শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১

ভারতে মোদি ম্যাজিকে ধস

সরকার গঠনে দৌড়ঝাঁপ বিজেপির ভাগ্য জোট শরিকদের হাতে কংগ্রেসের চমক
যাযাদি ডেস্ক
  ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০
ভারতে মোদি ম্যাজিকে ধস

সদ্য সমাপ্ত ভারতের লোকসভা নির্বাচনে মোদি ম্যাজিকে ধস নেমেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবারের নির্বাচনে মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত এককভাবে এগিয়ে ছিল ২৪১ আসনে। আর বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট 'ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স' (এনডিএ) এগিয়ে ২৯৬ আসনে। ওদিকে, ইন্ডিয়া জোট এগিয়ে ২২৮ আসনে। কংগ্রেস এককভাবে এগিয়ে ১০০ আসনে।

কিন্তু ভোটের চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনী ফলের বিপরীতে এবার মোদির দল বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে পারবে না। ফলে এবার আর সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না দলটি। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য মোদিকে নির্ভর করতে হবে জোট এনডিএর দুই শরিক, চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জেডিইউর ওপর।

নীতীশের নেতৃত্বাধীন জনতা দল (ইউনাইটেড) ১৪টি আসন এবং নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) ১৬ আসন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অতীতে এ দুই দলের নেতারই একাধিকবার এনডিএ ত্যাগ এবং ফিরে আসার ইতিহাস রয়েছে। এবার তারা কী করেন সেদিকেই নজর সবার।

সমর্থন ছাড়া বিজেপির পক্ষে কেন্দ্রে সরকার গড়া সম্ভব নয়, সেটা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। আর এতেই দুই নেতার রাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়ে গেছে। আর তারা সত্যিই শেষ পর্যন্ত বিজেপি-কে সমর্থন করেন, নাকি আবারও ভোল পাল্টান তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে।

বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) বলছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং টিডিপির চন্দ্রবাবু নাইডু এবার মোদির এনডিএ জোটকে বাদ দিয়ে বিরোধীপক্ষের সঙ্গে যোগ দিতে পারে। এবারের লোকসভা নির্বাচনেই জেডিইউ ও টিডিপি দুটি দলই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের অংশ হিসেবে ভোটে লড়লেও নির্বাচনের ফল বেরোনোর পর এ দুই দল যে বিজেপিকে সমর্থন করতে বাধ্য থাকবে তা নয়। কিন্তু সরকার গড়ার চাবিকাঠি যে চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমারের হাতেই থাকছে সেটি সন্দেহাতীত।

ওদিকে, ভারতের ইতিহাসে মোদিই যদিও আবার প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন, যিনি পর পর তিনবার ক্ষমতায় আসছেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে জওহরলাল নেহেরুর মতো পরপর তিনবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতা দখলের রেকর্ড আর গড়তে পারছেন না মোদি।

ভোটের ফলে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে এনডিএ জোট খুব একটা স্বস্তিতে নেই। এ পরিস্থিতিতে ইন্ডিয়া জোট শরিক বাড়ানোর চেষ্টা নিতে চাইছে। আর জোট ধরে রেখে সরকার গড়তে এরই মধ্যে মরিয়া

হয়ে উঠেছে বিজেপি শিবির। তাই আজ শরিক দলগুলোর সঙ্গে এনডিএ জোট বৈঠকে বসতে চলেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। ইতোমধ্যে টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু এবং বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডি (ইউ) নেতা নীতীশ কুমারের সঙ্গে খোদ অমিত শাহ কথা বলেছেন।

একদিকে নির্বাচনের ফল ঘোষিত হচ্ছে আর অন্যদিকে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা নিজের বাসভবনে মঙ্গলবার দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। অমিত শাহ, রাজনাথ সিংও সেই বৈঠকে যোগ দেন। সবমিলিয়ে, এখন থেকেই ঘর গোছাতে শুরু করে দিয়েছে বিজেপি।

বসে নেই ইন্ডিয়া জোটও। ইন্ডিয়া জোট ২০০-র বেশি আসনে এগোনোর পর থেকেই ঘর গোছাতে শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস শিবির। এই জোট গড়ার শুরুতে নীতীশ কুমার প্রধান ভূমিকা নিলেও পরবর্তীতে দলবদল করে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তবে সেকথা ভুলে নীতীশ কুমারের সঙ্গে কথা বলেছে কংগ্রেস। তাছাড়া জোট শরিক না হলেও সরকার গঠনে বড় ফ্যাক্টর হতে চলা চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গেও কথা বলেছে কংগ্রেস।

এদিকে, এই লোকসভা নির্বাচনে সংসদে বিরোধী দলের মর্যাদা ফিরে পেতে পারে কংগ্রেস। বিরোধী দলনেতার পদের জন্য লোকসভায় ৫৫টি আসনে জেতা প্রয়োজন। এবার ভোটগণনার প্রবণতা বলছে, 'ইন্ডিয়া'র সব সহযোগী দল মিলে দুইশোর গন্ডি টপকাতে চলেছে। ফলে লোকসভার অধিবেশনেও এবার বিরোধীদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মোদিকে।

মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত মোট ২৯৮টি আসনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৮টিতে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। ৫৮টি আসনে জিতেছে কংগ্রেস।

২৩টি আসনে জয় পেয়েছে সমাজবাদী পার্টি (এসপি)। ১৪টি আসন পেয়েছে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস। পাঁচটি আসনে জয় পেয়েছে দ্রাভিদা মুন্নেত্র কাঝাগাম (ডিএমকে)। জনতা দল পেয়েছে চারটি আসন। তিনটি করে আসন পেয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সিপিআইএম) ও আম আদমি পার্টি। দুটি করে আসনে জয় পেয়েছে জনতা দল (জেডি-এস), তেলেগু দেশাম, শিব সেনা (এসএইচএসইউবিটি), শিব সেনা (এসএইচএস) ও জনতা দল (সেকুলার)।

এছাড়া একটি করে আসন পেয়েছে রাষ্ট্রীয় লোক দল, জম্মু এবং কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স (জেকেএন), হিন্দুস্তানি আওয়াম মোর্চা (এইচএএমএস), রেভিউলেশনারী সোশালিস্ট পার্টি (আরএসপি), ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি), ভয়েজ অফ দ্য পিপলস পার্টি, জোরাম পিপলস মুভমেন্ট, শিরোমনি আকালি দল, রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টি, ভারত অধিবাসী পার্টি, সিকিম ক্রান্তি মোর্চা ও আজাদ সমাজ পার্টি।

এবারের নির্বাচনের পর বুথ ফেরত জরিপে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সাড়ে তিনশ' কিংবা তারও বেশি আসনে জয়ী হচ্ছে এমন আভাস মিললেও মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে জোটের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সে অনুযায়ী চমক দেখিয়েছে কংগ্রেস। বিশ্লেষকরা বলছেন, এগিয়ে থাকা আসনে বিজেপি জয় পেলেও সরকার গঠনের জন্য দলটিকে জোট গড়তে হবে। তবে সব আসনের চূড়ান্ত ফল পেতে আজ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিজেপি সরকার গঠন করলে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর মতো টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে