আজকের যায়যায়দিন

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষিত হবে আজ। শনিবার শেষ ধাপের নির্বাচনের পর থেকেই 'বুথ ফেরত' জরিপ আসতে শুরু করে। এই জরিপ ইঙ্গিত দিচ্ছে তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরতে চলেছেন ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর এ আভাসেই বিজেপি রাজধানী দিলিস্নসহ অন্যান্য স্থানে বিজয় উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ভোটের ফল প্রকাশের আগে দেশবাসীর কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে মোদি গোটা লোকসভা ভোটের প্রচারের অনুভূতিও প্রকাশ করেছেন। কন্যাকুমারীতে ধ্যান শেষে দিলিস্ন ফেরার পথে বিমানে বসে তিনি দেশবাসীকে এই চিঠি লেখেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বার্তায় তার সরকারের সাফল্যের কথা ফের তুলে ধরেছেন এবং আগামী দিনের ভারতের জন্য নতুন কী সংকল্প নেওয়ার কথা ভাবছেন, তাও জানিয়েছেন।

সাত দফার লোকসভা নির্বাচন ১৯ এপ্রিল শুরু হয়। শেষ হয় গত ১ জুন। আজ প্রকাশ হবে ভোটের ফল। ভোট শেষের দিন সন্ধ্যায় বিভিন্ন সংস্থা বুথ ফেরত জরিপের ফল ঘোষণা করে। একাধিক সংস্থা জানায় দিলিস্নর মসনদে ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়বে এনডিএ জোট। জয়ের হ্যাটট্রিক হতে পারে। ভোট গণনায় এই

পূর্বাভাস সত্য হলে, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহ্‌রুর পরপর তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন নরেন্দ্র মোদি। তাই ভোটের ফলের এমন পূর্বাভাসে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।

বর্তমানে ভারতজুড়ে বিজয়োৎসবের প্রস্তুতি তুঙ্গে। সোস্যাল মিডিয়ায় একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে হাজার হাজার লাডডু তৈরি হতে দেখা গেছে মুম্বাইয়ের এক মিষ্টির দোকানে। মোদি ক্ষমতায় এলেই মিষ্টিমুখ করানোর প্রস্তুতি চলছে সেখানে। এ ছাড়া মেগা ইভেন্টেরও প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। এনডিটিভি জানায়, মোদির শপথ অনুষ্ঠানের পর দিলিস্নর কয়েকটি স্থানে বিজেপি জয় উদযাপন করতে পারে। এর মধ্যে আছে রামলীলা ময়দান, লাল কেলস্না, ভারত মন্ডপ, যশোভূমি ও কর্তব্যপথ। দিলিস্নতে রোড শোও করতে পারে দলটি। সেই রোড শো করতে পারেন খোদ নরেন্দ্র মোদি। লোককল্যাণ মার্গ থেকে বিজেপি সদর দপ্তর পর্যন্ত হতে পারে এই রোডশো।

তথ্য অনুযায়ী নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি গত সপ্তাহেই রাষ্ট্রপতি ভবনে শুরু হয়েছিল। নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হবে রাষ্ট্রপতি ভবনে। নতুন সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে কাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে সেই তালিকায় তৈরি করে ফেলেছে মোদি শিবির। সব মিলিয়ে প্রস্তুতি দেখে বোঝা যাচ্ছে, এখন শুধু খাতা-কলমে ফল ঘোষণার অপেক্ষা করছে বিজেপি তথা এনডিএ জোট।

বিজয় উদযাপনের এই প্রস্তুতির মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তা লিখলেন। স্মরণ করিয়ে দিলেন ১০ বছরে দেশের মানুষের জন্য কী কী করেছে তার সরকার।

খোলা চিঠিতে মোদি লেখেন, গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব, '২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন, আজ আমাদের দেশে, গণতন্ত্রের উৎসব সমাপ্ত হচ্ছে। কন্যাকুমারীতে তিন দিনের আধ্যাত্মিক যাত্রার পর, আমি দিলিস্নর উদ্দেশে বিমানে চড়েছি। দিনভর কাশীসহ আরও কয়েকটি আসনে মানুষ উৎসাহের সঙ্গে ভোট দিয়েছে।'

'আমার মন অনেক অভিজ্ঞতা এবং আবেগ দিয়ে ভরা। আমি নিজের মধ্যে শক্তির সীমাহীন প্রবাহ অনুভব করি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন অমৃত কালের প্রথম। আমি কয়েক মাস আগে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত মিরাট থেকে প্রচার শুরু করেছিলাম। তারপর থেকে, আমি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার করেছি। এই নির্বাচনের চূড়ান্ত সমাবেশ আমাকে পাঞ্জাবের হোশিয়ারপুরে নিয়ে গিয়েছিল, মহান গুরুদের দেশ এবং সন্ত রবিদাস জি-এর সঙ্গে যুক্ত একটি ভূমি। সবশেষে আমি ভারত মায়ের পায়ের কাছে চলে আসি কন্যাকুমারীতে।'

চিঠিতে গরিব মানুষের ক্ষমতায়ন থেকে ডিজিট্যাল ইন্ডিয়ার কথা তুলে ধরে মোদি লেখেন, 'গরিবের ক্ষমতায়ন থেকে শুরু করে সমাজের প্রান্তিকতম মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার অগ্রাধিকার ও আমাদের প্রচেষ্টা আজ গোটা বিশ্বের কাছে একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে।'

আধু?নিক প্রযুক্তির কথা বলতে গিয়ে মোদি 'ডিজিটাল ইন্ডিয়া' অভিযানের কথা উলেস্নখ করে দাবি করেছেন, গোটা বিশ্ব প্রযুক্তির এই গণতন্ত্রীকরণকে খতিয়ে দেখছে।

মোদির মতে, উন্নত ভারত গড়াতে প্রয়োজন চার লক্ষ্য। গতি, মাপ, পরিসর ও মান বজায় রেখে দ্রম্নতগতিতে কাজ করা। উৎপাদনের পাশাপাশি উৎকর্ষেও জোর দেওয়া। দেশে পুরনো চিন্তাভাবনা ও কুসংস্কারের পরিমার্জন প্রয়োজন। পাশাপাশি সমাজকে নৈরাশ্যবাদীদের হাত থেকে মুক্ত করা প্রয়োজন। কারণ নেতিবাচকতা থেকে মুক্তিই সাফল্যের শিখরে পৌঁছনোর প্রথম ধাপ।