রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১
বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

বছর শেষে কমবে মূল্যস্ফীতি

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, কালো টাকা যারা তৈরি করেন তারা ইকোনমিকে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করেন না। কালো টাকা দেশের বাইরে চলে যায়। কালো টাকাটা ভোগ বিলাসের জন্য তৈরি করা হয়। এ কারণে যারা রিটার্নে যেসব সম্পদ দেখাতে পারেননি, সেই সম্পদ দেখানোর জন্য এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৮ জুন ২০২৪, ০০:০০
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অর্থ মন্ত্রণালয় আয়োজিত বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। পাশে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম -ছবি সংগ্রহ

আগামী ছয় মাসের মধ্যে অর্থাৎ ডিসেম্বর নাগাদ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেছেন, 'চলতি বছরের শেষের দিকে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।'

শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অর্থ মন্ত্রণালয় আয়োজিত বাজেটোত্তর সংবাদ তিনি এ কথা বলেন। কি পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি কমতে পারে সংবাদ সম্মেলনে এর একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশাধিকার বন্ধ রাখায় গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বয়কটের ঘোষণা দেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি রেফায়েত উলস্নাহ মীরধা। ফলে পুরো সংবাদ সম্মেলনে মঞ্চে উপবিষ্ট থাকলেও কোনো কথা বলেননি গভর্নর।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করছেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার।

অর্থমন্ত্রী বলেন, 'আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন বাজেটের আকার কমিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে করে মূল্যস্ফীতির ওপর কোনো চাপ না পড়ে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আর গৃহীত পদক্ষেপের কারণে চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'মূল্যস্ফীতি

নিয়ন্ত্রণ যেহেতু আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, সেহেতু সংকোচনমূলক নীতিকৌশল আরও কিছুদিন চলমান থাকবে। তবে এর ফলে প্রবৃদ্ধি খুব বেশি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। কৃষি, শিল্প এবং সেবাখাত যেন তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সংকোচনমূলক নীতি অনুসরণ সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে।'

অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এর আওতায় আনা হয়েছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যচ্ছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।

এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। যদিও গত ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

চড়া মূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে এনে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৩ শতাংশ পয়েন্ট কমানোর যে লক্ষ্য অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় রেখেছেন, এর পক্ষে ব্যাখ্যা দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।

সংবাদ সম্মেলনে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, বাজেটে নতুন বছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। ধান, চাল, গম, ছোলা, মসুর ডালসহ অন্যান্য কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে বিদ্যমান ২ শতাংশ কর কমিয়ে ১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষাণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং করি। বাজার মনিটরিং একটা চলমান প্রক্রিয়া। বাজেটের পর বাজার অস্থির হয়ে গেছে এমন কোনো তথ্য নেই।

জিনিসপত্রের দাম কমাতে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, 'আমরা এখন টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে ভর্তুকিতে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। আগামীতে এর আকার বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব তৈরি করছি। টিসিবির স্থায়ী ডিলারদের দোকান করার চেষ্টা করছি। ভর্তুকি মূল্যের সঙ্গে সঙ্গে ন্যায্যমূল্যের কিছু পণ্য সরবরাহ করার চেষ্টাও করছি।

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে বলতে গেলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধির মতো কোনো ঘোষণা এ বাজেটে নেই। উল্টো কমার মতো ঘোষণা আছে। কয়েকটি পণ্যের উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। গুঁড়ো দুধের আমদানিতে কর যৌক্তিক করা হয়েছে। সময়ে সময়ে পণ্যের কর কমিয়ে আনা হবে।

১০টি পণ্যের ওপর আরোপিত নূ্যনতম ভ্যালু প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১০টি পণ্যের শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। ১৯টি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১৭২টি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। অন্যান্য শুল্ক যেগুলো আছে, সেগুলো এনবিআর যথাযথ সময়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসবে বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

মূল্যস্ফীতির জন্য ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বহির্বিশ্বে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিকে 'কারণ' হিসেবে সামনে এনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের বাজেটেও বলা হয়েছে। আমরাও বলছি যে, মূল্যস্ফীতি, বিশেষ করে ফুড ইনফ্লেশনটা তুলনামূলক বেশি।'

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত চালের দাম বাড়ল কেন? এমন প্রশ্নও পাওয়া যায়। যে চাল বিক্রি করে সে কিন্তু চড়া দামের সয়াবিন তেল কেনার চিন্তা করে। তেলের দাম যখন বেড়ে যায়, চাল বিক্রেতা তখন চিন্তা করে তার চালটা সেভাবেই বিক্রি করতে হবে। এভাবে আন্তর্জাতিক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি দেশীয় পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেয়।

এ দিকে কালো টাকা নিয়ে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, অডিটজনিত কারণে কিছু ব্যবসায়ী তাদের বৈধ সম্পদ রিটার্ন দাখিলের সময় দেখাতে পারছেন না, সে কারণে কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

কালো টাকা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ব্যবসায়ী মহলের পক্ষ থেকে একটা দাবি এসেছিল, সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে একটা দাবি এসেছিল, অডিটজনিত কারণে কিছু ব্যবসায়ী তাদের বৈধ সম্পদ দেখাতে পারছেন না, সে কারণে আমরা এই সুযোগটা দিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, কালো টাকা যারা তৈরি করেন তারা ইকোনমিকে ব্যবহার করার জন্য তৈরি করেন না। কালো টাকা দেশের বাইরে চলে যায়। কালো টাকাটা ভোগ বিলাসের জন্য তৈরি করা হয়। জমি ক্রয়-বিক্রয় করার সময় কিছু টাকা কালো হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে যারা রিটার্নে যেসব সম্পদ দেখাতে পারেননি, সেই সম্পদ দেখানোর জন্য এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যা অনেক দেশেও দেওয়া হয়ে থাকে।

এর আগে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। বিশাল অঙ্কের এ বাজেটের ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। করবহির্ভূত ও অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। আর বৈদেশিক অনুদান থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে। যদিও গত ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ঠিক করেছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে