মালয়েশিয়া যেতে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও ১৬ হাজার ৯৭০ জন কর্মী ৩১ মে'র মধ্যে দেশটিতে প্রবেশ করতে পারেননি। এসব কর্মীকে প্রবেশের সুযোগ দিতে মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিল প্রবাসী কল্যাণ
ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। তবে মালয়েশিয়া সরকার এই সময় আর বাড়াবে না বলে মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল।
অন্যদিকে ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম জানিয়েছেন, তার সরকার সময়সীমা মেনেই কাজ করছে। এই সময়সীমা শুধু বাংলাদেশ নয়, কর্মী গ্রহণ করা আরও ১৪টি দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বুধবার দুপুরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এসব কথা জানান তিনি।
হাইকমিশনার জানান, তার সরকার নির্ধারিত সময়সীমা মেনে চলছে। আমরা সময়সীমা মেনে চলেছি; কারণ আমাদের ১৫টি উৎস দেশ রয়েছে যেখান থেকে কর্মীরা মালয়েশিয়া যায় এবং আমরা এই সময়সীমার প্রয়োগে অভিন্নতা নিশ্চিত করতে চাই। এটি বাংলাদেশের জন্য ভিন্ন নয়, তবে ১৫টি উৎস দেশের সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
তিনি বলেন, প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আমাদের সময়সীমা পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছেন এবং আমি কুয়ালালামপুরে বার্তাটি পৌঁছে দেব।
নির্ধারিত সময়ের পরও গত ২ জুন মালয়েশিয়া সরকার ই-ভিসা দিয়েছে বলে বায়রার এমন অভিযোগের বিষয়ে হাইকমিশনার বলেন, 'প্রমাণ ছাড়া আমরা কোনো অভিযোগ আমলে নিতে পারি না। এখন পর্যন্ত যারা ভিসা ইসু্য করেন, তারাসহ পুরো মালয়েশিয়ার সরকার কঠোরভাবে সময়সীমা মেনে চলছে।'
মালয়েশিয়ায় অনেক শ্রমিক চাকরি পাচ্ছেন না; এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, 'এটা আমাদের সরকার দেখছে। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।'
বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা এই প্রক্রিয়ার ফাঁক-ফোকরগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং শ্রমিকদের উন্নতির প্রয়োজনীয়তা পুনর্মূল্যায়ন করেছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, তারা মালয়েশিয়া সরকারকে সময়সীমা পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছেন এবং এ বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শ্রমিকরা কেন মালয়েশিয়া যেতে পারেননি তা তদন্ত কমিটি নির্ধারণ করবে। যাদের বিএমইটি কার্ড বা ই-ভিসা আছে, তারা যাতে ক্ষতিপূরণ পান, তার ব্যবস্থা করা হবে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, অনুমোদিত ভিসাধারী প্রায় ১৭ হাজার শ্রমিককে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আবেদন করা সত্ত্বেও বাংলাদেশসহ বিদেশি শ্রমিকদের ৩১ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর সময়সীমা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল মালয়েশিয়ার সাংবাদিকদের জানান, ৩১ মে সময়সীমা নির্ধারণের আগে সব বিষয় বিবেচনা করা হয়েছিল। সুতরাং আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে সময় বাড়ানো হবে কিনা, উত্তর হবে না।
ভিসাপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য অনুরোধ করেছি: প্রতিমন্ত্রী
এদিকে বুধবার মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মোহাম্মদ হাশিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ভিসা প্রাপ্তির পরও মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা কর্মীদের যাওয়ার অনুমতি দিতে দেশটিকে অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, মালয়েশিয়া এ আবেদন বিবেচনা করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালে মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের যে চুক্তি হয়েছিল, সে চুক্তির শেষ তারিখ ছিল ৩১ মে। সেটা পরিপূর্ণ করতে মালয়েশিয়া সরকার ও আমাদের সরকারের উভয়ের চেষ্টা ছিল। আমাদের প্রায় ১৭ হাজার মানুষের ভিসা ইসু্য হয়েছে। আমরা মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারের মাধ্যমে তাদের সরকারের কাছে আবেদন করেছি যে, অন্ততপক্ষে যাদের ভিসা হয়েছে তাদের মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হোক। আমরা আশা করছি, আমাদের আবেদন তারা রক্ষা করার চেষ্টা করবে।
নতুন করে তারিখ আর বাড়ানোর বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতীম দেশ। বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। আমার বিশ্বাস, মালয়েশিয়া এ আবেদন বিবেচনা করবে।