উপজেলা নির্বাচন
ভোটার খরা কাটল না শেষ ধাপেও
শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩৪.৩৩ শতাংশ :সিইসি
প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ভোটার খরার মধ্য দিয়েই শেষ হলো এবারের উপজেলা নির্বাচন। আগের তিনটি ধাপের মতো বুধবার অনুষ্ঠিত চতুর্থ বা শেষ ধাপেও ভোটারের উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার দুই থেকে তিন ঘণ্টা কোনো কোনো কেন্দ্রে একজন ভোটারও আসেননি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি কিছুটা বাড়ে। এ ধাপে নির্বাচনী এলাকার কোথাও বড় ধরনের কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। ভোট শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, এই ধাপে ২৬ জেলার ৬০ উপজেলায় ৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর আগের তিন ধাপে যথাক্রমে ৩৬, ৩৮ ও ৩৬ শতাংশ ভোট পড়ে।
বুধবার অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ৬০ উপজেলায় একজন চেয়ারম্যান, তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৫১, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬৫ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০৫ জনসহ মোট ৭২১ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
এদিকে, বুধবার ভোটগ্রহণ শেষে
বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, এই ধাপে ২৬ জেলার ৬০ উপজেলায় ৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।
সিইসি জানান, ভোট চলাকালে নানা অনিয়মের দায়ে ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া, অনিয়মের অভিযোগে ভৈরবের একটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়েছে। আর সহিংসতায় ৫ জন আহত হয়েছেন।
এর আগে দুপুরে নির্বাচন কমিশন সচিব শফিউল আজিম সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রথম চার ঘণ্টায় ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে। তিনি বলেন, ২৬ জেলায় ৬০ উপজেলায় ভোটগ্রহণ চলছে। সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে।
প্রসঙ্গত, উপজেলা নির্বাচন আয়োজনে এবার চার ধাপে ভোট গ্রহণের জন্য তফসিল দেয় ইসি। তবে ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে স্থগিত ২০টি উপজেলায় আগামী ৯ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
সিলেট অফিস জানায়, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় বন্যা ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণ চলেছে। সকাল থেকে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম ছিল। দুপুরে কানাইঘাট উপজেলার ১নং লক্ষ্ণীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের মুলাগুল উচ্চ বিদ্যালয়ে বিদু্যৎহীন ভোট কেন্দ্রের বুথে মোমবাতি জ্বালিয়ে ভোট দিতে দেখা যায়।
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর জানান, সদর উপজেলা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালীন এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকের হামলায় অপর এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। সকাল ১০টার দিকে শহরের জিলা স্কুল ভোটকেন্দ্রের পাশে এ ঘটনা ঘটে। আহত আব্দুস সাত্তার (৪৫) চাচড়া ডালমিল এলাকার বাসিন্দা। তিনি সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোটর সাইকেল প্রতীকের তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুর সমর্থক।
অন্যদিকে, নওগাঁ সদর, মান্দা ও মহাদেবপুর উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকেই কেন্দ্রগুলো ছিল প্রায় ভোটার শূন্য। শহরের সরিষাহাটের মোড়ে সরকারি বসির উদ্দিন মেমোরিয়াল কো-অপারেটিভ (বিএমসি) মহিলা কলেজ কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৯টায় গেলে দেখা যায়, ওই কেন্দ্রের নারী ভোটারদের ১নং ভোটকক্ষের ব্যালট বাক্সটি তখনও শূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দীর্ঘ সময়েও ভোটার না আসায় কক্ষে বসে অলস সময় পার করছেন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ পোলিং এজেন্টরা।
মিডিয়া সেলে পাঠানো এক বার্তায় জেলা প্রশাসক বলেন, সকাল ১০টা পর্যন্ত সময়ে নওগাঁর সদর উপজেলায় ২ দশমিক ৫২ শতাংশ, মহাদেবপুর উপজেলায় ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং মান্দা উপজেলায় ৪ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক রয়েছে।
এক ঘণ্টায় এক ভোট
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার দাঁদপুর ইউনিয়নের রাঙ্গামুলারকান্দি হাজী আব্দুলস্নাহ একাডেমিতে একটি বুথে এক ঘণ্টায় পড়ে মাত্র একটি ভোট। আরেকটি বুথে একই সময়ে দুটি ভোট পড়ে। পাশাপাশি ওই কেন্দ্রসহ তিনটি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। এছাড়া রংপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, চাঁদপুরসহ অধিকাংশ জেলায় ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম।
ভৈরবের একটি কেন্দ্র ভোটগ্রহণ স্থগিত
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, দু'পক্ষের হট্টগোলের কারণে উপজেলার মৌটুপী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
জানা যায়, বুধবার বেলা ২টার পর দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সেন্টু (ঘোড়া মার্কা) ও আবুল মনসুরের (কাপ-পিরিচ) সমর্থকের মধ্যে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। এ সময় কেন্দ্র থেকে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মো. এনামুল হক সোহান সাময়িকভাবে কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যালট বাক্সের তালা ভাঙা থাকায় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ পুরোপুরি স্থগিত ঘোষণা করেন।
প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এনামুল হক সোহান বলেন, 'দু'পক্ষের হট্টগোলের এক পর্যায়ে একটি পক্ষ ভোট কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।'
রাজশাহীতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও লাঠিচার্জ
জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলার বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চারঘাট উপজেলার মোক্তারপুর ও চারঘাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতির এবং পরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় চারঘাট-বাঘা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মোটর সাইকেল প্রতীকের সমর্থক রায়হানুল হক প্রতিপক্ষের হাতে লাঞ্ছিত হন। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
বাঘার হযরত শাহ আব্দুল হামিদ দানিশমন্দ সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে ব্যালট পেপার বাইরে নেওয়ার সময় ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল মোকাদ্দেসের (টিয়া পাখি) ছেলে চয়নসহ তিনজনকে আটক করে প্রশাসন।
চারজনকে জরিমানা
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় জাল ভোট দেওয়ার দায়ে ৪ জনকে জরিমানা করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বাহারচড়া কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, 'বাহারছড়া ইউনিয়নে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও জাল ভোট দেওয়ার দায়ে মো. বুলবুলকে (৪১) ৫০ হাজার টাকা, মো. রিফাত (৩০) কে ২০ হাজার, মো. আক্কাস উদ্দিনকে (২৮) ১০ হাজার এবং মো. মেজবাহ উদ্দিনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।'
উজিরপুরে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা প্রত্যাহার
বরিশালের উজিরপুরে অনিয়মের অভিযোগে হাবিবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, প্রত্যাহার হওয়া প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ সোনালী ব্যাংকের গুঠিয়া শাখা ব্যবস্থাপক। ভোট কক্ষের বুথের পর্দা ছোট করে দেওয়ায় তাকে প্রত্যাহার করে অপর একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কেন্দ্রে মোবাইল নেওয়ায় এজেন্টের কারাদন্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে ভোটকেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করায় দুই পোলিং এজেন্টকে কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া অন্য কেন্দ্রের ভোটার হয়ে আরেক কেন্দ্রে অনুপ্রবেশের দায়ে আরও এক ব্যক্তিকে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। উপজেলার ছতুরপুর ও আউলিয়া বাজার এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৪৮ নম্বর ছতরপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তা বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখায় পোলিং এজেন্ট হারুন মিয়া (২৪) ও শাহানা বেগমকে (৫২) হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে দুজনকে দন্ডবিধির-১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় তিনদিন করে বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।
এছাড়া ১০ নম্বর পাহাড়পুর ইউনিয়নের ৪০ নম্বর আউলিয়ানগর মোহাম্মদীয়া আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে মো. কাউসার মিয়া নামে এক ব্যক্তি এ কেন্দ্রের ভোটার না হওয়া সত্ত্বেও অবৈধভাবে প্রবেশ করেন। এ অপরাধে তাকে পাঁচদিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়।