবস্থায় এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং তলানিতে যাওয়া রিজার্ভ উন্নয়নে।

'আগামী বাজেট বাস্তবায়নে যে লক্ষ্যমাত্রাগুলো নেওয়া হয়েছে, তা উচ্চাকাঙ্ক্ষী। বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই, বাস্তবতাসম্মত নয়। সমস্যাকে মেনে না নেওয়ায় বাস্তবতার গভীরে যাওয়া হয়নি। বাজেট বাস্তবায়নে লক্ষ্যগুলো দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা নেই।'

পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সংকট মোকাবিলায় বাজেটের লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল মূল্যস্ফীতির চাপ কমানো, রিজার্ভ বাড়ানো।

'আগামী ১২ মাসে কীভাবে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনা হবে তা আমাদের বোধগম্য নয়, এটা উচ্চাকাঙ্ক্ষী।'

দুই অংক ছুঁইছুঁই মূল্যস্ফীতির মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে বাজেটে যেসব পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, তা 'যথেষ্ট নয়' বলেও মনে করছে সিপিডি।

গত কয়েক বছর যে বাজেটের আকার ছিল জিডিপির ১৫ শতাংশের ওপর, সেখানে এবার তা ১৪ শতাংশের ঘরে রেখেছেন অর্থমন্ত্রী। প্রায় এক দশক ধরে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ থেকে শতাংশের ওপর থাকছিল, এবার তা ৪.৬ শতাংশের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা সাজিয়েছেন মাহমুদ আলী।

বাজেটের আকার খুব বেশি না বাড়ানোকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, 'এবারের সংযত বাজেট ইতিবাচক।'

তবে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনাপ্রশ্নে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ ফিরিয়ে আনার সমালোচনা করেছেন ফাহমিদা খাতুন।

তিনি বলেন, আয়করের সর্বোচ্চ হার যেখানে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হলো, সেখানে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এটা নৈতিক ও অর্থনৈতিক কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

'যারা নিয়মিত কর দেন, এর মধ্য দিয়ে তাদের তিরস্কৃত করা হচ্ছে।'

অর্থমন্ত্রী যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তাতে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। তাতে আয় ও ব্যয়ের সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা,

বরাবরের মতোই বাজেট ঘাটতি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে নির্ভর করতে হবে অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি ঋণের ওপর।

অভ্যন্তরীণ খাতের মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে রেকর্ড ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে, যা বাজেটের ১৭ শতাংশের বেশি।

ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এসফবিসিসিআইর মতো সিপিডিও অর্থমন্ত্রীর এ পরিকল্পনা নিয়ে আপত্তি তুলেছে।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ঋণের প্রতি নির্ভরতার কারণে বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় ঋণ পাবে কিনা, তা 'চিন্তার বিষয়'।

তার ভাষায়, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জিং সময় গতানুগতিক বাজেট কোনো ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। নতুন বাজেট সিপিডির কাছে অতীতের বাজেটের মতোই মনে হয়েছে। যে সংকট দেখা দিয়েছে অর্থনীতিতে, তার সমাধানে এ বাজেট 'যথোপযুক্ত পদক্ষেপ বা দিকনির্দেশনা দিতে পারেনি।'

অন্যদের মধ্যে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে