অর্থনীতি সমিতির প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব

প্রকাশ | ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ১১ লাখ ৯৫ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। তাদের এ বাজেটের আকার চলতি অর্থবছরে সরকারের বাজেটের চেয়ে ১ দশমিক ৫৭ গুণ বেশি। সোমবার রাজধানীর ইস্কাটনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যালয়ে এ বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আইনুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, সাবেক সভাপতি ড. আবুল বারকাত ও ড. জামাল উদ্দিন। এতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটে সরকারের রাজস্ব আয় থেকে আসবে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের ৯২ দশমিক ১৩ শতাংশের জোগান দেবে সরকারের রাজস্ব আয়। আর বাজেটের বাকি ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৭০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকার ঘাটতি অর্থায়ন জোগান দেবে সম্মিলিতভাবে বন্ড বাজার ৯৫ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রয় থেকে ঋণ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথ অংশীদারত্ব থেকে মোট ৫০ হাজার কোটি টাকা। আইনুল ইসলাম বলেন, বিকল্প বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণ নিটের কোনো ভূমিকা থাকবে না, যা চলতি অর্থবছরের সরকারি বাজেটে ঘাটতি পূরণে ৩৯ দশমিক ৫ শতাংশ। আমরা বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য বৈদেশিক ঋণের দ্বারস্ত হতে চাই না। তিনি বলেন, আগামী ১০ বছরে ৭টি লক্ষ্য অর্জনের জন্য এ বিকল্প বাজেট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- ৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত করা, বৈষম্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা, ধনীর সম্পদ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বণ্টন, উন্নয়নে দেশজ অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব, মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক ও আলোকিত করার সুযোগ তৈরি এবং শোভন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। এ ছাড়া বিকল্প বাজেট অর্থায়নে সরকারের আয়ের ২৭টি নতুন উৎস প্রস্তাব তুলে ধরে অর্থনীতি সমিতি। এগুলো হলো- কালো টাকা উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি, অর্থ পাচার উদ্ধার থেকে প্রাপ্তি, সম্পদ কর, অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর (অনলাইন ব্যবসা-বাণিজ্যসহ), বিলাসী দ্রব্য বা পণ্যের ওপর কর, সংসদ সদস্যসহ গাড়ির ওপর শুল্ক মওকুফ বাতিল থেকে কর, বিদেশি নাগরিকদের ওপর কর, সেবা থেকে প্রাপ্ত কর, বিমান পরিবহণ ও ভ্রমণ কর, পণ্যের ওপর রয়্যালটি ও সম্পদ থেকে আয়, প্রতিরক্ষা বাবদ প্রাপ্তি, রেলপথ, ডাক বিভাগ, সরকারের সম্পদ বিক্রয়, সেচবাবদ প্রাপ্তি, তার ও টেলিফোন বোর্ড, টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, ইন্সু্যরেন্স রেগুলেটরি কমিশন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিআইডাবিস্নউটিএ, পৌর হোল্ডিং কর, ডিজি হেলথ: বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমতি ও নবায়ন ফি, ডিজি ড্রাগস: ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি লাইসেন্স এবং নবায়ন ফিস, বিউটি পার্লার সেবালব্ধ কর, আবাসিক হোটেল/গেস্ট হাউস ক্যাপাসিটি কর এবং বিদেশি পরামর্শ ফি। দেশে কালো টাকার পরিমাণ ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা এদিকে, কালো টাকা প্রসঙ্গে অর্থনীতি সমিতি বলছে, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত ৫০ বছরে পুঞ্জীভূত কালো টাকা ও দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ৪৪ লাখ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে মাত্র দশমিক ৯৮ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করছি। সেখান আহরণ হবে ১০ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে, ওই সময় বিদেশে অর্থ পাচার হয়েছে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে ০.৪৯ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করা হয়েছে। যার পরিমাণ হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। আর রাজস্ব খাত থেকে আসবে ১০ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। নতুন দুই মন্ত্রণালয় ও ১৬ বিভাগের প্রস্তাব এদিকে, গণপরিবহণ মন্ত্রণালয় এবং গবেষণা, উদ্ভাবন, বিচ্ছুরণ ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয় নামে দুটি মন্ত্রণালয় করার প্রস্তাব দিয়েছে অর্থনীতি সমিতি। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন নতুন ১৬টি বিভাগ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন বিভাগগুলো হলো- সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রবীণ হিতৈষী বিভাগ, দরিদ্র-বিত্তহীন-নিম্নবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের জীবনকুশলতা উন্নয়ন বিভাগ, নারীর ক্ষমতায়ন বিভাগ, আদিবাসী মানুষের জীবনকুশলতা উন্নয়ন বিভাগ, শিশুবিকাশ বিভাগ, বিধিবদ্ধ রেশনিং বিভাগ, সার্বজনীন পেনশন বিভাগ, দরিদ্র-প্রান্তিক নিম্নবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের আবাসন বিভাগ। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা বিভাগ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন নারীর বিজ্ঞান শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি শিক্ষা বিভাগ, মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কার বিভাগ, হাওড়-বাঁওড়-বিল-চর-উপকূল উন্নয়ন বিভাগ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন অর্থনৈতিক কূটনীতি বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অণু ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিভাগের প্রস্তাব করে অর্থনীতি সমিতি।