চূড়ান্ত ফল : বিজেপি ২৪০, কংগ্রেস ৯৯
মোদির নেতৃত্বে সরকার গঠনে মতৈক্য
প্রকাশ | ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরদিন বুধবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোটের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেছেন। নয়াদিলিস্নতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে ওই বৈঠকে মোদির নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হয়েছেন নেতারা। নতুন সরকার গঠনের জন্য তারা প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন শিগগিরই।
নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে বৈঠকে তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সভাপতি এন চন্দ্রবাবু নাইডু, জনতা দলের (ইউনাইটেড)
নেতা ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, শিবসেনা নেতা ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, এলজেপি (রাম বিলাস) নেতা চিরাগ পাসোয়ানসহ বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
টিডিপি, জেডি-ইউ, শিন্ডে নেতৃত্বাধীন শিবসেনা ও এলজেপি (রাম বিলাস) যথাক্রমে ১৬, ১২, ৭ ও ৫টি আসনে জয় লাভ করেছে। বিজেপির নেতৃত্বে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এই দলগুলোর ভূমিকা গুরুত্ব হয়ে দেখা দিয়েছে।
বৈঠক শেষে জেডি-ইউর এমপি সঞ্জয় কুমার ঝা সাংবাদিকদের বলেন, 'বৈঠকে সবাই তাদের মতামত তুলে ধরেছেন এবং এনডিএর পক্ষে তৃতীয়বারের মতো রায় দেওয়ায় দেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। দ্রম্নতই নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সরকার গঠন হবে এবং খুব শিগগির এমপিদের নিয়ে একটি বৈঠক করা হবে।'
একনাথ শিন্ডে বলেছেন, সরকার গঠনে নরেন্দ্র মোদিকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি দিলিস্নতে এসেছেন। দিলিস্ন বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মোদিজি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন। মোদিজির নেতৃত্বে এনডিএ সরকার গঠন করবে।
কবে নতুন সরকারের শপথ গ্রহণ হতে পারে, সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এই জোটের অনেক সদস্য মনে করছেন, চলতি সপ্তাহের শেষেই শপথ গ্রহণ হয়ে যেতে পারে।
নতুন সরকার গঠন এবং তা টিকিয়ে রাখার জন্য টিডিপি ও জেডি-ইউর সমর্থন জরুরি হওয়ার কারণে এই দুই দলের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয় চাইতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চূড়ান্ত ফল :বিজেপি ২৪০, কংগ্রেস ৯৯
এদিকে, ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ৫৪৩টি আসনের সবগুলোর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, ২৪০ আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। অন্য দলগুলোর মধ্যে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ৩৭টি, তৃণমূল কংগ্রেস ২৯টি, ডিএমকে ২২টি, তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ১৬টি, জনতা দল (জেডি-ইউ) ১২টি, শিবসেনা (উদ্ভব) নয়টি, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপিএসপি) আটটি ও শিবসেনা (এসএইচএস) সাতটি আসনে জয় পেয়েছে।
পাঁচটি আসন পেয়েছে লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিলাস)। চারটি করে আসনে জয় পেয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট)- সিপিআই (এম), ওয়াইএসআরসিপি ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)।
আম আদমি পার্টি, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) ও ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ (আইইউএমএল) তিনটি করে আসন পেয়েছে।
কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআই), কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) (লিবারেশন)- সিপিআই (এমএল) (এল), জনতা দল- জেডি (এস), জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স (জেকেএন), রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি), জনসেনা পার্টি (জেএনপি) ও ভিসিকে দুটি করে আসনে জয় পেয়েছে।
এছাড়া বেশ কয়েকটি দল একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সাতজন।
এর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এককভাবে ৩০৩ আসনে জয় পেয়েছিল। সেবার বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোট এনডিএ ৩৫২ আসনে জয় পায়। এবার বিজেপি সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পায়নি। সে ক্ষেত্রে এনডিএ জোট শরিকদের ওপর নির্ভর করতে হবে বিজেপিকে।
গত নির্বাচনে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছিল ৫২টি আসন। আর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ইউপিএ জোট পেয়েছিল ৯৪ আসন।
লোকসভার মোট ৫৪৩ আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় ২৭২ আসন। সে ক্ষেত্রে বিজেপি তার জোটসঙ্গীদের নিয়ে সরকার গঠন করতে পারবে। তবে জোটসঙ্গীদের মধ্যে বেশি আসন পাওয়া দলগুলো বিরোধী শিবিরে গেলে চিত্র ভিন্ন হতে পারে।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকদের প্রধান অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি ১৬টি এবং বিহারে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জনতা দল- ইউনাইটেড (জেডি-ইউ) ১২টি আসনে জয় পেয়েছে। এই দুই দল ছাড়া আরও একাধিক এনডিএ শরিকের ওপর নির্ভর করতে হবে বিজেপিকে। এদের মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্রের শিবসেনার সিন্ধে গোষ্ঠী, বিহারে লোক জনশক্তি পার্টি এবং উত্তর প্রদেশের রাষ্ট্রীয় লোক দল।